সোমবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

আযানের দোওয়া প্রসঙ্গে /সংগ্রহ অনলাইন থেকে

আজানের শেষে, দোয়া নামে যে শব্দগুলো শুনতে পাই, তা বিবেকের কোষকে দংশন করে। মনে পড়ে একটি কবিতাংশ, যে অন্তঃকরণে নবীপ্রেম অর্জিত হয়নি, সে যতবড় মোমিনই হোক না কেন ঈমানের পূর্ণতা তার মধ্যে নেই। তাই এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, একবার এক লোকের ফাঁসির হুকুম হয়। কিন্তু বিচারক লোকটার বয়সের কথা বিবেচনা করে রায় বহাল রেখে লোকটাকে খালাস দেন। তখন লোকটা কৃতজ্ঞত হয়ে বিচারককে এই বলে দোয়া করেন ‘আল্লাহ যেন আপনাকে চৌকিদার বানায়’ কারণ লোকটার মনে হয়েছে চৌকিদারের অনেক ক্ষমতা এবং তার মর্যাদা অনেক বেশি। লোকটার দোয়া কতটা সঠিক তার বিচারের ভার আমি পাঠকদের ওপর ছেড়ে দিলাম। তবে প্রসঙ্গটা কেন বললাম এখন সে বিষয়ে আলোকপাত করি। বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলমান আজানের সঙ্গে পরিচিত। টিভি এবং রেডিওতে আজানের পর এ দোয়া শোনানো হয়।

‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং শাশ্বত নামাজের তুমিই প্রভু। হজরত মোহাম্মদ (সা.)কে দান করো বেহেশতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান এবং সুমহান মর্যাদা। আর তাঁকে অধিষ্ঠিত কর শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দিয়েছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম কর না।’

আমরা সবাই আজানের দোয়া প্রতিদিন বহুবার শুনলেও এ ব্যাপারে কখনও চিন্তা করিনি। আজানের দোয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলে সবাই তা উপলব্ধি করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

প্রথমত: আজানের দোয়ায় বলা হয়েছে ‘হজরত মোহাম্মদ (সা.)কে দান করো বেহেশতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান এবং সুমহান মর্যাদা’ ওই অংশটি সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে। যার বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় হজরত মোহাম্মদ (সা.)কে বেহেশতে স্থান দেয়া হয়নি অথবা দেয়া হলেও সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান নয় (নাউজুবিল্লাহ)। কিন্তু প্রতিটি মুসলমান মাত্র বিশ্বাস করেন এবং জানেন যে, হজরত মোহাম্মদ (সা.)কে সৃষ্টি না করলে এ মহাবিশ্বের কোনো কিছুই সৃষ্টি হতো না। কারণ এ মহাবিশ্বের সবকিছু হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর নূর থেকে তৈরি করা হয়েছে। আর আজ চৌদ্দশ’ বছর পর তাকে বেহেশতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানে স্থান দান করার কথা এবং মর্যাদা দান করার কথা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা আমার মতো জ্ঞানহীনের মাথায় ঢুকছে না, আর বিজ্ঞ ও জ্ঞানীদের কথা আমার জানা নেই।

আর এখানেই শেষ নয়, আরও আছে, আর তাকে অধিষ্ঠিত করো শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে। এখানে পুরোটাই ভবিষ্যৎ। মানে তাকে এখনও শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করা হয়নি। (নাউজুবিল্লাহ)।

যার নূরে সব জগৎ সৃষ্টি হয়েছে সেই মোহাম্মদ (সা.)কে যদি শ্রেষ্ঠতম প্রশংসতি স্থানে অধিষ্ঠিত করার জন্য স্রষ্টার কাছে দোয়া করা হয়, তা কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান মেনে নিতে পারবে না বলেই আমার ধারণা।

তৃতীয়ত: নিশ্চয়ই তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করি না, এ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয়, আল্লাহপাক হয়তো তার প্রতিশ্রুতি পাল্টাতে পারেন।

এ দোয়ার প্রচলন করেছে, সব ইমামদের উপেক্ষাকারী লামাযহাবি, ওহাবিরা। যারা সুকৌশলে নবী কারিম (সা.)-এর শান খাটো করে ইসলামের ভিত্তি মূলে আঘাত করেছে। বর্তমানেও যেহেতু এ দোয়া চালু আছে তাই অনেক ক্ষোভে ও দুঃখে বলতে বাধ্য হচ্ছি। বর্তমানে যারা ইসলামের কথা বেশি করে বলছেন এবং সমাজে ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করে যাচ্ছেন; তারা কেন এমন মিথ্যে কলঙ্কজনক বিষয়টি উপলব্ধি করছেন না। আশা করি এখন তারা এ ব্যাপারে নজর দেবেন এবং আজানের দোয়াকে শোধরে দেবেন। আমি আমার সামান্য জ্ঞানে নিন্মক্তভাবে দোয়াটি সংশোধনের প্রস্তাব রাখছি।

‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং শাশ্বত নামাজের তুমিই প্রভু। হজরত মোহাম্মদ (সা.)কে দান করেছ বেহেশতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানে এবং সুমহান মর্যাদা। আর তাকে অধিষ্ঠিত করেছ শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে। যার কথা তুমি পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছ। তুমি আমাদেরও তার নির্দেশিত পথে চলার শক্তি, সাহস দান কর। আমরা যেন সফলকাম হতে পারি।

আশা করি সব ধর্মপ্রাণ নবীপ্রেমিক মুসলমান আমার আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে একটু ভাববেন। আমার মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করবেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কর্মকর্তারা যেন আর মহাভুল করে বিচারপতিকে চৌকিদারের চেয়ে বড় মর্যাদা দিয়ে চির মর্যাদাবানকে খাটো না করেন। আল্লাহপাক সবাইকে সহজ ও সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন