হযরত শাহ্সূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের কতিপয় উপদেশঃ
(১) পীরের খাসলতে খাসলত ধর, তবেই ত্রাণ ও শান্তি।
(২) প্রত্যেক নিঃশ্বাসে কালবের মধ্যে ডুবিয়া থাক, নচেৎ হালাক হইবার ভয় আছে। জীবনভর এবাদত করিয়া শেষ নিঃশ্বাসে আল্লাহকে ভুলিয়া মরিলে যাবতীয় এবাদত বিনষ্ট হইয়া যাইবে-বেঈমান হইয়া মরিবে। তাই আল্লাহর প্রিয়সকল ঈমানের সহিত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিবার জন্য আল্লাহর হুজুরে জীবনভর কাঁদিতেন। তোমরা ঈমানের সহিত মরিবার জন্য কতদিন কাঁদিয়াছ? মাতালের মত বেহুঁশ হইও না। হুঁশিয়ার হও- অমূল্য জীবন আর ফিরিয়া পাইবে না।
(৩) একমাত্র ইসলাম ধর্মের ভিতর দিয়াই খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্ব হাসিল করা সম্ভব। আর এই কারণেই ইসলাম আল্লাহতায়ালার মনোনীত শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
(৪) যদি পরিপূর্ণ মুসলমান হইতে চাও তবে শরীয়তের যাবতীয় হুকুম মানিয়া চল। তাহা হইলে মারেফাতের জ্ঞান তোমাদের জন্য সহজ হইবে।
(৫) কোন ব্যক্তি, কোন পীর কিংবা কোন মানুষকে সিজদা করিও না- ইহা আল্লাহর নিষেধ।
(৬) বিশ্ব আত্মার সহিত স্বীয় আত্মার যোগসূত্র স্থাপন প্রতিটি মুসলমানেরই কর্তব্য এবং সেই বিদ্যাই সর্বোৎকৃষ্ট বিদ্যা যাহার দ্বারা আল্লাহতায়ালাকে সনাক্ত করা যায়।
(৭) কামেল পীরের তাওয়াজ্জুহ-এর বলে মুরীদের মুর্দা দিল জিন্দা হইয়া প্রকৃত সত্যকে অনুধাবন করিতে পারে। মুর্দা দিল জিন্দা হইলে ঐ দিলে আল্লাহ ও রাসূলের (দঃ) খাস মহব্বতের ফয়েয ওয়ারেদ হইতে থাকে। তখন মানুষ হুজুরী দিলে নামায আদায় করিতে সক্ষম হয়।
(৮) শুধু মুখে আল্লাহর নাম আর অন্তরে দুনিয়ার চিন্তা এমন নামাযে কোন ফল নাই। তাই রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলেন, ‘নামাযই নয় হুজুরী দিল ব্যতীত।' সুতরাং নামায পরিবার সময় খেয়ালকে সব দিক হইতে ফিরাইয়া আপন কালবের ভিতর ডুবাইয়া রাখ। যতক্ষণ খেয়াল কালবে থাকিবে, ততক্ষণ আল্লাহকে মনে থাকিবে; যেইমাত্র খেয়াল কালব হইতে বাহির হইয়া যাইবে, তখনি আল্লাহকে ভুলিয়া যাইবে। নামাযের সময় যদি আল্লাহই মনে না থাকে, তবে কাহাকে সিজদা করিতেছ, তাহা চিন্তা করিয়া দেখ। অল্প সময়ের জন্যই তোমরা আল্লাহর হুজুরে দাঁড়াইয়া থাক, সুতরাং এই সামান্য সময়ের জন্য মন ও মুখ এক করিয়া আল্লাহতায়ালার সিজদা কর।
(৯) রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর মহব্বতই প্রকৃত ঈমান। রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর মহব্বত যাহার অন্তরে যতটুকু তাহার ঈমানও ততটুকু।
(১০) যদি তোমরা আল্লাহ রাসূলের মহব্বত অন্তরে সৃষ্টি করিতে চাও, তবে কামেল পীরের সাহচর্য সন্ধান কর।
(১১) কালব আল্লাতায়ালার ভেদের মহাসমুদ্র এবং এই কালবের মধ্যেই আল্লাতায়ালার নিদর্শনসমূহ লাভ করা যায়। ক্ষুদ্র একটি বটের বীজের মধ্যে যেমন একটি বটগাছ লুকাইয়া থাকে, তেমনি মানব বক্ষস্থিত কালব নামক ক্ষুদ্র একটি মাংসপিন্ডের মধ্যে আল্লাহর ভেদের দফতর লুক্কায়িত। নাফসের কুখাসলতের ফলে মানব বক্ষস্থিত কালব (যাহা স্বচ্ছ) কালো হইয়া যায়। আল্লাহতায়ালার ভেদের নিদর্শন সমূহ অনুধাবন করিতে হইলে এবং তাঁহার সহিত যোগসূত্র স্থাপন করিতে হইলে কালবকে আয়নার ন্যায় স্বচ্ছ করিতে হইবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাতায়ালার সহিত যোগসূত্র স্থাপন করিতে না পারিবে, ততক্ষণ তোমার আত্মা অতৃপ্ত থাকিবে এবং যখন তাঁহার সহিত যোগসূত্র স্থাপন করিতে পারিবে, তখন তোমার আত্মা এক অনাবিল শান্তির অধিকারী হইবে।
(১২) যেইমাত্র তুমি তোমার ময়লা দিলকে পীরে কামেলের পাক দিলের সহিত মিশাইতে পারিবে, সেই মুহূর্তে তোমার অন্ধকার দিল আলোকিত হইবে এবং আল্লাহর জিকিরে নাচিয়া উঠিবে।
(১৩) মুর্শিদে কামেলের পথই প্রকৃত সত্যের পথ এবং গযব হইতে বাঁচিবার পথ।
(১৪) আল্লাহ্কে চিনিবার পথে অনেক দুঃখ ও লোক-নিন্দা সহ্য করিতে হয়।
(১৫) ‘উরস শরীফ' জামে আম্বিয়া, জামে আওলিয়া ও তামাম পৃথিবীর মুমিন মুসলমানদের বিদেহী আরওয়াহ পাকের উপর সওয়াব রেছানীর মজলিস। উক্ত মজলিসে তোমরা শোরগোল ও বেয়াদবী করিও না। ইহা ওলী-আল্লাহগণের মজলিস। সুতরাং কেহ বেয়াদবী করিলে দুই দিন আগে বা পরে তকদিরে পোকা ধরিবে। তোমরা খোদার অন্বেষণে আসিয়াছ, তাই খেয়াল কালবে ডুবাইয়া আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকো।
(১৬) আল্লাহতায়ালা বলেন, “আল্লাহকে ভয় কর এবং তাহাকে পাইবার জন্য ওসিলা অন্বেষণ কর”। সেই ওসিলাই যামানার কামেল ওলীসকল, যেহেতু তাঁহাদের পাক আত্মার যোগাযোগে বিশ্ব আত্মার সান্নিধ্য লাভ হয়।
(১৭) বর্তমান যামানা অত্যন্ত মুসিবতের যামানা। অদূর ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসিবে, যখন মানুষ জলে-স্থলে সর্বজায়গায় বিপদ ছাড়া আর কিছুই দেখিবে না। আখেরী যামানার গযব হইতে একমাত্র মুমিন লোক ব্যতীত কেহই বাঁচিতে পারিবে না। যদি তোমরা উক্ত গযব হইতে বাঁচিতে চাও, তবে তরিকতের কাজ সঠিকভাবে পালন কর এবং যামানার মুজাদ্দিদের দামনকে শক্তভাবে ধারণ কর।
(১৮) ওলীআল্লাহ সকল একটি জ্বলন্ত লৌহসদৃশ। এক খন্ড লৌহ যেইরূপ আগুনে পুড়িয়া আগুনের রং ধারণ করে, সেইরূপ আল্লাহর ওলীসকল আল্লাতায়ালার নূরের তাজাল্লিতে জ্বলিয়া আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হন।
(১৯) নিশির শেষভাগে সমগ্র সৃষ্টি জগৎ আল্লাতায়ালার দিকে ঘুরে এবং আল্লাতায়ালা এই সময় তাঁহার সৃষ্টির প্রতি রহমতের নযরে তাকান। তাই এই সময়টি অত্যন্ত মূল্যবান।
(২০) হে তামাম দুনিয়ার মুসলমান সকল! অমূল্য জীবন স্বপ্নের মত চলিয়া যাইতেছে। হুশিয়ার হও। নিশির শেষভাগে আল্লাতায়ালাকে ‘ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু' -এই তিন নাম ধরিয়া ডাক। তবেই কল্যাণ -সন্দেহ নাই।
(তথ্যসূত্রঃ সংক্ষিপ্ত ওজিফা)
<<<বিশ্ব ওলীর বানী-৩>>>
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন