বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

চরণ কি?

চরণ কি?
======

আজ আমি লালন শাঁইজির গানে ব্যাবহৃত চরণ ও তাঁর দৃষ্টিতে কোরান নিয়ে আলোচনা করবো।কেন না লালন শাঁইজি তার অনেক গানের মধ্যে কয়েক প্রকার চরণের কথা উল্লেখ করেছেন।যেমন-

সাধু চরণ,গুরু চরণ,শ্রী চরণ, রাঙ্গা চরণ, উভয় চরণ ও অভয় চরণ।

চরণ শব্দের অর্থ কি?

আপনারা জানেন চরণ মানে পা।তাই যখন লালনের গান-

১।কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়।আমি বসে আছি আশা সিন্ধু কুলেতে সদায়।

তখন লালন পন্থিরা বলেন।চরণ মানে পা।আর গুরুর চরণ আশায় শিষ্য আশা সিন্ধু কুলে বসে থাকে।

আবার এই গানের ই শেষ লাইনে লেখা আছে,

আমি শুনেছি সাধুর করুণা,সাধু চরণ পরশিলে হয়গো সোনা। 

তাহলে দেখা গেলো সাধু চরণ স্পর্শ হলে সোনা হয়ে যায়।কিন্তু চরণ মানে পা হলে ,এই পায়ের পরশে কিছুই সোনা হওয়া সম্ভব নয়।গুরুর মুখ নিসৃত বাণীতে হয়তো খারাপ ভালো হয়ে যেতে পারে, কিন্তু চরণ ধুলিতে নয়।

আবার লালন শাঁইজি তার গানের মধ্যে বলেছেন-

২।রাঙ্গা চরণ পাবো বলে,বাঞ্ছা সদায় হৃদ কমলে।
৩।সার করো মন গুরুর চরণ।পারে যাওয়ার থাকলে আশা।
৪।রেখো মোরে শ্রী চরণে,চরণ ছাড়া করো না।
৫।যুগলো চরণের ধুলি লাগবে কবে পাপির গায়।আশা সিন্ধু কুলে বসে আছি গো সদায়।

আবার বলেছেন-ধরো চরণ ছেড়ো না,নিতাই কাওরে ফেলে যাবে না।

তাই এই চরণের মাহাত্ম কি? কি বলতে চেয়েছেন লালন এই চরণকে।আসুন আজ আমরা জেনে নিই চরণ বলতে লালন কাকে বুঝিয়েছেন।এবং চরণের সাধনা কি।

চরণ শব্দের অর্থ পঠিত।অর্থাৎ যাহা পাঠ করা হয় তাহাকেই চরণ বলে।যেমন কোরান অর্থ পঠিত।এই কোরানকেই লালন তার ভাষায় চরণ বলেছেন।অর্থাৎ কোরান মানেও পঠিত, চরণ মানেও পঠিত।এখন কোরানের মধ্যে পাঁচটি কিতাব বর্তমান ঠিক তেমনি লালনও চরণকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন।যেমন-

১।শ্রী-চরণ-=যার অর্থ পুরুষ লিঙ্গ।আর শ্রী-চরণের ধুলি হলো শুক্রাণু।
২।রাঙ্গা-চরণ-=যার অর্থ স্ত্রী-লিঙ্গ।আর রাঙ্গা চরণের ধুলি ডিম্বাণু।
৩।সাধু-চরণ-=যার অর্থ নারীর ডান স্তন।সাধু চরণ ধুলি ডান স্তনের দুধ।
৪।গুরু-চরণ-=যার অর্থ নারীর বাম স্তন।আর গুরু চরণ ধুলি বাম স্তনের দুধ।
৫।যুগল-চরণ-=যার অর্থ নারীর ডান ও বাম স্তন।আর যুগল চরণ ধুলি ডান ও বাম স্তনের সম্মিলিত দুধ।এ্কে অভয় চরণ ও বলা হয়েছে।অর্থাৎ যে,গুরুর মুখ নিসৃত বাণীতে সাধু চরণ সাধতে সাধতে যুগল চরণে প্রবেশ করতে পেরেছে।সেই অভয় প্রাপ্ত হয়েছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন