মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

নফস সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা

নফস তথা আমি পবিত্র । তখনই নফস অপবিত্র হয় , যখন খান্নাসরূপী শয়তানটি আমার মধ্যে অবস্থান করে । আমি + খান্নাসরূপী শয়তান = আমিত্ব / অহম / হাস্তি / খুদি / ইগাে সেন্ট্রিসিটি । এই আমিত্বকেই পরিত্যাগ করার আদেশটির নাম কোরান শরীফ । কোরানে আদেশ উপদেশের বিচিত্র ভঙ্গি ও শৈলী পাওয়া যায় । বিচিত্র আদেশ - উপদেশে , বিচিত্র কথা ও রূপকথার মাধ্যমে এই আমিত্বটিকে তাড়িয়ে দিয়ে একা হতে বলছে পবিত্র কোরান । চরম সত্যে এই একটি মাত্র আদেশ - উপদেশ ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন আদেশ - উপদেশ নাই । ঘাট অনেক , নদী একটাই । স্বর্ণের অলংকার বহু , কিন্তু গলিয়ে ফেললে একই সােনা । দেশ ও জলবায়ুর প্রশ্নে গরুর আকার অনেক রকম , কিন্তু দুধ একই । বৈদিক যুগের মুনি - ঋষি হতে আজকের এই আধুনিক যুগের সুফিদের একই কথা , একই উপদেশ । কিন্তু উপদেশের ভাষা ও বাক্যের স্টাইল অনেক রকম । তাই এক কামেল পীরের যদি উপযুক্ত হতে পার , তাহলে সকল পীরের রহমতের দরজা তােমার জন্য খােলা থাকবে । যদি এক কামেল পীরের দৃষ্টিতে অনুপযুক্ত হও , তাহলে দেখতে পাবে , সকল কামেল পীরের রহমতের দরজা বন্ধ । কামেল পীরেরা অনেক ধ্যান - সাধনা করার পর আল্লাহ্ পাকের বিশেষ রহমত অর্জন করতে পেরেছেন । সেই রহমতটি আর কিছুই নয় ; কেবলমাত্র খান্নাসরূপী শয়তানটিকে তাড়িয়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে রূহ তথা আল্লাহ্ স্বয়ং রবরূপে আত্মপ্রকাশ করেন । তখন নফসটি হয়ে যায় রূহ - এর বাহন মাত্র । নফ্স মােমায়েন্না হবার পর আরও যদি উধ্বস্তরে গমন করতে পারে , এবং পরিশেষে চরম পর্যায়েও অবস্থান নেয় , তবু নফস সৃষ্ট ; তথা প্রতিটি মানুষ যদি উর্ধ্ব জগতে বিচরণও করে , তবু সে সৃষ্ট । কারণ নফস সৃষ্ট , কিন্তু রূহ সৃষ্ট নয় । রব আল্লাহর আদেশ তথা আল্লাহ্ স্বয়ং । চন্দ্রগ্রহণ - সূর্যগ্রহণের মত যখন মানবীয় নফসটিকে রূহ তথা আল্লাহ্ সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলে , তখন নিজেকে আর দেখতে পান না । তখনই সাধক বলে ফেলেন , “ আনাল হক ' তথা আমিই সত্য । তখনই শ্রীশ্রী চৈতন্যদেব বলে ফেলেন , ‘ তুই মুই , মুই তুই ' তথা তুইই আমি , আমিই তুই । এই দর্শনটিকে পবিত্র কোরান এভাবে বলছে যে , আপনি পাথর ছুড়ে মারেন নি বরং আমিই ছুড়ে মেরেছি । ওটা আপনার হাত নয় , বরং ওটা আমার হাত । ' যদিও মানবীয় সত্তাটি সৃষ্ট এবং আল্লাহ্ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ সেফাত তথা গুণ , সেফাত কখনাে জাত নয় , বরং জাত হতে সেফাতের আগমন । তাই বলা হয়ে থাকে , মানুষ আল্লাহ্ নয় : আবার আল্লাহ্ হতে আলাদাও নয় । ডালিম গাছ নয় : আবার গাছ হতে আলাদা নয় । পবিত্র বােখারি শরিফেও বলা হয়েছে যে , বান্দা নফল এবাদত করতে করতে আল্লাহ্র এত নিকটে এসে পড়ে যে , বান্দার জবান আল্লাহ্র জবান হয়ে যায় ; বান্দার চোখ আল্লাহ্ চোখ হয়ে যায় এবং সেই চোখে দেখে ; বান্দার কান আল্লাহ্র কান হয়ে যায় এবং সেই কানে শ্রবণ করে ; বান্দার হাত আল্লাহর হাত হয়ে যায় এবং সেই হাতে কর্ম করে ; বান্দার পা আল্লাহর পা হয়ে যায় এবং সেই পা দিয়ে হাটে । যদিও চরম সত্যে বান্দা সেফাত , জাত নয় , তবু সেফাতের মধ্যে জাত আপনরূপে উদ্ভাসিত হতে পারে ;কিন্তু জাতের মধ্যে সেফাতের অবস্থানটি হয় না । ইহা একটি সূক্ষ্ম বিষয় । ইহা একটি চিকন চিন্তা । ইহা একটি রহস্যলােকের কথা , যা সবার পক্ষে বুঝে উঠা সম্ভবপর নয় । মহানবী রহমাতুল্লিল আল আমিন তথা সমস্ত আলমের রহমত , তাই মহানবী সবারই শিক্ষা ও দীক্ষার মহাগুরু । যারা এই ঊর্ধ্বলােকের বিষয়টি অবগত নয় তথা বুঝতে পারে না তাদেরকেই মহানবী সৈনিক - ধর্ম পালনের প্রেসক্রিপশন তথা ব্যবস্থাপত্রটি রহমতরূপে দিয়ে গেছেন । পাঠশালার শিক্ষা , স্কুলের শিক্ষা , কলেজের শিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা - সবই শিক্ষা , তবে প্রকারভেদ অবশ্যই আছে । কোন শিক্ষাকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নাই । প্রতিটি সেফাত তথা গুণ জাত হতে আগমন করেছে । এমনকি একটি ধুলিকণাও আল্লাহ্র সেফাতের সেফাত হয়ে অবস্থান করছে । আল্লাহ ছাড়া কোনাে অস্তিত্বই নাই । অস্তিত্ব না থাকাটাই একটি বিরাট শূন্য । শূন্য যােগ শূন্য সমান সমান শূন্য । আধুনিক বিজ্ঞান অস্তিত্ববিহীন কিছুরই অবস্থান থাকতে পারে না বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছে । তাই বলা হয়েছে , ‘ ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু । ' তথা তিনিই একমাত্র এবং তার কোন শরিক নাই । সামান্য একটি ধুলিকণাও যদি বলে ফেলে যে , আমি যতই ক্ষুদ্র হই না কেন , আল্লাহর অস্তিত্বের সম্পূর্ণ বাহিরে অবস্থান করছি , তাহলে ধুলিকণা যতই ক্ষুদ্র হউক না কেন আল্লাহর সাথে শেরেক করছে।তাই আল্লাহ্ লা শারিকা লাহু। সুতরাং আল্লাহ্ পাক যেমন ওয়াহেদ তেমনি আবার আহাদও, তথা স্বয়ম্ভু। 

সূত্রঃ-মারেফতের বাণী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন