বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০

পরকাল!

পরকাল কি?
হাশরের মাঠ কি?
পুনরুত্থান কি?

মা আয়শা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, " হাশরের মাঠে প্রত্যেকেই উলঙ্গ হয়ে, নাঙা পায়ে (খালি পায়ে), খাতনাবিহিন অবস্থায় উঠবে।"  সম্ভবত এই হাদীসের মর্ম বুঝতে না পেরে হুজুরগণ হাশরের মাঠের অশ্লীল ও কাল্পনিক বর্ণনা তৈরি করেছেন (হাশরের মাঠে নবী রাসুলসহ সকলেই (পিতা মাতার সামনে পুত্র কন্যা, পুত্র কন্যার সামনে পিতা মাতা) নেংটা হয়ে সমবেত হবে)। এমন অশ্লীলতাকে ঢাকার জন্য এরা গোঁজামিল দিয়ে বলে, সকলে আপন আপন হিসাব নিয়ে এত পেরেশান থাকবে যে, কেউ কারো দিকে তাকাবে না। সকলে উপরের দিকে তাকিয়ে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করবে। আসল কথা হলো, যদি হাশরের মাঠে মানুষজন আল্লাহর ভয়ে এতই ভিত থাকবে যে, তারা আপন পিতা মাতাকে চিনবে না বা পুত্র কন্যাদের চিনবে না, তাহলে তো সকলে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি না করে আল্লাহু আল্লাহু ডাকার কথা। অথচ ধর্ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকা হুজুরদের কারণে হাশরের বর্ণনা এমন অশ্লীল ও গোঁজামিল দিয়ে প্রচারিত হয়ে সমাজে খুব শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সমাজে হুজুররা বলেন, হাশরের মাঠে একে অপরকে চিনবে না বলেই একে অপরের সামনে উলঙ্গতায় লজ্জিত হবে না। কুরআনে আল্লাহ কিন্তু ভিন্ন কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেন, হাশরের মাঠে একে অপরকে চিনবে (সূরা ইউনুস, আয়াত-৪৫)। অথচ হুজুররা বলেন কুরআন বিরোধী কথা।

হাশর বিষয়ে আলোচনার পূর্বে বেহেশত ও দোযখ নিয়ে একটু আলোচনা করলে বুঝতে সুবিধা হবে-

সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এক একজন বেহেশতবাসীকে এত বড় বড় বেহেশত প্রদান করা হবে যে, বেহেশতের এক প্রান্ত হতে খুব দ্রুতগতিতে দৌড়ালেও অপর প্রান্তে পৌছাতে কয়েক মাস লেগে যাবে। আবার দোযখের আগুন সম্পর্কে বলা হয় যে, পৃথিবীর আগুনের তাপের সত্তরগুন বেশি তাপ হবে দোযখের আগুনের। পৃথিবীর আগুনে কেউ যদি হাত রেখে কারো সাথে কথা বলতে চায়, সে কি পারবে? আগুনের তাপে যখন তার হাত পুড়বে সে তো চিৎকার করে হাত বাঁচাতে ব্যস্ত থাকবে। কারো সাথে আলোচনা করার প্রশ্নই আসে না। কিন্ত কুরআনে একাধিক আয়াতে আল্লাহ বলেন, বেহেশত ও দোযখীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। যেমন, দোযখীরা বেহেশতীদের বলবে, আমাদের দিকে কিছু পানি নিক্ষেপ করো, তোমাদের রুজি হতে আমাদের কিছু দাও। বেহেশতীরা বলবে, কাফেরদের জন্য এগুলো হারাম করা হয়েছে (সূরা আরাফ, আয়াত-৫০)। এখানে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, বেহেশতী ও দোযখীরা পাশাপাশি অবস্থান করবে আর তা না হলে, তাদের মধ্যে আলোচনা সম্ভব নয়। আর পৃথিবীর আগুনের চেয়ে সত্তরগুন বেশি তাপযুক্ত আগুনে পুড়তে থাকা কোন মানুষের পক্ষে কোনকিছু আবদার করা তো অসম্ভব। আসলে বেহেশতের সুখ ও দোযখের আগুনের রূপক বর্ণনা বুঝতে না পেরে বেহেশত ও দোযখের এমন কাহিনী প্রচার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরো বলা যায়, দোযখীদের কঠোর আযাব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, " সর্বক্ষণ তারা তাতে থাকবে। তাদের আযাব হালকাও হবে না। কিন্তু যারা অত:পর তওবা করে নেবে এবং সৎকাজ করবে তারা ব্যতীত, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু (সূরা ইমরান, আয়াত-৮৯, ৯০)। এই আয়াত দুটির প্রথম আয়াতে দোযখীরা তাদের কর্মের শাস্তিসরূপ দোযখে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে যা হালকা করা হবে না। কিন্তু দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেন, যারা তওবা করবে এবং সৎকাজ করবে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। অর্থাৎ তারা এমন জায়গায় শাস্তি ভোগ করবে সেখানে তারা তওবা করতে পারবে সৎকাজও করতে পারবে। আর সেই জায়গাটা দুনিয়া ছাড়া আর কোথায় হবে?

সুফি সাধকগণ, হাশর বিষয়ে মা আয়শা বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যা দেন এভাবে-

হাশরে পুনরায় সকলকে উলঙ্গ করে নাঙা পায়ে খাতনাবিহিন অবস্থায় উঠানো হবে বলতে মৃত্যুর পরে পুনরায় মায়ের গর্ভ হতে দুনিয়াতে আসাকে বুঝানো হয়েছে। প্রত্যেক নবী রাসুল এবং সকল মানুষ মায়ের গর্ভ হতে উলঙ্গ হয়ে, খালিপায়ে, খাতনা ছাড়াই জন্ম নেয়। আর শিশুদের উলঙ্গতা কারো জন্য লজ্জার কারণ হয় না।

কুরআন একটি আধ্যাত্মিক কিতাব। কুরআনে আছে রূপক আয়াত, উপমার আয়াত, ইঙ্গিতময় আয়াত ও উদাহরণ দেওয়া আয়াত। আমাদের ধর্ম প্রচারকদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান না থাকায় কুরআনে বলা আল্লাহর কথার মর্ম বুঝতে না পেরে এমন গোঁজামিল ব্যাখ্যাকে কুরআনের কথা বলে প্রচার করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-

"কেমন করে তোমরা কুফরী করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। অত:পর তিনিই তোমাদের প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অত:পর তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে (বাকারাহ, আয়াত-২৮)।" এটা তো একটা বাচ্চাও বুঝবে যে, যে আত্মাটা একবারও দুনিয়াতে আসেনি, সেই আত্মার মৃত্যু হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আবার মৃত্যু না হলে পুনরায় জীবনদানের কথা আসবে না। এই আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন, আবার মৃত্যু দিব অর্থাৎ সেই আত্মাগুলির আগেও মৃত্যু হয়েছে। পুনরায় জীবন দান করবেন অর্থাৎ এদের ইতিপূর্বে জীবনদান দেওয়া হয়েছিল। আসল কথা, মানুষ জন্ম নিচ্ছে আবার মৃত্যু বরণ করছে আবার জন্ম নিচ্ছে। আল্লাহ কয়েকধাপে কথাগুলো বললেও জন্মচক্র এই কয়েকধাপে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অনন্ত কাল ধরে মানুষ কর্মফল ভোগ করতে দুনিয়াতে আসতে থাকবে যতক্ষণ না নিজে কর্ম করে আল্লাহতে বিলীন হতে না পারে। আর এটাকেই বলে মুক্তি অর্থাৎ জন্মচক্র হতে মুক্তি লাভ করা।

"প্রত্যেকের জন্য তাদের কর্মফল অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর রয়েছে, যাতে আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেন (সূরা আহক্বাফ, আয়াত-১৯)।"

"অত:পর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে, অত্যন্ত সহজভাবেই তার হিসাব-নিকাশ করা হবে আর সে তার পরিবার পরিজনের কাছে আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে (সূরা ইনশিকাক, আয়াত-৭, ৮, ৯)।" এটা তো আর বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না যে, দুনিয়াতে থাকা পরিবার পরিজনের কাছেই সে আনন্দিত হয়ে ফিরবে।

"অবশ্যই তোমরা এক স্তর হতে অন্য স্তরে আরোহণ করবে (সূরা ইনশিকাক, আয়াত-১৮)।" দুনিয়ায় কর্ম অনুযায়ী আত্মার প্রমোশন ও ডিমোশনের কথা বলা হয়েছে।

কর্মফল ভোগ করতে মানুষকে আবার দুনিয়াতে আসতে হবে। আর কুরআনেই একথা বলা হয়েছে। যদি পুনর্জন্মের বিধান না থাকত, তাহলে সকল নবী রাসুলগণ আল্লাহর সৃষ্টির বিধান সম্পর্কে জানার পরেও এমন বিধান বিরোধী হয়ে আখেরি নবীর উম্মত হওয়ার জন্য দোয়া করতেন না। আর রাসুল (সা:) নিজেই বলেছেন, " আমি প্রত্যেক যুগে আদম সন্তানদের মাঝে সম্ভ্রান্ত বংশে জন্মগ্রহণ করিয়া আসিতেছি, অবশেষে আমি ঐ যুগে জন্মগ্রহণ করেছি, বর্তমানে আমি যে জামানায় আছি (বোখারী শরীফ)।

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায়!

আমি মৃত্যুকে অনেক ভয় পাই, মৃত্যু থেকে বাঁচার কি কোন উপায় আছে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
 তোমার মৃত্যু সেইদিন হয়ে গেছে যেদিন তুমি জন্ম গ্রহণ করেছো, এখন এর থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। যেদিন জন্ম নিয়েছো সেইদিন থেকে মৃত্যুর যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। প্রথম কদম যখন উঠিয়েছো তখন দ্বিতীয় কদম উঠাতে হবেই, যেমন ধনুক থেকে তীর বের হয়ে গেছে এখন তীরকে রুখবে কিভাবে? যখন জন্ম হয়েছে তখন মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই।

যেদিন তুমি এই বিষয়টি বুঝতে পারবে যে মৃত্যু হবেই সুনিশ্চিতভাবে আর অন্য সবকিছু অনিশ্চিত শুধু মৃত্যু সুনিশ্চিত, সেইদিন ভয় সমাপ্ত হয়ে যাবে; যা হবে তার জন্য কিসের ভয়? তুমি যে আশঙ্কা করছো দুর্ঘটনার প্রথমেই সেই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে তোমার ভিতরে, শুধু তোমার কাছে আসার বাকি আছে। সেদিন তোমার মৃত্যু হয়ে গেছে যেদিন তুমি জন্ম নিয়েছো, যেদিন থেকে তুমি শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করেছো সেইদিন শ্বাস প্রশ্বাস বের হওয়ার উপায় শুরু হয়ে গেছে। এখন এই শ্বাস প্রশ্বাস যে কোনদিন বের হয়ে চলে যাবে, তুমি সব সময়ের জন্য থাকতে পারবে না।

এর জন্য এই ভয়কে বুঝার চেষ্টা করো, বাঁচার আশা করিও না কারণ কেউ বাঁচতে পারেনি। কত লোকজন কত উপায় বের করেছে বাঁচার জন্য। নাদের শাহ কত বড় যোদ্ধা ছিলো, কত ভয়ংকর ছিলো হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে কিন্তু নিজের মৃত্যুকে ভয় পেত। কাহিনীতে আছে এক বেশ্যা নাদের শাহের শিবিরে(ছাউনি, তাঁবু) নাচার জন্য এসেছিলো, আর যখন চলে যাওয়ার সময় হলো তখন রাত অনেক হয়ে গিয়ে ছিলো ভয় পেতে লাগলো তখন নাদের শাহকে বললো অনেক অন্ধকার হয়ে গেছে আর আমার গ্রাম অনেক দূরে আমি কিভাবে যাবো এখন?

নাদের শাহ বললো: তুমি কোন চিন্তা করো না, তুমি কি কোন সাধারণ দরবারে নাচতে এসেছো। নাদের শাহ তার সৈনিকদের বললো রাস্তার সামনে যত গ্রাম আছে সব গুলোতে আগুন লাগিয়ে দাও যেন এই বেশ্যা তার গ্রামে আলোতে যেতে পারে। পাঁচ থেকে সাতটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ছিলো গ্রামে ঘুমন্ত লোকজন আগুনে পুড়ে মারা গেছে, কিন্তু রাস্তা আলোকিত করে দিয়ে ছিলো।

অন্যের মৃত্যু তার জন্য খেলা ছিল কিন্তু নিজের মৃত্যুকে অনেক ভয় পেত, মৃত্যুকে এত ভয় পেত যে রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারতো না; আর এই ভয়েই তার মৃত্যু হয়ে ছিলো। যখন হিন্দুস্তান থেকে ফিরে আসছিলো, এক রাতে একটি তাঁবুর ভিতরে ঘুমিয়ে ছিলো, রাত গভীর ছিল তাঁবুতে একজন ডাকাত ঢুকে গেলো।

ডাকাত কারো হত্যা করার জন্য উৎসুক ছিল না, তার উৎসুক ছিল কিছু জিনিস চুরি করার। কিন্তু অন্ধকারে ডাকাতের উপস্থিতি ও আওয়াজে নাদের শাহ ভয় পেয়ে গেল মনে করলো অনেক শত্রু প্রবেশ করেছে দৌড়িয়ে বাহিরে আসলো কিন্তু তাঁবুর দড়িতে পা আটকিয়ে গেলো; নাদের শাহ মনে করলো কেউ তার পা ধরে ফেলেছে, সেই ভয়ে তার হার্টবিট বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিলো।কেউ তাকে ধরেনি, কেউ তাকে মারেনি শুধু পা আটকিয়ে গিয়েছিলো তাঁবুর দড়ির সাথে এতেই সে মনে করে ছিলো তার জীবন শেষ, সেই ভয়েই মারা গিয়ে ছিল।

মানুষ বাঁচার জন্য যত উপায় করে? মনোবিজ্ঞানী বলেন: অন্যকে মারার উৎসুক তাদের মধ্যে হয় যারা নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক বেশি চেষ্টা করে। যাদের এই খেয়াল হয় আমরা তো জীবন বানাতে পারবো না কিন্তু মানুষকে হত্যা তো করতে পারবো, দেখ আমরা কত মানুষ হত্যা করেছি? অন্যকে হত্যা করলে আমাদের মনে হতে থাকে আমরা মৃত্যুর মালিক হয়ে গিয়েছি, এটাতে এক ধরনের ভ্রান্তির জন্ম হয়; হয়তবা মৃত্যু আমাদের ক্ষমা করে দিবে। না ধন সম্পদ দিয়ে কাজ হবে, না পদ পদবী দিয়ে কাজ হবে, না শক্তি দিয়ে কাজ হবে,কোন উপায় নেই মৃত্যু থেকে বাঁচার।

তুমি জিজ্ঞাসা করেছো: আমি মৃত্যুকে অনেক ভয় পাই, এর থেকে কি বাঁচার কোন উপায় আছে?

যতই বাঁচার উপায় খুঁজতে থাকবে ততই ভয় আরো বাড়তে থাকবে, তুমি বাঁচার উপায় খুঁজবে আর প্রতিদিন মৃত্যু তোমার কাছে আসতে থাকবে কারণ তুমি প্রতিদিন বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছো। মৃত্যুকে স্বীকার করে নাও, মৃত্যু থেকে বাঁচার কথা চিন্তা করো না আর; যা হওয়ার তা হবেই, সেটাকে তুমি অন্তরতম থেকে স্বীকার করে নাও তাহলে আর ভয় থাকবে না।

মৃত্যু থেকে বাঁচা সম্ভব নয়, কিন্তু মৃত্যুর ভয় থেকে বাঁচা সম্ভব। মৃত্যু হবেই কিন্তু ভয় আবশ্যক নয়, ভয়কে তুমি জন্ম দিয়েছো। বৃক্ষ তো ভয়ভীত নয়, তাদেরও মৃত্যু হবে, কিন্তু তাদের কাছে চিন্তাভাবনার মন নেই, বুদ্ধি নেই। পশুরা তো কোন চিন্তাভাবনা করছে না? তাদেরও মৃত্যু হবে।

মৃত্যু স্বাভাবিক বিষয়, বৃক্ষ, পশু, পাখি, মানুষ সবার মৃত্যু হবে, কিন্তু শুধু মানুষই ভয়ভীত! কারণ মানুষের চিন্তাভাবনা যদি কোনভাবে বাঁচার উপায় বের করা যায়। তোমার বাঁচার আশা আকাঙ্খার কারণে ভয়ের জন্ম হচ্ছে, মৃত্যুকে স্বীকার করে নাও।

আর তোমার সমস্যা কোথায়? জন্মের আগে তুমি ছিলে না, কোন সমস্যা ছিল? কখনো একবার এভাবে চিন্তা করে দেখো? জন্মের আগে তুমি ছিলে না, কোন সমস্যা ছিল? মৃত্যুর পরে আবার তুমি থাকবে না, কোথায় সমস্যা? যেভাবে জন্মের আগে ছিলে মৃত্যুর পর আবার তেমনি হয়ে যাবে, জন্মের আগে তোমার অবস্থা যেমন ছিল মৃত্যুর পরে আবার তেমন অবস্থায় ফিরে যাবে।

যতক্ষণ তুমি প্রথম শ্বাস প্রশ্বাস নেওনি, সেই সময়ের কথা তোমার মনে আছে? তখন কি তোমার কোন পেরেশানি বা সমস্যা ছিল? এভাবে যখন তোমার শেষ শ্বাস প্রশ্বাস চলে যাবে, তারপর কিসের পেরেশানি, কিসের সমস্যা?

সক্রেটিসের মৃত্যুর সময় কেউ জিজ্ঞাসা করলো আপনি কি ভয় পাচ্ছেন না? সক্রেটিস(আঃ) বললো: ভয়ের কি আছে, যেমন আস্তিক বলে আত্মা অমর তাহলে ভয়ের কিছু নেই, আত্মা অমর ভয় পাবো কেন? আবার যেমন নাস্তিক বলে আত্মা মরে যাবে, তাহলেও কোন সমস্যা নেই; যে ভয় পাবে সে তো মারা যাবে, তাহলে ভয় পাবেটা কে? কিছুই বাঁচবে না, না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশি।

সক্রেটিস(আঃ) বললো: দুটো অবস্থা ঠিক আছে, দুইজনের মধ্যে থেকে তো একজন সঠিক হবে; এছাড়া আর কোন উপায় নেই। হয় আস্তিক ঠিক, তা না হলে নাস্তিক ঠিক। যদি আস্তিক ঠিক হয় তাহলে আত্মা অমর, কোন চিন্তার বিষয় নয়। আর যদি নাস্তিক ঠিক হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই, কিসের চিন্তা? কে চিন্তা করবে। সক্রেটিস(আঃ) বললো: এর জন্য আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত যা হবে ঠিক হবে।

 তুমি বাঁচার চেষ্টা করো না, মৃত্যু হবেই। কিন্তু আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই, তোমার মৃত্যু হবে না, তোমার তো জন্মই হয়নি তাহলে মৃত্যু কিভাবে হবে? শরীরের জন্ম হয়েছে, শরীরের মৃ্ত্যু হবে। তোমার চৈতন্যের জন্ম হয়নি, আর অমরত্ব তার ধর্ম(যে মরে না, চিরজীবী)।

তোমার সমস্যা আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি তোমার শরীরকে আপন মনে করছো। মৃত্যু আসল প্রশ্ন নয়, আসল প্রশ্ন হলো শরীরকে মনে করছো এটাই আমি। যেমন কেউ চিল্লাচিল্লিকে মনে করছে শান্তি। এমনি কথাবার্তা বলছে জীবনের, মৃতকে তুমি জীবন মনে করছ, এর জন্য সমস্যা হচ্ছে। মৃত তো মৃতই, এখনো মৃত এবং প্রতিদিন মরছে; তুমি খেয়াল করে দেখনি। না কি তুমি খেয়াল করে দেখতে চাচ্ছো না? ভয় পাচ্ছো? তোমার মাথায় যে চুল বড় হচ্ছে, চেহারায় যে দাঁড়ি(চুল) বড় হচ্ছে; হাতের নক বড় হচ্ছে, তুমি কি কখনো লক্ষ্য করে দেখেছো এগুলো কাটার সময় তুমি কেন ব্যাথা পাও না?

এগুলো কিন্তু তোমার শরীরের জীবিত অংশ নয়, মৃত অংশ যা শরীর বাহিরে ফেলে দিচ্ছে। প্রতিদিন মলমূত্র বাহিরে ফেলছো এগুলো শরীরের সব মৃত অংশ, শরীরে প্রতিদিন কিছু না কিছুর মৃত্যু হচ্ছে। আর তুমি প্রতিদিন খাবার খেয়ে একটু জীবন ভিতরে প্রবেশ করাও, তখন জীবন একটু সতেজ হয়; তারপর আবার সেখান থেকে প্রতিদিন মৃত অংশ বাহিরে বের হয়ে আসে।

বিজ্ঞানীরা বলেন: ষাট বছরে মানুষের সম্পূর্ণ শরীরের মৃত্যু হয়, তারপর আবার দ্বিতীয় শরীর, সত্তর বৎসর বয়সে দশবার শরীরে মৃত্যু হয়, সম্পূর্ণ পরির্বতন হয়ে যায় এক এক কণা পর্যন্ত পরির্বতন হয়ে যায় কিছুই থাকে না পুরাতন সব নতুন হয়ে যায়।

প্রতিদিন শরীরের মৃত্যু হচ্ছে, শরীরের প্রক্রিয়া হলো মৃত্যু। এই শরীরের ওপারে একটি চৈতন্যের অবস্থান আছে কিন্তু সেই অবস্থান সম্পর্ক তুমি জানো না; অথচ তুমি সেখানেই আছো কিন্তু তুমি তাকে চিনতে পারছো না। মৃত্যু থেকে বাঁচার কথা জিজ্ঞাসা করো না, এটা জিজ্ঞাসা করতে পারো যে আমাদের শরীরের ওপারে যা আছে তাকে জানার জন্য কি করবো? বা ধ্যানে কিভাবে জাগ্রত হবে সেই কথা জিজ্ঞাসা করো।

 যদি তুমি এতটুকু জানতে পারো যে তুমি ভিতরে চৈতন্য, তাহলে শরীরের প্রতি ভালোবাসা ঠিক আছে, শরীর হলো তোমার বসবাসের জায়গা এই বসবাসের জায়গাকে কখনো চিরস্থায়ী মনে করবে না। যখনি তুমি এই কথাগুলো বুঝতে পারবে তখনি তোমার ভিতরে এক অপূর্ব পরির্বতন হতে থাকবে। নরক হলো নারায়ণ, স্বর্গ হলো রামায়ণ; তখন তুমি হঠাৎ বুঝতে পারবে তোমার ভিতরে যাকে নরক মনে করেছিলে সেটা নারায়ণ, আর যাকে তুমি স্বর্গ মনে করেছিলে সেটা রামায়ণ।

শরীর হলো মাটি, মাটি দিয়ে বানানো হয়েছে মাটিতে পড়ে বিলীন হয়ে যাবে আবার মাটি থেকে উঠে, এই সমস্ত আয়োজন মাটির; এই সমস্ত খেলা মাটির। তুমি এই মাটির প্রদীপকে তোমার হওয়া মনে করো না, এই মাটির প্রদীপে যে তৈল ভরা আছে সেটা তোমার মন; সেটাকেও তুমি তোমার হওয়া মনে করো না। সেই তৈলের মাঝে যে বাতি আছে আর বাতির মধ্যে যে জ্যোতি জ্বলছে সেই জ্যোতি তুমি।

মেনে নিলাম প্রদীপ আর তৈল ছাড়া জ্যোতি হারিয়ে যায়, কিন্তু প্রদীপ আর তৈল জ্যোতি নয়; জ্যোতিকে প্রকাশ হওয়ার জন্য প্রদীপ আর তৈলের প্রয়োজন হয়। তোমার প্রকাশের জন্য শরীর আর মনের প্রয়োজন হয়, এটা আবশ্যক তোমার অভিব্যক্তির জন্য কিন্তু তোমার অস্তিত্বের জন্য আবশ্যক নয়। তোমার অস্তিত্ব এগুলো থেকে অনেক অনেক ওপারে, সেই পারের বোধ তোমার জাগ্রত হোক তাহলে মৃত্যুর ভয় আর থাকবে না, তখন তুমি বুঝতে পারবে মৃত্যু বলে কিছু নেই।

শরীরের মৃত্যু সুনিশ্চিত কিন্তু আত্মার মৃত্যু কখনো হয়নি এবং কখনো হবেও না; তুমি আত্মা এতটুকু বোধ জাগ্রত যথেষ্ট। এখন তুমি যাকে জীবন মনে করছো সেটা তোমার নেশা এর থেকে বেশি কিছু নয়, মৃত্যুর সময় জানতে পারবে যখন তোমার চোখ বন্ধ হতে থাকবে; তখন মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হবে।, যাকে এতদিন জীবন মনে করে ছিলে সেটা তোমার একটা স্বপ্ন প্রমাণিত হবে। আর এই জীবনের ভিতরে যে সত্য লুকিয়ে ছিলো স্বপ্নের মাঝে ব্যস্ত থাকার কারণে সত্যকে কখনো দেখতে পাওনি; এখন আবার নতুন করে ভ্রমণ করো।

মৃত্যুকে ভয় পেও না, যদি তোমার জীবনে সত্যি সত্যি জানার আকাঙ্ক্ষা থেকে থাকে তাহলে এতটুকু বুঝার চেষ্টা করো যাকে তুমি এখন জীবন মনে করছো, দিন রাত যার সাথে তুমি বসবাস করেছো সেটা একটা ভ্রান্তি; মৃত্যু এগুলোই ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। ধন সম্পদ, পদ পদবী, নাম, মান মর্যাদা, আরাম আয়েশ, সব ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।

যদি তুমি ধন সম্পদ, পদ পদবী, নাম, মান মর্যাদা, আরাম আয়েশকে মনে করো তোমার হওয়া, তাহলে তোমার মৃত্যু অনিবার্য, তাহলে ভয় স্বাভাবিক। (ধন সম্পদ, পদ পদবী, নাম, মান মর্যাদা, আরাম আয়েশ) এগুলোর ছাড়াও তোমার অবস্থান আছে, সেটাকে একটু জানার চেষ্টা করো; মৃ্ত্যু সেটাকে নষ্ট করতে পারবে না। যে ব্যক্তি নিজেকে জেনেছে মৃত্যু তার কাছে হেরে গেছে।

 মৃত্যু দৌড়িয়ে আসছে তোমার কাছে, আর তুমি বলছো মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন উপায় আছে? আমি তো সমস্ত চেষ্টা এটাই করছি যে তুমি বুঝতে পারো মৃত্যু তোমার কাছে দৌড়িয়ে আসছে; আর তুমি বলছো তোমাকে মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন পথের কথা বলে দিব, তুমি চিন্তা করছো আমি তোমাকে কোন তাবিজ দিবো মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য? তাহলে তুমি মৃত্যু থেকে বেঁচে যাবে।

এত তাড়াতাড়ি সবকিছু হয়ে যাবে, বেশি সময়ও নিবে না; বলতেও পারবে না নিজের মনকে কিছু মুহূর্তের মধ্যে দেখবে বরযাত্রী এসে পড়েছে, কাফন পড়ানো হয়ে গেছে, কবরস্থানের যাত্রা শুরু হতে হতে দাফন সমাপ্ত।

এখানে কে আছে, যা বলতে চেয়ে ছিলো বলতে পেরেছে? এখানে কে আছে চিরস্থায়ী? এখানে কে আছে যা হতে চেয়ে ছিলো তা হতে পেরেছে? পরিচয়ও হতে পারেনি দর্পণের সাথে, চোখ এখনো দর্পণকে দেখতে পায়নি কাজল অশ্রু হয়ে গলে গেলো।

মৃত্যু খুব দ্রুতগতিতে আসছে, আর যে কোন সময় দরজা খট খট করবে, আসার আগে একটু খবরও দিবে না যে আমি আসছি। মৃত্যু হলো অতিথি- সময়; দিন, কাল, ক্ষণ বলে আসবে না শুধু এসে পড়বে, এক মুহুর্তের সময় দিবে না। তুমি বলবে: একটু সময় দিন, আমি সবকিছু গুছিয়ে নেই , বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি। এতটুকু সুযোগ দিবে না।

যা করবে তাড়াতাড়ি করো মৃত্যু আসার আগে, তোমার ভিতরের জ্যোতিকে জানার চেষ্টা করো। আমি চাই মৃত্যুর প্রতি তোমাকে আরো জাগ্রত করতে, আর তুমি চাইছো তোমাকে যেন ঘুম পারিয়ে রাখি; কোন পথ দেখিয়ে দিব যেন মৃত্যু থেকে বাঁচতে পারো। মৃত্যু থেকে বেঁচে কি করবে? এখন কি করছো জীবিত থেকে? এটাই তো করবে বাঁচার পরে? এগুলোকে কত বছর ধরে করতে তোমার মন চাইছে? সত্তর বৎসর ধরে করছো এখনো মন ভরেনি? সাতশত বৎসর ধরে করতে চাইছো? এগুলোই? এটা কি অতিরিক্ত হয়ে গেলো না?

আমি শুনেছিলাম বাদশা সেকান্দার তার সফরে এমন এক জায়গায় পৌঁছালো যেখানে সে জানতে পারলো একটি ঝরনার কাছে এমন একটি জলদ্বার আছে যদি কোন ব্যক্তি সেই পানি পান করে তাহলে সে অমর হয়ে যাবে। সেকান্দার সেই ঝরনার কাছে গেলো এবং জলদ্বার খুঁজে বের করলো, যখন জলদ্বারের কাছে পৌঁছালো অনেক আনন্দিত হয়ে গেলো এমন স্বচ্ছ জল সে কখনো দেখেনি; সেই জল পান করার জন্য প্রস্তুত হলো।

কিন্তু সেখানে বৃক্ষের ডালে একটি কাক বসে ছিলো, কাক বললো: দাঁড়াও সেকান্দার পরে আফসোস করবে প্রথমে আমার কথা শুনো। সেকান্দার অনেক আশ্চর্য হয়ে গেলো, এক চমৎকার হলো এই পানি পান করলে মানুষ অমর হয়ে যায়, আর দ্বিতীয় চমৎকার হলো কাক কথা বলছে, সেকান্দার বললো: কি বলতে চাও তুমি?

কাক বললো: আমি এটা বলতে চাই যে- আমি এই পানি পান করেছি, আমি কোন ছোটখাটো কাক নই যেমন তুমি মানুষের মধ্যে বাদশা সেকান্দার আমিও কাকদের মধ্যে বাদশা সেকান্দার; এই পানির খোঁজে আমার সমস্ত জীবন ব্যয় হয়েছে তারপর আমি ঝরনার খোঁজ পেয়েছি এবং পানি পান করেছি, এখন আমি আফসোস করছি হাজারো বছর ধরে জীবিত আছি মরতে পারছি না; এখন আর মরতেও পারবো না, পাহাড় থেকে কয়েকবার পড়ে গিয়েছি, বিষ খেয়েছি কয়েকবার কিন্তু মরতে পারছি না; এখন জীবনের কোন দাম নেই একই জিনিস কতবার করবো, সবকিছু তো দেখলাম, এর জন্য তোমাকে বলছি প্রথমে চিন্তাভাবনা করে দেখ পরে কিন্তু মরতে পারবে না। এখন তোমার ইচ্ছা, আমি এর জন্য এখানে বসে থাকি যেন দ্বিতীয় কেউ আর এই ভুল না করে যে ভুল আমি করেছি।

কাহিনীতে আছে সেকান্দার সেখানে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে ছিলো, তারপর পানি পান না করে সেখান থেকে ফেরত আসলো। কাহিনী তো কাহিনী কিন্তু কথাগুলো চিরন্তন সত্য, তুমি পান করতে পারবে যদি সেই ঝরনার কাছে যেতে পারো, কিন্তু পান করে করবে কি? কখনো ভেবে দেখেছো? তারপর মৃ্ত্যু অসম্ভব হয়ে যাবে। কিন্তু এই জীবনের সমস্ত খেলা মৃত্যুর মাঝে লুকিয়ে রয়েছে,এই জীবনের সমস্ত আস্বাদ মৃত্যুর কারণে; সুখ; কৌতুক; রঙ্গ-রগড় মৃত্যুর কারণে,আর মৃ্ত্যুর প্রয়োজন আছে।

এখানে সবকিছু লুটপাট হয়ে যাবে, অশ্রু পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে, মৃত দেহ পর্যন্ত নিলাম হয়ে গেল। এখানে সবকিছু হারিয়ে যাবে, কিছুই থাকবে না। এর জন্য আমি তোমাকে সান্তনা দিব না, আমি তোমাকে জাগ্রত করতে চাই; মৃত্যু সুনিশ্চিত আর যতটুকু সময় বেঁচে আছো জীবনকে খোঁজার জন্য ব্যয় কর। শরীর থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে রাখো আর চৈতন্যের মাঝে জাগ্রত হও।

আমার কথাগুলো এত প্রেম ও শান্তির সঙ্গে পড়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি, কেন না এই ধরনের কথাবার্তা প্রেম ও শান্তির সঙ্গে পড়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এবং শেষে সকলের ভেতরে শূন্যকে আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন দয়া করে!!

"Translation" By রুদ্র মুহাম্মদ মনজু" "Respect" "By" Osho(ah)~~~salam shah

সালাতের হাকিক্বত


সালাতের হাকিকত:

আমাদের সমাজে আমরা সালাতকে নামায বলে থাকি।'সালাত' আরবি ভাষা; নামাজ ফার্সী ভাষা।যা কালের বিবর্তনে আমরা পেয়েছি।
পাক ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারিত রয়েছে তা মূলত পীর ফকিরগণের দ্বারা।মধ্যপ্রাচ্যের কিছু আধ্যাতিক পুরুষগণ এই উপমহাদেশে আগমণ ঘটান।ঈমানের বলে বলীয়ান সেইসব মহাপুরুষগণ সীমাহীন দুঃখকষ্ট সহ্য করে এবং অসীম ধৈর্য্য নিয়ে ইসলামের সাম্যের বাণী 'দ্বীন ইসলাম'কে তারা প্রতিষ্ঠিত করেন।ফার্সি ভাষাভাষি অঞ্চল থেকে যেমন তুরস্ক থেকে ৫০ জন মাওলানা সাহেব এসেছিলেন ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে(ইতিহাস থেকে জানা)।ফলে প্রচারিত হয়েছিল 'পার্সিয়াটিক ইসলাম'।পার্সিয়াটিক ইসলাম প্রচারের জন্যই কালের বিবর্তনের ধারায় ধর্মীয় মুসলিম অনুষ্ঠানগুলো ফার্সি ভাষায় নামকরণ করা হয়ে যায়।তাই তো সালাত হয়েছে নামাজ; সিয়াম হয়েছে রোজা।
আমাদের দেশের কোন কোন ধর্মবিজ্ঞানীর ধারনা যে,নামাজ শব্দটি 'নমঃ' ধাতু হতে উতপত্তি।এ থেকে বাংলা ভাষায় দুটি শব্দ পাওয়া যায় একটি 'নমস্কার' অর্থ 'সালাম' আর অন্যটা 'নামাজ'।মূল ধাতু নমঃ থেকে উদ্ভব বলে নমস্কার ও নামাজ একই অর্থ বহন করে।
সালাত হচ্ছে,"আল্লাহ্ ও তার রাসূলের সঙ্গে সংযোগ প্রচেষ্টা"।
সকল কর্ম ও চিন্তাকে ভেঙে ভেঙে তার স্বরূপ জ্ঞান দ্বারা বিস্তারিতভাবে দেখার নাম সালাত।
ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) সালাতের সংজ্ঞা দেন:
"সম্যক কর্ম সম্যক সময়ে যথাবিহিত সম্পাদনের নাম সালাত"।
কর্মকে যতই ক্ষুদ্রায়িতভাবে বিভক্ত করে দেখা যায় ততোই সালাতের গভীরতা আসে।
হাদিসে উল্লেখ আছে,"আসসালাতু মেরাজুল মুমেনিন" অর্থঃ সালাত মুমিনের মেরাজ।মেরাজ মানে আল্লাহর সাথে দিদার লাভ করা।
আল কোরআনে উল্লেখ আছে ,"ইন্নাস সালাতা তানহার আনিল ফাহশায়ি ওয়াল মুনকার" অর্থঃ নিশ্চয়ই সালাত যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
কিন্তু বর্তমানে আমরা যে সালাত আদায় করি তা শুধু মাত্র দেহের একটা অঙ্গিভঙ্গি ও আনুষ্ঠানিকতা।পবিত্র কোরআনে যে সালাতের কথা বলা হয়েছে তা মূলত 'গুরুবাদী'।
আল্লাহ্ পাক বলেন,"আন তাক্কুম লিল্লাহি মাছনা..অ ফুরা..দা ছুম্মা তাতাফাক্কারু"(৩৪ঃ৪৬) অর্থঃ তোমরা আল্লাহর জন্য (সালাতে) দাড়াও জোড়ায় জোড়ায় অতঃপর একাকি এবং অনুধাবন করো।
এখানে 'মাছনা' মানে জোড়া জোড়া।যা তাফসিরকারকগণ জামাত হিসেবে প্রকাশ করেছেন।
প্রকৃত পক্ষে কোরআনের শিক্ষা হলো একজন সম্যক গুরু বা কামেল মুর্শিদ নিজ আত্মসমর্পণকারীকে সালাত শিক্ষা দিয়ে মুমিন সৃষ্টি করবেন।কারন সালাত শিক্ষা দানে স্বীয় মুর্শিদ সালাতের ইমাম।অর্থাত গুরুর প্রতি ঈমান মোকাম্মেল হয়ে স্বয়ং আল্লাহ্ ও রাসূলের সাথে এককভাবে সংযোগ স্থাপন হয়ে যায়।দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে,আল্লাহ্ রাসূলের সাথে সংযোগ প্রচেষ্টার নামই সালাত।
পাক কোরআনে যে সালাতের কথা বলা হয়েছে তা হলো দায়েমী সালাত।কোরআনে উল্লেখ আছে,"ওয়াল্লাজিনা হুম আলা সালাতিহিত দায়েমুন" অর্থঃ তোমরা সালাতের উপর দায়েম (সদা সর্বদা>constantly) থাক।
সালাত মূলত ২ ধরনের।
১.জাহেরী নামাজ
২.হাকিকি নামাজ
নামাজে হাকিকি সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন,"লা সালাতা ইল্লা বিহুজুরিল ক্বালব" অর্থঃ হুজুরি দিল ব্যতিত নামাজ সঠিক হয় না।
জাহেরী নামাজ হলো দৈহিক অঙ্গিভঙ্গি মাত্র।আর হাকিকি নামাজ আল্লাহ্ প্রাপ্তি ঘটায়।হাকিকি বা দায়েমী সালাত আমিত্বের বিরূদ্ধে যুদ্ধ,চঞ্চল মনকে স্থির করে একটি কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসে নফসের যাবতীয় কলুষতা হতে পবিত্র হয়ে মারফতের নূরে আলোকিত হয়।এটা আমি হিমাদ্রীর কথা নয় এটা সূফিবাদে প্রমাণ দেয়।
সূরা আলা'র ১৪ ও ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে,"ক্বাদ আফলাহা মান তাজাক্কা অজাকারাস মা রাব্বিহি ফাসাল্লা"অর্থঃ নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি কল্যানপ্রাপ্ত হয়েছে যে নিজেকে পবিত্র করেছে এবং তার রবের স্মরণ ও সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে সফলকাম হয়েছে।অতএব,সে করল সালাত।তাই সালাত আদায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো মহান প্রভুর সাথে সংযোগ স্থাপন করা।আর সংযোগের ব্যাপারটি হলো মন ও ভাবের ব্যাপার।যে রাসূলের সাথে সংযোগ স্থাপন ককল তার স্বয়ং প্রভুর সাথে সংযোগ স্থাপন হলো।আর দয়াল রাসূলের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্যই গুরু বা মুর্শিদের শরণাপন্ন হতে হবে।যার নিকট আত্মসমর্পণ করলে দায়েমী সালাতের মাধ্যমে শুদ্ধ হয়ে স্বয়ং স্রষ্টার সাথে সৃষ্টি বিলীন হয়ে যেতে পারে।
আমাদের সকলকে মহান প্রভু কামেল গুরুর নেক নজর ভিক্ষা দিন।কেননা,"অলি আল্লাহর সাথে একদিনের সহোবত হাজার বছর ইবাদাতের চাইতে উত্তম"=>মাওলানা জালালুদ্দিন রূমী (রহঃ)।

মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলের ধর্মরাশির ভাসমান মূর্তিগুলোকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে তার নির্দেশনা অনুযায়ী সালাত আদায় করার দয়াটুকুন ভিক্ষা দিন।আমিন।

লেখা: হিমার্দ্রী
পোষ্ট : নুরে আলম

শনিবার, ৯ মে, ২০২০

আয়াত

সূরা মাউন (الماعون), 
আয়াত: ৪
অর্থঃ অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর,
আয়াত: ৫
অর্থঃ যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর;
আয়াত ৬/
অর্থঃ যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে