সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

হুর কি?

হুর কি ? বেহেশতে যে হুর দেয়া হবে, এ কথার অর্থ কি ?
** 'হুর' আরবি শব্দ । এর অর্থ অপ্সরা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি । আভিধানিক অর্থে- চক্ষুর
সাদা অংশ দুধের মত সাদা এবং কালো অংশ কুচকুচে কালো। এরূপ
অতি সুন্দরী রমণীকে বুঝায় । প্রচলিত ধারণামতে- হুর বলতে বেহেশতবাসীর নির্ধারিত
সুন্দরী রমণীকে বুঝানো হয়েছে ।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-
অর্থ-"সেখানে তাদের (স্বর্গবাসীদের) জন্য থাকবে আনতনয়না হুর । যা সযত্নে রক্ষিত
মুক্তার মত, তাদের কর্মের পুরস্কারস্বরূপ" (সুরা- ওয়াকিয়াহ, আয়াত- ২২-২৪) ।
পবিত্র কুরআনে অন্যত্র এরশাদ হয়েছে-
অর্থ-"বিশেষভাবে আমি ওদের সৃষ্টি করেছি । ওদের করেছি চিরকুমারী, চিত্তাকর্ষক ও
সমবয়স্কা । ডান পাশের সঙ্গীদের জন্য" (সুরা-ওয়াকিয়াহ, আয়াত- ৩৫-৩৮) ।
এছাড়া পবিত্র কুরআনে হুর সম্পর্কে আরো যে সকল আয়াত রয়েছে তা হল- সুরা- দোখান,
আয়াত- ৫৪, ৫৫; সুরা- তুর, আয়াত- ২০; সুরা- আর-রাহমান, আয়াত- ৭০, ৭২ ।
হুর সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- "তাঁদের (বেহেশতবাসী) করাঘাতের মৃদু শব্দ
শুনে হুরগণ অনুভব করতে পারবে যে, তাদের প্রতীক্ষিত স্বামীদের আগমন ঘটেছে । অতএব,
তখনই তারা স্বীয় স্বামীর আগমনে আনন্দিত হয়ে বিদ্যুৎবেগে ছুটে গিয়ে নিজ নিজ
স্বামীকে আলিঙ্গন করবে এবং তাকে ভিতরে নিয়ে আসবে । আর বলতে থাকবে,
ওগো প্রিয়তম! তুমি আমার পরম বন্ধু, আমি তোমাতেই সন্তুষ্ট ও পরিতুষ্ট থাকবো । আর
আমি কখনো তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবো না" (দাকাইয়েকুল আখবার, ১৮৫ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ প্রাপ্ত সাধক অলী-আল্লাহ্গণ পবিত্র কুরআন ও হাদিসের জাহেরী অর্থের
পাশাপাশি তাঁদের সাধনালব্ধ জ্ঞান থেকে তাঁদের ব্যক্তি জীবনেও হুরের সাথে অপূর্ব
মিল খুঁজে পান । তাঁদের দৃষ্টিতে, 'হুর' বলতে মানুষের পরিশুদ্ধ নফসকে বুঝায় । সাধক
সাধনার মাধ্যমে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করতে পারলে তিনি নফসকে নিজের নিজের
মধ্যে অনিন্দ্য সুন্দর রূপসী নারীরূপে দর্শন করে থাকেন । এই নফস যখন কু-রিপুমুক্ত হয়ে রূহের
মিলন লাভ করে তখন সে রূহের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং তাকে বন্ধু ও অভিভাবক
হিসেবে গ্রহণ করে, রূহের নির্দেশে পরিচালিত হয় এবং সর্বদা তার উপর সন্তুষ্ট থাকে ।
আর তাকে বলে, হে আমার পরম সত্তা! তুমি আমাকে যেভাবে খুশী- পরিচালিত কর ।
আমি কখনো তোমার অবাধ্য হবো না । অর্থাৎ- তোমার নির্দেশ অমান্য করবো না । এই
পরিশুদ্ধ নফস সঙ্গী হিসেবে পাওয়া পরম আত্মার জন্য পরম শান্তিময় ।
নফসের কারণেই মানুষের মর্যাদা । এই নফসের ভাল কর্মের কারণে মানুষ
সাধনা করে ফানাফিল্লাহয় পৌঁছে আল্লাহ্তে বিলীন হতে সক্ষম হয়, আবার এই নফসের কু-
কর্মের কারণেই মানুষ ধ্বংস হয়ে যায় । নফস পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম ব্যক্তি আল্লাহ্র প্রিয়
বন্ধুতে পরিণত হন । অপরদিকে এই নফস পরিশুদ্ধ না হলে সে ব্যক্তি হয় চির অভিশপ্ত ।
মোটকথা- নফসের উন্নতি ও অবনতির উপরেই মানুষের আত্মিক উন্নতি ও অবনতি নির্ভর
করে । সুতরাং জীবাত্মা সম্পূর্ণরূপে কলুষমুক্ত হয়ে পরমাত্মার অধীন হলে সাধকের
অন্তরে যে অনাবিল শান্তি লাভ হয় এবং পরিনামে তিনি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হন-
ইহাই বেহেশতে হুর লাভ করার রহস্য ।
পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফের উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিশেষে বলা যায় যে, মহান
আল্লাহ্ তায়ালা পুণ্যাত্মা ব্যক্তিদেরকে পুরস্কার
হিসেবে বেহেশতে সঙ্গিনীরূপে আনতনয়না হুর প্রদান করবেন, যারা চির কুমারী,
চিত্তাকর্ষক ও সমবয়স্কা হবে । হুর কখনো বেহেশতবাসীদের অবাধ্য হবে না ।
-আল্লাহ্ কোন পথে ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন