শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

নফি এসবাত কি??

নফি এসবাত
==========
লা ইলাহা নফি সে হয়,
ইল্লাল্লাহু সে হয় দীন দয়াময়,
নফি এসবাত তাহারে কয়,
সেহিতো এবাদত উল্লা।। 
নফি এসবাত যে বুঝেনা, 
মিছে তাহার পড়া শোনা, 
লালন কয় ভেদ উপাসনা,
 না জেনে টসকে মরে। 
নফি মানে নাস্তি অর্থাৎ কিছু অস্বীকার করা যেমন না বা নাই ! এসবাত মানে আস্তি অর্থাৎ ঐটাকে প্রতিষ্ঠিত করা যেমন হা বা আছে।অর্থাৎ বলা হচ্ছে এই নফি দ্ধারা নিজের আমিত্বকে না বা নাই করা !এসবাত দ্বারা নিজের আমিত্বর জায়গায় অন্য কেউ আছে অর্থাৎ যিনি আছেন তাকে মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।লা ইলাহা নফি সে হয় ,এখানে বলা হচ্ছে যে,লা-মানে নেই,ইলাহা মানে মাবুদ,ইল্লাল্লাহু দ্বারা আল্লাহকে আপন আমিত্ব ছাড়া দেখা। এখানে লা ইলাহা নফির অংশ, ইল্লাল্লাহু ইসবাতের অংশ।অর্থাৎবলা হচ্ছে:তোমরা নফি এসবাতের জিকির করে দেখ সেখানে নেই অন্য কোন মাবুদ এক আল্লাহ ছাড়া।এইজন্য তরিকতের ফকিরগণ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর জিকিরকে নফি এসবাত বলেন।তাই গরীবে নেওযাজ হযরত খাজা বাবা বলেছেন:নফি দ্ধারা কি নাই তা’করতে হবে এবং এসবাত দ্বারা কি  আছে  তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে ইল্লাল্লাহুকে স্বরণ ও সংযোগের মাধ্যমে। সুতারং নফি এসবাত  না জেনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর জিকির করা শেরেকের সামিল।সেই জন্য বলা হচ্ছে:নফি এসবাত যে বুঝেনা,মিছে তাহার পড়া শোনা।সুফিগণ ঐজন্য বলে থাকেন যে কাবা ঘরে শরিয়ত আর হেরাগুহায় মারেফত।মোল্লাগণ কাবা ঘরের শরিয়ত নিয়ে মত্ত থাকেন আর আউলিয়াগণ হেরাগুহার মারেফতের মধ্যে ডুবে থাকেন।তাই বলা যায়  ইঁদুরের শক্তি দ্বারা কখনও বাঘের শক্তি মাপা যায় না। তদ্রূপ মোল্লা মুন্সি দিয়ে আহম্মদ ও মোহাম্মদের ভেদ রহস্য পাওয়া যায় না।যার অন্তর দৃষ্টিহীন জাহেরী জ্ঞান দিয়ে পরিপূর্ণ্ সে কি করে আল্লাহকে পাবে? তাই ফকির লালন কয় ভেদ উপাসনা,না জেনে টসকে মরে। 

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

একটি প্রার্থনা

“ ফরিয়াদ রছ তুঝবিন নেহি- মওলা মেরে ফরিয়াদ ছুন
সােলতানে দি শাহে জমি- মওলা মেরে ফরিয়াদ ছুন ॥

ভাবার্থঃ আপনি ছাড়া আমার ফরিয়াদ, (প্রার্থনা) শােনার আর কেউ নেই। অতএব, হে আমার মওলা আপনি আমার ফরিয়াদ, (প্রার্থনা) শুনুন। আপনি দ্বীন এবং দুনিয়ার বাদশাহ্, হে আমার মওলা আপনি আমার ফরিয়াদ (প্রার্থনা) শুনুন।

মকসুদেতন মতলুবে জাঁ - মাহকুমহেতু ছারা জাহা
মুশকিল কোশায়ে আজেজী - মওলা মেরে ফরিয়াদ ছুন

ভাবার্থঃ আপনি আমার সমস্ত আশা ভরসার প্রতীক, মকসুদ পূরণকারী। সারা জাহানে আপনার হুকুমত প্রতিষ্ঠিত। এই অক্ষম বান্দার আপনি সমস্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণকারী, হে আমার মওলা আপনি আমার ফরিয়াদ(প্রার্থনা) শুনুন ।

মাই হে উহ্ মজলুমে দাহার- আফছুর দা দিল শুরিদা ছর
মজরুহে দিল আন্দোহােগী- মওলা মেরে ফরিয়াদ ছুন ॥

ভাবার্থঃ আমি এই জগতে একজন মজলুম বান্দা যার মস্তক কর্তিত, বিদীর্ণ এবং দিল চূর্ণবিচূর্ণ। আমার অন্তর ক্ষতবিক্ষত, আমি অন্ধকারে নিমজ্জিত, হে
আমার মওলা আপনি আমার ফরিয়াদ (প্রার্থনা) শুনুন।

হার ছন্দ মাই দরদর ফেরা- বিন তেরে কুয়ি দোছরা
মেরে তরফ তকতা নেহি- মওলা মেরে ফরিয়াদ ছুন ॥

ভাবার্থঃ আমি সব জায়গায় সকল দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমার দিকে দয়াদৃষ্টি দেয়ার মত আপনি ছাড়া কাউকে আমি পাইনি,হে আমার মওলা  আপনি আমার ফরিয়াদ (প্রার্থনা) শুনুন।

তাকায় বয়িঁ আওয়ারগী- ছাহতা রহাে বেচারগী
আজ বাহারে গাউসুল আলামিন- মওলা মেরে ফরিয়াদ ছুন ।

ভাবার্থঃ এ গুণাহগার ভবঘুরে অপরাধী হয়ে, অসহায় হয়ে, বে-ছাহারা হয়ে, দিশেহারা হয়ে আপনার পানে চেয়ে রয়েছি। হে আমার মওলা  রহমতের সাগর গাউসুল আলামিন আপনি আমার ফরিয়াদ (প্রার্থনা) শুনুন।

তেরে বজলুল করিম বেনওয়া- বাছােজ দিল দরপর খাড়া
বাহারে শফিউল মুঝনেবিন- মওলা মেরে ফরিয়াদ ছুন ॥

ভাবার্থঃ আপনার অধীন গােলাম বজলুল করিম আপনার সমীপে অবনত মস্তকে বিনীত চিত্তে হাজির, হে আমার মওলা  শফিউল মুঝনেবিন (দঃ) এর উসিলায় আপনি আমার ফরিয়াদ (প্রার্থনা) কবুল করুন। ”

রচয়িতাঃ-খলিফায়ে গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী
রুমিয়ে বাঙ্গাল হযরত মাওলানা সৈয়দ বজলুল করিম আহমদী-উল কাদেরী মন্দাকিনী (রহঃ)

সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

হুর কি?

হুর কি ? বেহেশতে যে হুর দেয়া হবে, এ কথার অর্থ কি ?
** 'হুর' আরবি শব্দ । এর অর্থ অপ্সরা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি । আভিধানিক অর্থে- চক্ষুর
সাদা অংশ দুধের মত সাদা এবং কালো অংশ কুচকুচে কালো। এরূপ
অতি সুন্দরী রমণীকে বুঝায় । প্রচলিত ধারণামতে- হুর বলতে বেহেশতবাসীর নির্ধারিত
সুন্দরী রমণীকে বুঝানো হয়েছে ।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-
অর্থ-"সেখানে তাদের (স্বর্গবাসীদের) জন্য থাকবে আনতনয়না হুর । যা সযত্নে রক্ষিত
মুক্তার মত, তাদের কর্মের পুরস্কারস্বরূপ" (সুরা- ওয়াকিয়াহ, আয়াত- ২২-২৪) ।
পবিত্র কুরআনে অন্যত্র এরশাদ হয়েছে-
অর্থ-"বিশেষভাবে আমি ওদের সৃষ্টি করেছি । ওদের করেছি চিরকুমারী, চিত্তাকর্ষক ও
সমবয়স্কা । ডান পাশের সঙ্গীদের জন্য" (সুরা-ওয়াকিয়াহ, আয়াত- ৩৫-৩৮) ।
এছাড়া পবিত্র কুরআনে হুর সম্পর্কে আরো যে সকল আয়াত রয়েছে তা হল- সুরা- দোখান,
আয়াত- ৫৪, ৫৫; সুরা- তুর, আয়াত- ২০; সুরা- আর-রাহমান, আয়াত- ৭০, ৭২ ।
হুর সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- "তাঁদের (বেহেশতবাসী) করাঘাতের মৃদু শব্দ
শুনে হুরগণ অনুভব করতে পারবে যে, তাদের প্রতীক্ষিত স্বামীদের আগমন ঘটেছে । অতএব,
তখনই তারা স্বীয় স্বামীর আগমনে আনন্দিত হয়ে বিদ্যুৎবেগে ছুটে গিয়ে নিজ নিজ
স্বামীকে আলিঙ্গন করবে এবং তাকে ভিতরে নিয়ে আসবে । আর বলতে থাকবে,
ওগো প্রিয়তম! তুমি আমার পরম বন্ধু, আমি তোমাতেই সন্তুষ্ট ও পরিতুষ্ট থাকবো । আর
আমি কখনো তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবো না" (দাকাইয়েকুল আখবার, ১৮৫ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ প্রাপ্ত সাধক অলী-আল্লাহ্গণ পবিত্র কুরআন ও হাদিসের জাহেরী অর্থের
পাশাপাশি তাঁদের সাধনালব্ধ জ্ঞান থেকে তাঁদের ব্যক্তি জীবনেও হুরের সাথে অপূর্ব
মিল খুঁজে পান । তাঁদের দৃষ্টিতে, 'হুর' বলতে মানুষের পরিশুদ্ধ নফসকে বুঝায় । সাধক
সাধনার মাধ্যমে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করতে পারলে তিনি নফসকে নিজের নিজের
মধ্যে অনিন্দ্য সুন্দর রূপসী নারীরূপে দর্শন করে থাকেন । এই নফস যখন কু-রিপুমুক্ত হয়ে রূহের
মিলন লাভ করে তখন সে রূহের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং তাকে বন্ধু ও অভিভাবক
হিসেবে গ্রহণ করে, রূহের নির্দেশে পরিচালিত হয় এবং সর্বদা তার উপর সন্তুষ্ট থাকে ।
আর তাকে বলে, হে আমার পরম সত্তা! তুমি আমাকে যেভাবে খুশী- পরিচালিত কর ।
আমি কখনো তোমার অবাধ্য হবো না । অর্থাৎ- তোমার নির্দেশ অমান্য করবো না । এই
পরিশুদ্ধ নফস সঙ্গী হিসেবে পাওয়া পরম আত্মার জন্য পরম শান্তিময় ।
নফসের কারণেই মানুষের মর্যাদা । এই নফসের ভাল কর্মের কারণে মানুষ
সাধনা করে ফানাফিল্লাহয় পৌঁছে আল্লাহ্তে বিলীন হতে সক্ষম হয়, আবার এই নফসের কু-
কর্মের কারণেই মানুষ ধ্বংস হয়ে যায় । নফস পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম ব্যক্তি আল্লাহ্র প্রিয়
বন্ধুতে পরিণত হন । অপরদিকে এই নফস পরিশুদ্ধ না হলে সে ব্যক্তি হয় চির অভিশপ্ত ।
মোটকথা- নফসের উন্নতি ও অবনতির উপরেই মানুষের আত্মিক উন্নতি ও অবনতি নির্ভর
করে । সুতরাং জীবাত্মা সম্পূর্ণরূপে কলুষমুক্ত হয়ে পরমাত্মার অধীন হলে সাধকের
অন্তরে যে অনাবিল শান্তি লাভ হয় এবং পরিনামে তিনি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হন-
ইহাই বেহেশতে হুর লাভ করার রহস্য ।
পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফের উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিশেষে বলা যায় যে, মহান
আল্লাহ্ তায়ালা পুণ্যাত্মা ব্যক্তিদেরকে পুরস্কার
হিসেবে বেহেশতে সঙ্গিনীরূপে আনতনয়না হুর প্রদান করবেন, যারা চির কুমারী,
চিত্তাকর্ষক ও সমবয়স্কা হবে । হুর কখনো বেহেশতবাসীদের অবাধ্য হবে না ।
-আল্লাহ্ কোন পথে ?