সূত্রঃ-মারেফতের
এমন কিছু লিখতে চাইনা যদ্দারা সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।আমি তরিক্বতের মানুষ তাই লেখায় এই বিষয়টি প্রাধান্য পাবে এটাই স্বাভাবিক,আমার উপলব্ধি থেকে লিখে যাবো ভুল আমার হতেই পারে তাই লেখার সঠিকতা নির্ধারণ এবং গ্রহণ, বর্জন করা পাঠকদের নিজস্ব জ্ঞান বিবেচনার এখতিয়ারে পরবে। ধন্যবাদ
মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
নফস সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
নফস তথা আমি পবিত্র । তখনই নফস অপবিত্র হয় , যখন খান্নাসরূপী শয়তানটি আমার মধ্যে অবস্থান করে । আমি + খান্নাসরূপী শয়তান = আমিত্ব / অহম / হাস্তি / খুদি / ইগাে সেন্ট্রিসিটি । এই আমিত্বকেই পরিত্যাগ করার আদেশটির নাম কোরান শরীফ । কোরানে আদেশ উপদেশের বিচিত্র ভঙ্গি ও শৈলী পাওয়া যায় । বিচিত্র আদেশ - উপদেশে , বিচিত্র কথা ও রূপকথার মাধ্যমে এই আমিত্বটিকে তাড়িয়ে দিয়ে একা হতে বলছে পবিত্র কোরান । চরম সত্যে এই একটি মাত্র আদেশ - উপদেশ ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন আদেশ - উপদেশ নাই । ঘাট অনেক , নদী একটাই । স্বর্ণের অলংকার বহু , কিন্তু গলিয়ে ফেললে একই সােনা । দেশ ও জলবায়ুর প্রশ্নে গরুর আকার অনেক রকম , কিন্তু দুধ একই । বৈদিক যুগের মুনি - ঋষি হতে আজকের এই আধুনিক যুগের সুফিদের একই কথা , একই উপদেশ । কিন্তু উপদেশের ভাষা ও বাক্যের স্টাইল অনেক রকম । তাই এক কামেল পীরের যদি উপযুক্ত হতে পার , তাহলে সকল পীরের রহমতের দরজা তােমার জন্য খােলা থাকবে । যদি এক কামেল পীরের দৃষ্টিতে অনুপযুক্ত হও , তাহলে দেখতে পাবে , সকল কামেল পীরের রহমতের দরজা বন্ধ । কামেল পীরেরা অনেক ধ্যান - সাধনা করার পর আল্লাহ্ পাকের বিশেষ রহমত অর্জন করতে পেরেছেন । সেই রহমতটি আর কিছুই নয় ; কেবলমাত্র খান্নাসরূপী শয়তানটিকে তাড়িয়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে রূহ তথা আল্লাহ্ স্বয়ং রবরূপে আত্মপ্রকাশ করেন । তখন নফসটি হয়ে যায় রূহ - এর বাহন মাত্র । নফ্স মােমায়েন্না হবার পর আরও যদি উধ্বস্তরে গমন করতে পারে , এবং পরিশেষে চরম পর্যায়েও অবস্থান নেয় , তবু নফস সৃষ্ট ; তথা প্রতিটি মানুষ যদি উর্ধ্ব জগতে বিচরণও করে , তবু সে সৃষ্ট । কারণ নফস সৃষ্ট , কিন্তু রূহ সৃষ্ট নয় । রব আল্লাহর আদেশ তথা আল্লাহ্ স্বয়ং । চন্দ্রগ্রহণ - সূর্যগ্রহণের মত যখন মানবীয় নফসটিকে রূহ তথা আল্লাহ্ সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলে , তখন নিজেকে আর দেখতে পান না । তখনই সাধক বলে ফেলেন , “ আনাল হক ' তথা আমিই সত্য । তখনই শ্রীশ্রী চৈতন্যদেব বলে ফেলেন , ‘ তুই মুই , মুই তুই ' তথা তুইই আমি , আমিই তুই । এই দর্শনটিকে পবিত্র কোরান এভাবে বলছে যে , আপনি পাথর ছুড়ে মারেন নি বরং আমিই ছুড়ে মেরেছি । ওটা আপনার হাত নয় , বরং ওটা আমার হাত । ' যদিও মানবীয় সত্তাটি সৃষ্ট এবং আল্লাহ্ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ সেফাত তথা গুণ , সেফাত কখনাে জাত নয় , বরং জাত হতে সেফাতের আগমন । তাই বলা হয়ে থাকে , মানুষ আল্লাহ্ নয় : আবার আল্লাহ্ হতে আলাদাও নয় । ডালিম গাছ নয় : আবার গাছ হতে আলাদা নয় । পবিত্র বােখারি শরিফেও বলা হয়েছে যে , বান্দা নফল এবাদত করতে করতে আল্লাহ্র এত নিকটে এসে পড়ে যে , বান্দার জবান আল্লাহ্র জবান হয়ে যায় ; বান্দার চোখ আল্লাহ্ চোখ হয়ে যায় এবং সেই চোখে দেখে ; বান্দার কান আল্লাহ্র কান হয়ে যায় এবং সেই কানে শ্রবণ করে ; বান্দার হাত আল্লাহর হাত হয়ে যায় এবং সেই হাতে কর্ম করে ; বান্দার পা আল্লাহর পা হয়ে যায় এবং সেই পা দিয়ে হাটে । যদিও চরম সত্যে বান্দা সেফাত , জাত নয় , তবু সেফাতের মধ্যে জাত আপনরূপে উদ্ভাসিত হতে পারে ;কিন্তু জাতের মধ্যে সেফাতের অবস্থানটি হয় না । ইহা একটি সূক্ষ্ম বিষয় । ইহা একটি চিকন চিন্তা । ইহা একটি রহস্যলােকের কথা , যা সবার পক্ষে বুঝে উঠা সম্ভবপর নয় । মহানবী রহমাতুল্লিল আল আমিন তথা সমস্ত আলমের রহমত , তাই মহানবী সবারই শিক্ষা ও দীক্ষার মহাগুরু । যারা এই ঊর্ধ্বলােকের বিষয়টি অবগত নয় তথা বুঝতে পারে না তাদেরকেই মহানবী সৈনিক - ধর্ম পালনের প্রেসক্রিপশন তথা ব্যবস্থাপত্রটি রহমতরূপে দিয়ে গেছেন । পাঠশালার শিক্ষা , স্কুলের শিক্ষা , কলেজের শিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা - সবই শিক্ষা , তবে প্রকারভেদ অবশ্যই আছে । কোন শিক্ষাকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নাই । প্রতিটি সেফাত তথা গুণ জাত হতে আগমন করেছে । এমনকি একটি ধুলিকণাও আল্লাহ্র সেফাতের সেফাত হয়ে অবস্থান করছে । আল্লাহ ছাড়া কোনাে অস্তিত্বই নাই । অস্তিত্ব না থাকাটাই একটি বিরাট শূন্য । শূন্য যােগ শূন্য সমান সমান শূন্য । আধুনিক বিজ্ঞান অস্তিত্ববিহীন কিছুরই অবস্থান থাকতে পারে না বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছে । তাই বলা হয়েছে , ‘ ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু । ' তথা তিনিই একমাত্র এবং তার কোন শরিক নাই । সামান্য একটি ধুলিকণাও যদি বলে ফেলে যে , আমি যতই ক্ষুদ্র হই না কেন , আল্লাহর অস্তিত্বের সম্পূর্ণ বাহিরে অবস্থান করছি , তাহলে ধুলিকণা যতই ক্ষুদ্র হউক না কেন আল্লাহর সাথে শেরেক করছে।তাই আল্লাহ্ লা শারিকা লাহু। সুতরাং আল্লাহ্ পাক যেমন ওয়াহেদ তেমনি আবার আহাদও, তথা স্বয়ম্ভু।
সূত্রঃ-মারেফতের বাণী
সূত্রঃ-মারেফতের
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন