রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০

মাকামে ইবরাহীম( আঃ)

ফেরেশতারা সেজদা দিয়েছিল আদম (আ:)-কে হযরত ইয়াকুব (আ:) সপরিবারে সেজদা দিয়েছিলেন হযরত ইউসুফ (আ:)-কে আর আমরা সেজদা দিচ্ছি হযরত ইব্রাহিম (আ:)-কে।

সরাসরি আল্লাহর আনুগত্য করার কোন সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহ প্রকাশ্যে জমিনে নিজে এসে কোন আদেশ নির্দেশ দেননি যে, মানুষ সরাসরি আল্লাহর আনুগত্য করবে। আর যেহেতু আল্লাহর সরাসরি আনুগত্য করার সুযোগ নেই, সেই কারণে আল্লাহ কুরআনে বারবার হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য করো। এর অর্থ হলো, রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য করা মানেই আল্লাহর আনুগত্য করা। রাসুল (সাঃ)-এর বিরোধিতা করে মানেই আল্লাহর বিরোধিতা করা। রাসুল (সাঃ)-এর সন্তষ্টি অর্জন করা মানেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। রাসুল (সাঃ)-কে মনেপ্রাণে ভালবাসা মানেই আল্লাহকে মনেপ্রাণে ভালবাসা। রাসুল (সাঃ)-এর কাছে চাওয়া মানেই আল্লাহর কাছে চাওয়া। তেমনিভাবে রাসুল (সাঃ)-এর অসন্তুষ্টি মানেই হলো আল্লাহর অসন্তুষ্টি। যে ব্যক্তির উপর রাসুল (সাঃ) অসন্তুষ্ট, সে ব্যক্তির ইহকাল পরকাল বরবাদ।

এরপরও একশ্রেণী বলে যে, আল্লাহকে পেতে কোন মাধ্যম লাগে না বা উসিলা লাগে না। এরা চিন্তা করে দেখে না যে, আল্লাহ নিজেই তাঁর পরিচয় প্রকাশ করেছেন উসিলার মাধ্যমে অর্থাৎ নবী রাসুলগণের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর পরিচয় মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন। আর আমরা তাঁর বান্দা হয়ে বলি, আল্লাহকে পেতে কোন মাধ্যম লাগে না।

কুরআন হলো কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য জীবন-বিধান। মানুষের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সকল কর্মের নির্দেশনা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তবুও কুরআনের আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ টি। নবী রাসুলগণের সংখ্যা এক লক্ষ কিংবা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার হলে, আর প্রত্যেক নবী রাসুল সম্পর্কে যদি একটি করে আয়াত নাযিল করা হত, তাহলেই তো কুরআনের আয়াত সংখ্যা এক লক্ষ কিংবা দুই লক্ষের অধিক হয়ে যেত। অন্য প্রয়োজনীয় আয়াত সংখ্যা যোগ হলে কুরআনের কলেবর কতবড় হত? এইজন্যই কুরআনে যাকিছু আল্লাহ বলেছেন, তা অনর্থক বলেননি, মানুষের শিক্ষার জন্যই প্রত্যেকটি আয়াত আল্লাহ নাযিল করেছেন।

আল্লাহ কুরআনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি ও সকল ফেরেশতা কতৃক আদম (আঃ)-কে সেজদাহর ঘটনা কুরআনে বর্ণনা করেছেন। তেমনি হযরত ইয়াকুব (আঃ) নিজে একজন নবী হয়ে তাঁরই পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে স্ত্রী ও অন্য সন্তানদের নিয়ে সেজদাহ করেছিলেন (সূরা ইউসুফ, আয়াত-১০০)। সেই ঘটনা আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করেছেন, তা কি এমনি এমনিই বর্ণনা করেছেন?

খেয়াল করুন, ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বললেন, আমি যখন আদম (আঃ)-কে ঠিকঠাক করে তাঁর ভিতরে আমার রুহ হতে রুহ ফুঁকে দিব, তোমরা তখন আদম (আঃ)-কে সেজদাহ করবে (সূরা হিজর, আয়াত-২৯ এবং সূরা ছোয়াদ, আয়াত-৭২)। এখানে আল্লাহ আদম (সাঃ)-কে ঠিকঠাক করে রুহ হতে রুহ ফুঁকে দেওয়ার আগেই কেন ফেরেশতাদেরকে বলে রাখলেন? আল্লাহ তো আদম (আঃ)-কে ঠিকঠাক করে রুহ ফুঁকে দেওয়ার পরেই ফেরেশতাদেরকে বলতে পারতেন আদম (আঃ)-কে সেজদাহ করো, তা না করে তিনি ঠিকঠাক করে রুহ ফুঁকে দেওয়ার আগেই জানিয়ে রাখলেন যে, আমি যখন আদম (আঃ)-কে ঠিকঠাক করে আদম (আঃ)-এর ভিতরে প্রবেশ করবো, তখন তোমরা আদম (আঃ)-কে সেজদাহ করবে। আর ফেরেশতারাও দেখলেন যে, আল্লাহ স্বয়ং আদম (আঃ)-এর ভিতরে অবস্থান নিয়েছেন, তাই সকল ফেরেশতা আদম (সাঃ)-কে সেজদাহ করলেন। ফেরেশতাদের সর্দার আজাজীল যেহেতু আগুনের তৈরি, তাই তার ভিতরে অহংকার থাকায় সে আদম (আঃ)-এর আনুগত্য মেনে না নিয়ে সেজদাহ করতে অস্বীকার করে অভিশপ্ত হয়ে শয়তানে পরিণত হলো। আর এই ঘটনা কুরআনে আল্লাহ একাধিকবার বর্ণনা করেছেন যাতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধির আনুগত্য করতে অস্বীকার করে শয়তানে পরিণত না হয়। যুগে যুগে এইভাবেই প্রতিনিধির মাধ্যমেই আল্লাহ যেমন তাঁর নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন, তেমনি আল্লাহ প্রতিনিধির মাধ্যমেই মানুষের ইবাদত বন্দেগী গ্রহণ করে থাকেন। এই যেমন আল্লাহ মানুষের নামাজের সেজদাহ ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের মাধ্যমে এখনো গ্রহণ করছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত গ্রহণ করবেন।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর একজন সম্মানিত রাসুল এবং মুসলিম জাতির পিতা। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কাবা শরীফ নির্মাণ করেন। কাবা শরীফ নির্মাণের সময় তিনি যে পাথরের উপর দাড়িয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন। সেই পাথর আল্লাহর কুদরতে নরম হয়ে যায় যাতে ইব্রাহিম (আঃ)-এর কষ্ট না হয়। পাথর নরম হয়ে যাওয়ায় সেই পাথরের উপর হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ অঙ্কিত হয়ে যায়। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ অঙ্কিত পাথরকে মাকামে ইবরাহীম বলে। কাবা শরীফের কাছে যা স্বর্ণের খাঁচার মত করে ঘিরে রাখা হয়েছে। কাবা শরীফ মুসলমানদের কেবলা ঘোষিত হয়েছে। কেবলা অর্থ দিক, কাবাকে কেবলা করে নামাজ আদায় করার অর্থ হলো কাবা শরীফের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা। মুসলমানরা কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলেও সেজদাহর লক্ষ কিন্তু কাবা নয়। সকল মুসলমানরা জানুক বা না জানুক কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলেও সেজদাহর লক্ষ থাকে মাকামে ইবরাহীম। কারণ আল্লাহ কুরআনে হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা মাকামে ইবরাহীমে সেজদাহ করো (সূরা বাকারাহ, আয়াত-১২৫)। যদিও অনুবাদগুলোতে বলা হয়েছে যে, তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে সেজদাহর স্থান বানাও, কোন কোন অনুবাদে বলা হয়েছে যে, তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে নামাজের স্থান বানাও। এইকারণে কাবার ইমাম সাহেব নামাজের ইমামতি করার সময় মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করেন। আর ইমামের পিছনে সকল মুসল্লিরা এক্তেদা করেন। তেমনি বিশ্বের সকল মুসলমানরা কাবাকে কেবলা করে নামাজ আদায় করলেও সেজদাহ করে মাকামে ইবরাহীমে। অর্থাৎ আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের মাধ্যমে সেজদাহ গ্রহণ করছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত গ্রহণ করবেন। পোষ্টের সাথে মাকামে ইবরাহীমের ছবি দিলাম।
(লেখাটি সংগৃহি)  

শরিয়ত -মারফত

শরিয়ত আর মারফতের পার্থক্য!
(১) হজ্জ্ব শরিয়তের অর্থে = কাবা দর্শন করা।
(২) হজ্জ মারেফতের অর্থে = আত্মা দর্শন করা।
(৩)যাকাত শরিয়তের অর্থে = ধন বিলিয়ে দেওয়া
(৪)যাকাত মারেফতের অর্থে = নিজের সকল আমিত্ব ত্যাগ করা। গুরু কে ভক্তি করা, এবং বিভিন্ন প্রকার রয়েছে।
(৪)সালাত শরিয়তের অর্থে = প্রার্থনা করা সংযোগ করা কথা বলা,
(৫)সালাত মারেফতের অর্থে= প্রভুর সাথে পরিপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে দর্শন করে স্থায়ী সংযোগ স্থাপন করা, পরিপূর্ণ রুপ লাভ করা।

(৬)সিয়াম শরিয়তের অর্থে =সংযম হওয়া।
(৭)সিয়াম মারেফতের অর্থে =সকল মোহ হতে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিজেকে, এর মাঝে ছয় রিপু কে বুঝানো হয়েছে।
(৮)নামাজ ফার্সি শব্দ শরিয়তের অর্থে =পাচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা
(৯)নামাজ মারেফতের অর্থে =দায়েমী সালাতে সর্ব সময় হাকিকতের বিধান পালন করা ও কখনো নিজে কে বিছিন্ন না থাকা। সুরা মারিজ চেক করেন,
(১০)জিকির শরিয়তের অর্থ = শ্রষ্টাকে স্মরন করা।
(১১)জিকির মারেফতের অর্থে = আল্লাহর স্বত্বায় মিলন হওয়া পরিপূর্ণ ভাবে নিজেকে,
(১২)মুনাজাত শরিয়তের অর্থে =শুধু স্বর্গের বা বেহেস্তের লোভ করা, চুপি চুপি চাওয়া
(১৩)মুনাজাত মারফতের অর্থে =হে আল্লাহ তুমি আমার হয়ে যাও,তোমার স্বর্গ আমি চাই না। তুমি আমার হয়ে যাও পরিপূর্ণ রুপে, আমি তোমার রুপ দর্শন করে মানব মুক্তি চাই।
(১৪)শরিয়তের মূল এবাদত মানে=শুধু নামাজ রোজা হজ্জ জাকাত এবং বিভিন্ন ভাল সৎ কর্ম করা,
(১৫)মারেফতের মূল এবাদত মানে=শুধু ধ্যান মোরাকাবা মোশাহেদা জিকির দায়েমী সালাত আদায় করা,
(১৬)শরিয়তের মূল চাওয়া অর্থে = শুধু স্বর্গের স্বাধ ভোগ করার জন্য।
(১৭)মারেফতের মূল চাওয়া অর্থে=আল্লাহর প্রেমে বেহুঁশ থাকা। এবং পরিপূর্ণ মানব মুক্তি লাভ করা, এবং সয়ং প্রভু কে দর্শন লাভ করা।
(১৮)কোরবানী শরিয়তের অর্থে = পশু জবাই করা এটা শরিয়তি ভাষায় ঠিক আছে।
(১৯)কোরবানী মারেফতের অর্থে =নিজের ভিতরে একজন পশুসত্তা কে হত্যা করা। এই জন্য বিভিন্ন সুরাতে রুপোক ভাষায় বলা হয়েছে তোমরা জিহাদ কর খুজে বের করে হত্যা কর এটা নিজ দেহের মাঝে।

(২০)জিহাদ শরিয়তের অর্থে চেস্টা করা প্রতিরোধ তৈরী করা।
(২১)জিহাদ মারেফতের অর্থে = নিজের ভিতরের কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, অহংকার, মোহ ইত্যাদি কে হত্যা করা বা করতে বলা হয়েছে।
---ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন

শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০

রোজার হাকিক্বত

রোজার হাকিকতঃ
~~~~~~~~~~~~~
রোজা ফার্সি শব্দ।আরবিতে রোজাকে সিয়াম বলা হয়।যারা রোজা পালন করেন তাদের কে সায়েম বলা হয়।
"সিয়ামের " বুৎপত্তিগত অর্থ হল বিরত থাকা বা বর্জন করা এবং বর্জনকৃত অবস্থাতে স্থিত থাকা বা অটল থাকা।দুনিয়া হতে মনকে বিরত বা বারিত করে রাখার
কার্যক্রম কে বা প্রচেষ্টাকে "সিয়াম "বলে।শুধু পেটকে খালি রাখার নাম রোজা নয়, মনকে খালি রাখার নাম রোজা। অর্থাৎ সিয়াম করা অর্থ সপ্ত ইন্দ্রীয়দ্বার দিয়ে যা কিছু বিষয়বস্ত মস্তিস্কে প্রবেশ করে তার মোহ বর্জন করা।এই রুপ বর্জনের গুরুত্ব যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় অর্থাৎ উপলব্ধি করে সেই ব্যক্তিই কেবল এই মাসে সিয়াম করে। অন্য লোকেরা কেবল পানাহারের সময় সূচীর বিধান পালন করেই আত্নপ্রসাদ, লাভ করে, পরিতুষ্ট, পরিতৃপ্ত, পরিশান্ত থাকতে চায়।

কুরআনে বলা হয়েছে "ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু
কুতিবা আলাইকুমুচ্ছিইয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকুন"
২ঃ১৮৩।
অর্থঃ" হে বিশ্বাসীগন,আপনাদের উপর সিয়াম কেতাবস্থ
করা হল যেমন কেতাবস্থ করা হয়েছিল আপনাদের পুর্ববর্তিদের উপর যেন আপনারা তাকওয়া করেন"।

আল্লাহর নুরে তৈরি মানুষ স্বয়ং ই কেতাব যা পাঠ করতে হয় শুন্য হতে এবং এ কেতাবের গঠন হল মোহকামাৎ আয়াত দ্বারা যা বস্তুগুনের সমষ্টি ত্রিশে নিহিত।এ কিতাব খোলা হয়েছে আল্লাহর মৌলিক সপ্ত সিফাৎ দ্বারা।সিয়াম কেতাবস্থ করা হল মানে প্রত্যেক মানব সত্তার সাথে সিয়াম বা রোজা বিজড়িত আছে।
সিয়াম সাধনা এমনি আত্নশুদ্ধির একটি অন্যতম প্রক্রিয়া (ইবাদত পদ্ধতি) যা সকল আত্নশুদ্ধির (ইবাদতের) দরজা স্বরুপ এবং রোজাকে উপেক্ষা করে সত্যের দ্বারগ্রস্থ হওয়া যায়না।ইনসানি বা মানবাত্বার গুনাবলি বিকশিত
করার এবং তা হেফাজত করার ঢাল স্বরুপ রোজা।

বিধায় রাসুল সাঃ বলেছেন "রোজা আত্নরক্ষার ঢাল
স্বরুপ"।হাদিস কুদসিতে আল্লাহ বলেন " রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান" মানে সিয়াম সাধনায় আল্লাহর পরিচয়- বা আল্লাহকে লাভ করা যায়।
শুধু সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ
ইত্যাদি হতে বিরত থাকাই রোজা নয়,এবং ইহা কুরআন পরিপন্থী,কুরআনে এ রোজার কথা বলা হয়নি।
নফসের দুনিয়া মুখী ক্রিয়া কর্ম হতে বিরত থাকা বা
ইন্দ্রীয় পথে মস্তিষ্কে আগত বিষয় রাশিকে পরিশুদ্ধ করা বা আমিত্বের কলুষ হতে মুক্ত হয়ে মনকে আল্লাহর
প্রতি রুজু রাখাকেই সিয়াম বা রোজা বলা হয়।আর কুর আনে এটিকেই সিয়াম বালা হয়েছে যা সার্বজনিন
হিসেবে বিধৃত।সর্ব যুগেই রোজা ছিল বলে ইতিহাস
স্বাক্ষ্য দেয়।এর বাহ্যিক দিকটি হল সকাল হতে সন্ধ্যা
পর্যন্ত পানাহারাদি হতে বিরত থাকার আনুষ্ঠানিক রোজা।কিন্তু এটি আসল রোজা অবশ্যই নয়,তবে এখান হতে শুরু মানে এটি প্রতিক বা রুপক হিসেবে বিধৃত
এবং এটি ইহলোকের বিষয় যা দৈহিক স্বাস্থ্যগত
ও সামাজিকতার একটি দিক হিসেবে বিবেচিত।আসল
বুঝার জন্য বা চেনার জন্য রাসুল সাঃ প্রতীকের বা রুপকের অবতারন করেছেন, বিধায় ইসলামের
আনুষ্ঠানিকতা স্বীকৃত।কিন্তু মুল হতে বিচ্যুতহলে
আনুষ্ঠানিকতার কোন মুল্যই থাকেনা।মুল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। কুরআনের
রোজা সার্বক্ষনিক,এবং সার্বজনিন।বিধায় যারা শুধু পানাহার,স্ত্রী সম্ভোগ ইত্যাদি হতে বিরত থাকা কেই
রোজা বুঝে এবং পার্থিব বা জাগতিক বিভিন্ন ডিজাইনের, বাহারি রকমের খাদ্য বিলাশিতাকে,খাবার খাওয়াকে ইফ্তার বুঝে এরা
ওহাবী, মৌলবাদী, ধর্মভ্রষ্ট প্রতারক।এ সমস্ত নির্বোধ মৌলবাদী গন এজন্যই রমজান মাসে হোটেল রেস্তোরাগুলি বন্ধ করার জন্য মিছিল মিটিং করে থাকে।উদ্দেশ্য জোর করে তাদের রোজা রাখতে বাধ্য করবে।এ সমস্ত জঘন্য কুকির্তি মুসলমান সমাজে ছিল,আছে অন্য ধর্মে নেই।এরা চিনির বস্তা বহন কারি,
,গাধার মত,জানেনা তার পিঠে কি আছে মানে রোজার হাকিকত এরা বুঝেনি,বুঝতে চাইনি,বুঝতে দেয়না।
এরা ধর্মের ছদ্মাবরনে এক এক ডিগবাজিতে বিভিন্ন
ডিজাইনে যুগে যুগে অবস্থান করে,।বিধায় সাধারন মানুষ তাদের কে চিনতে পারেনা।মুয়াবিয়া ইয়াজিদ ও
তাদের পোষা মৌলবিগন রোজা বলতে শুধু জৈবিক
দেহের পানাহারাদি হতে বিরত থাকাকেই এবং পার্থিব
সন্ধ্যা আহারকেই ইফতার বলে থাকে।এবং তাদের অনুসারিরা বর্তমানে তাই বুঝে এবং বুঝিয়ে থাকে।
এরা নবি বংশের মাথার উপর খড়গ বা তলোয়ার ধরে।হত্যা করে তাদের কথিত মতবাদগুলি ইসলামরে নামে চালিয়েছে যা অদ্যবদি অধিকাংশ মুসলমান কাঁধে নিয়ে বেড়াচ্ছে।

হাকিকতের ইফতার হল ফাতের শব্দ হতে ইফতার
শব্দের উৎপত্তি।ফাতের অর্থ ভেংগে ফেলা,ছিড়িয়ে ফেলা,বিদির্ন করা।এটি বস্তুমোহের বেড়া ভাংগা ব্যতীত আর কিছুই নয়।যিনি সিয়ামে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মন কে মুক্ত করেছেন,মনকে পরিশুদ্ধ করেছেন, বস্তু মোহের বেড়াজাল ভেংগে দিতে স্বক্ষম হয়েছেন তার ইফতার হয়ে গেছে।খুব তাড়াতাড়ি ইফতার করার অর্থ হল খুব তাড়াতাড়ি বস্তু মোহকে
অর্থাৎ নফসে আম্মারা বা কাম,ক্রোধ,লোভ,মোহ,মদ,মাৎসর্য্য এই ষড় প্রবৃত্তিকে ভেংগে ফেলা, দুরকরা।

রমজান শব্দটি রমজুন শব্দ হতে উৎপত্তি।
রমজান মানে জ্বলে যাওয়া,বা পুড়ে যাওয়া,।কারন
,যেহেতু রমজানে সমস্ত গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়
তথা জীবাত্নার গুন খাছিয়ত পরিহার করে ইনসানিয়াত
প্রতিষ্ঠিত হয় তাই একে রমজান বলা হয়।এ মাস পার্থিব কোন মাস নয়।পার্থিব মাস রুপক বা আসলের উপমা স্বরুপ আছে।রুপকের পর্দা ভেদ করলে আসলের হাকিকত পাওয়া যাবে।কাজেই রমজান মাসে কুরআন নাজিল হয় -এ মাস চিরন্তন শ্বাশ্বত কালের মাস,যা অখন্ড কালে বিরাজিত।পার্থিব বা জাগতিক মাস কখন ও পবিত্র অপবিত্র হতে পারেনা,

যদি না মানুষের কোন স্মৃতির সংগে বিজড়িত থাকে।যেহেতু কুরআনের ভাষা রুপক,সেহেতু রুপকের আবরন উন্মোচন করলে হাকিকত পাওয়া যাবে।

তাই
পবিত্র কোন বস্তকে নির্দেশ করার জন্য জাগতিক
মাসগুলি কে রুপকে এনে পবিত্র বলা হয়েছে।আমরা
সকল মানুষ রোজার হাকিকত জেনে রোজা পালন
করে, রমজানে লামউতে পৌঁছার সাধনা করে জীবন
কে কুরআনের আলো কে প্রস্ফুটিত করার জন্য দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ হই।আমীন।

সুলতান মুরাদ এর কাহিনী

পতিতা, শরাব আর সুলতান মুরাদ
-কাহিনিটি ইস্তাম্বুলের ইউলিয়া নলিঞ্চি মিমি হতে সংগৃহীত 

অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান, সুলতান মুরাদ প্রায়শয়ই ছদ্মবেশে তার রাজ্যের লোকেদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে বের হতেন। এক সন্ধ্যায়, তিনি নিজে বিশেষ ভালো বোধ করছিলেন না বিধায় নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধানকে তলব করলেন তাঁর অভিযানের সঙ্গী হতে। ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা এক জনবহুল জায়গায় এসে দেখলেন, এক লোক রাস্তায় পড়ে আছে।

সুলতান লোকটির গায়ে লাঠি দিয়ে খোঁচা মেরে বুঝতে পারলেন লোকটি মৃত, অথচ চারপাশে মানুষে গিজগিজ করলেও কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না বিষয়টি নিয়ে।
সুলতান আশেপাশের লোকজনদের ডাকলেন। তারা এগিয়ে এলো, কিন্তু ছদ্মবেশে থাকায় কেউই চিনতে পারলো না নিজেদের শাসককে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, "লোকটা মরে পড়ে আছে, তবুও কেউ এগিয়ে আসছে না কেন? লোকটির পরিবারের কেউ নেই?"
"আরে এতো একটা ব্যাভিচারী, মদ্যপ কুলাঙ্গার!" লোকগুলো বলে উঠলো।

"যাই হোক, সে তো আমাদের নবী (সাঃ)-এর উম্মাহরই একজন, নাকি? এখন আমাকে তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে সাহায্য করুন," সুলতান বললেন। তারা সুলতানের সাথে মৃত লোকটিকে তার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসলো, এরপর চলে গেলো। সুলতান আর তার সহযোগী সেই প্রধান থেকে গেলেন।

লোকটির স্ত্রী মৃতদেহটিকে দেখা মাত্র কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি বলতে লাগলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার প্রতি সদয় থাকবেন! ও আল্লাহর বান্দা, আমি তো দেখেছি আপনি সবসময় কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন!"   
সুলতান মহিলাটির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "সবার থেকে যা কিছু শুনলাম, এরপরও সে নিষ্ঠাবান কীভাবে হয়? যেখানে দুশ্চরিত্রের জন্য সে এতোটাই ঘৃণিত যে তার মৃত্যু নিয়েও কারো মাথাব্যথা ছিল না?"

লোকটির স্ত্রী জবাব দিলেন, "আমি জানতাম এমনই হবে। তিনি প্রতি রাতে সরাইখানায় যেতেন ও পয়সায় যতোটকু সম্ভব হতো, ওতোটুকু শরাব কিনে ঘরে নিয়ে আসতেন। এনেই সেগুলো নর্দমায় ফেলে দিতেন। তিনি বলতেন, "আমি আজ মুসলিমদের অল্পখানি বাঁচিয়ে দিলাম।" তারপর তিনি কোনো পতিতাকে কিছু টাকা দিয়ে ঘরে নিয়ে আসতেন এবং ভোর পর্যন্ত তাকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। তিনি বলতেন, "আজ আমি এক তরুণীকে ও আমাদেরই ইমানদার কোনো যুবককে পাপকাজে জড়িয়ে পড়া থেকে বাঁচালাম।" 
লোকেরা তাঁকে শরাব কিনতে ও পতিতালয়ে যেতে দেখতো, এবং এই কারণেই তারা তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের কথা বলতে শুরু করে। আমি একদিন তাঁকে বললাম, "আপনি মারা গেলে না কেউ গোসল করানোর থাকবে, না কেউ জানাজা পড়তে আসবে, কবর দেওয়ার জন্যও তো কেউ থাকবে না।"
তিনি হেসে বলেছিলেন, "ভয় পেয়ো না, ইমানদারদের সুলতান আর সকল ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই আমার জানাজায় উপস্থিত থাকবেন।" 

সুলতান এই কথা শুনে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি বললেন, "আল্লাহর কসম! তিনি ঠিকই বলেছিলেন। কারণ আমিই সুলতান মুরাদ। আগামীকাল আমরা তাঁকে গোসল করিয়ে, জানাজা পড়ে তাঁকে কবর দিয়ে আসবো।" এবং এমনই হলো যে, স্বয়ং সুলতান মুরাদ, রাজ্যের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, সকল ধর্মপ্রাণ ও এলাকার জনসাধারণ সবাইই তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করলো।

আমরা যা দেখি আর লোকমুখে যা শুনি, তা থেকেই মানুষকে বিচার করার চেষ্টা করি। অথচ আমরা জানিও না তাদের মনের অন্তস্থলে কী চলে, যার কথা কেবলমাত্র বান্দা আর তার রবই জানেন।

"হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃতভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু।"    (কুরআন ৪৯ঃ১২)

শফি বাবার কালাম

****হুয়ার রহমান****
*গাউছে জামান মাইজভাণ্ডারী সৈয়দ শফিউল বশর আল্ হাচানী আল্ মাইজভাণ্ডারী বাবাজানের পবিত্র কালাম শরিফ*

বন্দেগী জানিনা বলে বন্দা কি গো বলবে না!!
ডাকিতে জানিনা বলে সারা কি গো দেবেনা !!
জানিনা বলে বাবাধন তোমার প্রেমের সাধন ভজন,
নই বলে তর মনের মতন কোলে কি নেবে না !!!
অকাজ অবোধ বলে ফেলবে কি গো পায়ে ঠেলে,
সন্তান নিস্কর্মা হলে বাবায় কি গো দেখেনা ৷৷
তোমার প্রেমের রীতি-নীতি জানিনা বলে মিনতি,
তুমি দূরে থেকে থেকে ধরা কি গো দেবেনা ৷৷
"শফি" তোমার অন্ধ ছেলে কিছুই জানিনা বলে,
বাবা যদি নিদয় হবে আপন তো আর দেখিনা!!