ফেরেশতারা সেজদা দিয়েছিল আদম (আ:)-কে হযরত ইয়াকুব (আ:) সপরিবারে সেজদা দিয়েছিলেন হযরত ইউসুফ (আ:)-কে আর আমরা সেজদা দিচ্ছি হযরত ইব্রাহিম (আ:)-কে।
সরাসরি আল্লাহর আনুগত্য করার কোন সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহ প্রকাশ্যে জমিনে নিজে এসে কোন আদেশ নির্দেশ দেননি যে, মানুষ সরাসরি আল্লাহর আনুগত্য করবে। আর যেহেতু আল্লাহর সরাসরি আনুগত্য করার সুযোগ নেই, সেই কারণে আল্লাহ কুরআনে বারবার হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য করো। এর অর্থ হলো, রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য করা মানেই আল্লাহর আনুগত্য করা। রাসুল (সাঃ)-এর বিরোধিতা করে মানেই আল্লাহর বিরোধিতা করা। রাসুল (সাঃ)-এর সন্তষ্টি অর্জন করা মানেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। রাসুল (সাঃ)-কে মনেপ্রাণে ভালবাসা মানেই আল্লাহকে মনেপ্রাণে ভালবাসা। রাসুল (সাঃ)-এর কাছে চাওয়া মানেই আল্লাহর কাছে চাওয়া। তেমনিভাবে রাসুল (সাঃ)-এর অসন্তুষ্টি মানেই হলো আল্লাহর অসন্তুষ্টি। যে ব্যক্তির উপর রাসুল (সাঃ) অসন্তুষ্ট, সে ব্যক্তির ইহকাল পরকাল বরবাদ।
এরপরও একশ্রেণী বলে যে, আল্লাহকে পেতে কোন মাধ্যম লাগে না বা উসিলা লাগে না। এরা চিন্তা করে দেখে না যে, আল্লাহ নিজেই তাঁর পরিচয় প্রকাশ করেছেন উসিলার মাধ্যমে অর্থাৎ নবী রাসুলগণের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর পরিচয় মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন। আর আমরা তাঁর বান্দা হয়ে বলি, আল্লাহকে পেতে কোন মাধ্যম লাগে না।
কুরআন হলো কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য জীবন-বিধান। মানুষের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সকল কর্মের নির্দেশনা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তবুও কুরআনের আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ টি। নবী রাসুলগণের সংখ্যা এক লক্ষ কিংবা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার হলে, আর প্রত্যেক নবী রাসুল সম্পর্কে যদি একটি করে আয়াত নাযিল করা হত, তাহলেই তো কুরআনের আয়াত সংখ্যা এক লক্ষ কিংবা দুই লক্ষের অধিক হয়ে যেত। অন্য প্রয়োজনীয় আয়াত সংখ্যা যোগ হলে কুরআনের কলেবর কতবড় হত? এইজন্যই কুরআনে যাকিছু আল্লাহ বলেছেন, তা অনর্থক বলেননি, মানুষের শিক্ষার জন্যই প্রত্যেকটি আয়াত আল্লাহ নাযিল করেছেন।
আল্লাহ কুরআনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি ও সকল ফেরেশতা কতৃক আদম (আঃ)-কে সেজদাহর ঘটনা কুরআনে বর্ণনা করেছেন। তেমনি হযরত ইয়াকুব (আঃ) নিজে একজন নবী হয়ে তাঁরই পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে স্ত্রী ও অন্য সন্তানদের নিয়ে সেজদাহ করেছিলেন (সূরা ইউসুফ, আয়াত-১০০)। সেই ঘটনা আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করেছেন, তা কি এমনি এমনিই বর্ণনা করেছেন?
খেয়াল করুন, ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বললেন, আমি যখন আদম (আঃ)-কে ঠিকঠাক করে তাঁর ভিতরে আমার রুহ হতে রুহ ফুঁকে দিব, তোমরা তখন আদম (আঃ)-কে সেজদাহ করবে (সূরা হিজর, আয়াত-২৯ এবং সূরা ছোয়াদ, আয়াত-৭২)। এখানে আল্লাহ আদম (সাঃ)-কে ঠিকঠাক করে রুহ হতে রুহ ফুঁকে দেওয়ার আগেই কেন ফেরেশতাদেরকে বলে রাখলেন? আল্লাহ তো আদম (আঃ)-কে ঠিকঠাক করে রুহ ফুঁকে দেওয়ার পরেই ফেরেশতাদেরকে বলতে পারতেন আদম (আঃ)-কে সেজদাহ করো, তা না করে তিনি ঠিকঠাক করে রুহ ফুঁকে দেওয়ার আগেই জানিয়ে রাখলেন যে, আমি যখন আদম (আঃ)-কে ঠিকঠাক করে আদম (আঃ)-এর ভিতরে প্রবেশ করবো, তখন তোমরা আদম (আঃ)-কে সেজদাহ করবে। আর ফেরেশতারাও দেখলেন যে, আল্লাহ স্বয়ং আদম (আঃ)-এর ভিতরে অবস্থান নিয়েছেন, তাই সকল ফেরেশতা আদম (সাঃ)-কে সেজদাহ করলেন। ফেরেশতাদের সর্দার আজাজীল যেহেতু আগুনের তৈরি, তাই তার ভিতরে অহংকার থাকায় সে আদম (আঃ)-এর আনুগত্য মেনে না নিয়ে সেজদাহ করতে অস্বীকার করে অভিশপ্ত হয়ে শয়তানে পরিণত হলো। আর এই ঘটনা কুরআনে আল্লাহ একাধিকবার বর্ণনা করেছেন যাতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধির আনুগত্য করতে অস্বীকার করে শয়তানে পরিণত না হয়। যুগে যুগে এইভাবেই প্রতিনিধির মাধ্যমেই আল্লাহ যেমন তাঁর নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন, তেমনি আল্লাহ প্রতিনিধির মাধ্যমেই মানুষের ইবাদত বন্দেগী গ্রহণ করে থাকেন। এই যেমন আল্লাহ মানুষের নামাজের সেজদাহ ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের মাধ্যমে এখনো গ্রহণ করছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত গ্রহণ করবেন।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর একজন সম্মানিত রাসুল এবং মুসলিম জাতির পিতা। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কাবা শরীফ নির্মাণ করেন। কাবা শরীফ নির্মাণের সময় তিনি যে পাথরের উপর দাড়িয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন। সেই পাথর আল্লাহর কুদরতে নরম হয়ে যায় যাতে ইব্রাহিম (আঃ)-এর কষ্ট না হয়। পাথর নরম হয়ে যাওয়ায় সেই পাথরের উপর হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ অঙ্কিত হয়ে যায়। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ অঙ্কিত পাথরকে মাকামে ইবরাহীম বলে। কাবা শরীফের কাছে যা স্বর্ণের খাঁচার মত করে ঘিরে রাখা হয়েছে। কাবা শরীফ মুসলমানদের কেবলা ঘোষিত হয়েছে। কেবলা অর্থ দিক, কাবাকে কেবলা করে নামাজ আদায় করার অর্থ হলো কাবা শরীফের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা। মুসলমানরা কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলেও সেজদাহর লক্ষ কিন্তু কাবা নয়। সকল মুসলমানরা জানুক বা না জানুক কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলেও সেজদাহর লক্ষ থাকে মাকামে ইবরাহীম। কারণ আল্লাহ কুরআনে হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা মাকামে ইবরাহীমে সেজদাহ করো (সূরা বাকারাহ, আয়াত-১২৫)। যদিও অনুবাদগুলোতে বলা হয়েছে যে, তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে সেজদাহর স্থান বানাও, কোন কোন অনুবাদে বলা হয়েছে যে, তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে নামাজের স্থান বানাও। এইকারণে কাবার ইমাম সাহেব নামাজের ইমামতি করার সময় মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করেন। আর ইমামের পিছনে সকল মুসল্লিরা এক্তেদা করেন। তেমনি বিশ্বের সকল মুসলমানরা কাবাকে কেবলা করে নামাজ আদায় করলেও সেজদাহ করে মাকামে ইবরাহীমে। অর্থাৎ আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের মাধ্যমে সেজদাহ গ্রহণ করছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত গ্রহণ করবেন। পোষ্টের সাথে মাকামে ইবরাহীমের ছবি দিলাম।
(লেখাটি সংগৃহি)