#তাজিম_সেজদা (পর্ব—১)
ছিলনা সৃষ্টির আদিতে কোন চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, আরশ কুরশী, লৌহ, কলম, জ্বিন-ইনসান, গাছপালা, তরুলতা, পশুপাখি ইত্যাদি। মহা শূন্যময় নিথর নিস্তব্ধ ছিল এ বিশ্ব চরাচর। কারণ শূন্য অবস্থায় মহাশূন্যের গর্ভে গোপন ছিলেন আল্লাহতায়ালা। আপন হতে আপনিই প্রকাশ হলো ইরাদা, পঞ্চ আলম সমষ্টি করে। তিনি প্রকাশিবেন, বিকাশিবেন, তাঁর গোপন প্রেম ব্যক্ত করবেন, খেলবেন ইশকের খেলা তথা আশেক ও মাশুকের খেলা, নিবেন আপন পরিচয়, দেখবেন স্বীয় গোপন মোহনীয় জ্যোতির্ময় রূপ। তাই আপনা হতেই আপনি প্রকাশ করলেন আহামদী নূর, এ সৃষ্টি রূপান্তর সৃষ্টি, প্রভেদ কেবল দু’টি অবস্থা। এ নূর সৃষ্টির পর আল্লাহপাক বলেনঃ “লাওলাকা লামা খালাকতু আফলাক” অর্থাৎ আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কিছুই সৃষ্টি করতাম না। আর হযরত রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “আনা মিন নূরীল্লাহ ওয়াল খালকো কুল্লুহিম মিন নূরী” অর্থাৎ আমি আল্লাহর নূর হতে এবং সমস্ত সৃষ্টি আমার নুর হতে সৃষ্টি। এ সৃষ্টির বিবর্তনের ধারায় “আহাদ” এর সাথে “মীম” সংযুক্ত হয়ে হলো “আহামদ” তথা মীমের পর্দায় “আহাদ” লুক্কায়িত হলো। হযরত রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “আনা আহমাদুল বেলামীম” অর্থাৎ আমি মীম ছাড়া আহামদ তথা তিনিই আহাদ এবং তিনিই আহামদ। এ “আহামদ” নযুলের ধারায় তথা প্রকাশিত ধারায় দ্বিতীয়বার মীমের পর্দায় আবৃত হয়ে হলো “মোহাম্মদ” তথা “আহাদ” স্থিত অবস্থা হতে উপস্থিত হলো মোহাম্মদ (সাঃ) তথা আহাদ হতে মোহাম্মদ পর্যন্ত “মীমের” পর্দায় আবৃত এবং মীমের পর্দায় আবৃত অবস্থাটি রূপান্তর প্রকাশ [খালাক] যা মোহাম্মদ (সাঃ) রূপে প্রস্ফুটিত হয়েছে ধরায়। এ জন্যই কোরআনে আলিফ-লাম-মীম এ তিনটি হরফে মুকাত্তায়াত এর মধ্যে “মীমের” উপর তাশদীদ দেখানো হয়েছে- যার দ্বারা রূপান্তর সৃষ্টির ধারাটি বিকাশমান বুঝাচ্ছে। আল্লাহ পাক তাঁর রূপান্তর সৃষ্টি মঞ্জিলে দাখিল [আলিফ-দাল-মীম] হয়ে “হামদ” [প্রশংসা] করছে এবং এ অবস্থায় “আহামদ” তাঁর আদি অবস্থার অভিমুখে লক্ষ্য করে প্রশংসা করছে ও তাঁর স্রষ্টা বলে স্বীকার করে নিয়ে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করছে [বায়াত স্বীকার করছে]। শুরু হল আহাদ ও আহামদের মাঝে আশেক মাশুকের খেলা তথা গুরু-শিষ্যের খেলা এখানেই হলো বায়াতের আদি ইতিহাস। আশেক মাশুকের খেলা কি করে প্রকাশ করবেন তারই পরিকল্পনা প্রকাশ হলো তার ইরাদার মাধ্যমে। সৃষ্টি করলেন জামাদাত, নাবাদাত, হায়ানাত তথা আরশ, কুরশী লৌহ, কলম, গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য, গাছপালা, তরু-লতা, পশু-পাখি, জ্বিন-ফেরেশতা ইত্যাদি। কিন্তু কারো মাঝেই গোপন ভেদ রহস্য প্রকাশ হলো না, প্রজ্বলিত হলো না স্রষ্টার পরিচয় তাই নিহিত সেই প্রেম রহস্য। আল্লাহ পাক বেচ্যান, বেকারার হয়ে আঠারো হাজার মাখলুকাতের সমষ্টি করে এক রহস্যময় সৃষ্টির ইরাদা করলেন এবং সেই রহস্যময় সৃষ্টিই হল মানুষ- যা আল্লাহর ইরাদা ও গোপন প্রেমের মূর্তরূপ। আল্লাহপাক স্বীয় পরিচয় ও প্রেম বিকাশিত করার জন্য সৃষ্টি করলেন স্বীয় সিরাত ও সুরতের সমষ্টি করে এ মানুষকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন