শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০

সুলতান মুরাদ এর কাহিনী

পতিতা, শরাব আর সুলতান মুরাদ
-কাহিনিটি ইস্তাম্বুলের ইউলিয়া নলিঞ্চি মিমি হতে সংগৃহীত 

অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান, সুলতান মুরাদ প্রায়শয়ই ছদ্মবেশে তার রাজ্যের লোকেদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে বের হতেন। এক সন্ধ্যায়, তিনি নিজে বিশেষ ভালো বোধ করছিলেন না বিধায় নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধানকে তলব করলেন তাঁর অভিযানের সঙ্গী হতে। ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা এক জনবহুল জায়গায় এসে দেখলেন, এক লোক রাস্তায় পড়ে আছে।

সুলতান লোকটির গায়ে লাঠি দিয়ে খোঁচা মেরে বুঝতে পারলেন লোকটি মৃত, অথচ চারপাশে মানুষে গিজগিজ করলেও কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না বিষয়টি নিয়ে।
সুলতান আশেপাশের লোকজনদের ডাকলেন। তারা এগিয়ে এলো, কিন্তু ছদ্মবেশে থাকায় কেউই চিনতে পারলো না নিজেদের শাসককে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, "লোকটা মরে পড়ে আছে, তবুও কেউ এগিয়ে আসছে না কেন? লোকটির পরিবারের কেউ নেই?"
"আরে এতো একটা ব্যাভিচারী, মদ্যপ কুলাঙ্গার!" লোকগুলো বলে উঠলো।

"যাই হোক, সে তো আমাদের নবী (সাঃ)-এর উম্মাহরই একজন, নাকি? এখন আমাকে তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে সাহায্য করুন," সুলতান বললেন। তারা সুলতানের সাথে মৃত লোকটিকে তার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসলো, এরপর চলে গেলো। সুলতান আর তার সহযোগী সেই প্রধান থেকে গেলেন।

লোকটির স্ত্রী মৃতদেহটিকে দেখা মাত্র কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি বলতে লাগলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার প্রতি সদয় থাকবেন! ও আল্লাহর বান্দা, আমি তো দেখেছি আপনি সবসময় কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন!"   
সুলতান মহিলাটির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "সবার থেকে যা কিছু শুনলাম, এরপরও সে নিষ্ঠাবান কীভাবে হয়? যেখানে দুশ্চরিত্রের জন্য সে এতোটাই ঘৃণিত যে তার মৃত্যু নিয়েও কারো মাথাব্যথা ছিল না?"

লোকটির স্ত্রী জবাব দিলেন, "আমি জানতাম এমনই হবে। তিনি প্রতি রাতে সরাইখানায় যেতেন ও পয়সায় যতোটকু সম্ভব হতো, ওতোটুকু শরাব কিনে ঘরে নিয়ে আসতেন। এনেই সেগুলো নর্দমায় ফেলে দিতেন। তিনি বলতেন, "আমি আজ মুসলিমদের অল্পখানি বাঁচিয়ে দিলাম।" তারপর তিনি কোনো পতিতাকে কিছু টাকা দিয়ে ঘরে নিয়ে আসতেন এবং ভোর পর্যন্ত তাকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। তিনি বলতেন, "আজ আমি এক তরুণীকে ও আমাদেরই ইমানদার কোনো যুবককে পাপকাজে জড়িয়ে পড়া থেকে বাঁচালাম।" 
লোকেরা তাঁকে শরাব কিনতে ও পতিতালয়ে যেতে দেখতো, এবং এই কারণেই তারা তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের কথা বলতে শুরু করে। আমি একদিন তাঁকে বললাম, "আপনি মারা গেলে না কেউ গোসল করানোর থাকবে, না কেউ জানাজা পড়তে আসবে, কবর দেওয়ার জন্যও তো কেউ থাকবে না।"
তিনি হেসে বলেছিলেন, "ভয় পেয়ো না, ইমানদারদের সুলতান আর সকল ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই আমার জানাজায় উপস্থিত থাকবেন।" 

সুলতান এই কথা শুনে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি বললেন, "আল্লাহর কসম! তিনি ঠিকই বলেছিলেন। কারণ আমিই সুলতান মুরাদ। আগামীকাল আমরা তাঁকে গোসল করিয়ে, জানাজা পড়ে তাঁকে কবর দিয়ে আসবো।" এবং এমনই হলো যে, স্বয়ং সুলতান মুরাদ, রাজ্যের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, সকল ধর্মপ্রাণ ও এলাকার জনসাধারণ সবাইই তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করলো।

আমরা যা দেখি আর লোকমুখে যা শুনি, তা থেকেই মানুষকে বিচার করার চেষ্টা করি। অথচ আমরা জানিও না তাদের মনের অন্তস্থলে কী চলে, যার কথা কেবলমাত্র বান্দা আর তার রবই জানেন।

"হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃতভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু।"    (কুরআন ৪৯ঃ১২)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন