মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায়!

আমি মৃত্যুকে অনেক ভয় পাই, মৃত্যু থেকে বাঁচার কি কোন উপায় আছে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
 তোমার মৃত্যু সেইদিন হয়ে গেছে যেদিন তুমি জন্ম গ্রহণ করেছো, এখন এর থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। যেদিন জন্ম নিয়েছো সেইদিন থেকে মৃত্যুর যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। প্রথম কদম যখন উঠিয়েছো তখন দ্বিতীয় কদম উঠাতে হবেই, যেমন ধনুক থেকে তীর বের হয়ে গেছে এখন তীরকে রুখবে কিভাবে? যখন জন্ম হয়েছে তখন মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই।

যেদিন তুমি এই বিষয়টি বুঝতে পারবে যে মৃত্যু হবেই সুনিশ্চিতভাবে আর অন্য সবকিছু অনিশ্চিত শুধু মৃত্যু সুনিশ্চিত, সেইদিন ভয় সমাপ্ত হয়ে যাবে; যা হবে তার জন্য কিসের ভয়? তুমি যে আশঙ্কা করছো দুর্ঘটনার প্রথমেই সেই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে তোমার ভিতরে, শুধু তোমার কাছে আসার বাকি আছে। সেদিন তোমার মৃত্যু হয়ে গেছে যেদিন তুমি জন্ম নিয়েছো, যেদিন থেকে তুমি শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করেছো সেইদিন শ্বাস প্রশ্বাস বের হওয়ার উপায় শুরু হয়ে গেছে। এখন এই শ্বাস প্রশ্বাস যে কোনদিন বের হয়ে চলে যাবে, তুমি সব সময়ের জন্য থাকতে পারবে না।

এর জন্য এই ভয়কে বুঝার চেষ্টা করো, বাঁচার আশা করিও না কারণ কেউ বাঁচতে পারেনি। কত লোকজন কত উপায় বের করেছে বাঁচার জন্য। নাদের শাহ কত বড় যোদ্ধা ছিলো, কত ভয়ংকর ছিলো হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে কিন্তু নিজের মৃত্যুকে ভয় পেত। কাহিনীতে আছে এক বেশ্যা নাদের শাহের শিবিরে(ছাউনি, তাঁবু) নাচার জন্য এসেছিলো, আর যখন চলে যাওয়ার সময় হলো তখন রাত অনেক হয়ে গিয়ে ছিলো ভয় পেতে লাগলো তখন নাদের শাহকে বললো অনেক অন্ধকার হয়ে গেছে আর আমার গ্রাম অনেক দূরে আমি কিভাবে যাবো এখন?

নাদের শাহ বললো: তুমি কোন চিন্তা করো না, তুমি কি কোন সাধারণ দরবারে নাচতে এসেছো। নাদের শাহ তার সৈনিকদের বললো রাস্তার সামনে যত গ্রাম আছে সব গুলোতে আগুন লাগিয়ে দাও যেন এই বেশ্যা তার গ্রামে আলোতে যেতে পারে। পাঁচ থেকে সাতটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ছিলো গ্রামে ঘুমন্ত লোকজন আগুনে পুড়ে মারা গেছে, কিন্তু রাস্তা আলোকিত করে দিয়ে ছিলো।

অন্যের মৃত্যু তার জন্য খেলা ছিল কিন্তু নিজের মৃত্যুকে অনেক ভয় পেত, মৃত্যুকে এত ভয় পেত যে রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারতো না; আর এই ভয়েই তার মৃত্যু হয়ে ছিলো। যখন হিন্দুস্তান থেকে ফিরে আসছিলো, এক রাতে একটি তাঁবুর ভিতরে ঘুমিয়ে ছিলো, রাত গভীর ছিল তাঁবুতে একজন ডাকাত ঢুকে গেলো।

ডাকাত কারো হত্যা করার জন্য উৎসুক ছিল না, তার উৎসুক ছিল কিছু জিনিস চুরি করার। কিন্তু অন্ধকারে ডাকাতের উপস্থিতি ও আওয়াজে নাদের শাহ ভয় পেয়ে গেল মনে করলো অনেক শত্রু প্রবেশ করেছে দৌড়িয়ে বাহিরে আসলো কিন্তু তাঁবুর দড়িতে পা আটকিয়ে গেলো; নাদের শাহ মনে করলো কেউ তার পা ধরে ফেলেছে, সেই ভয়ে তার হার্টবিট বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিলো।কেউ তাকে ধরেনি, কেউ তাকে মারেনি শুধু পা আটকিয়ে গিয়েছিলো তাঁবুর দড়ির সাথে এতেই সে মনে করে ছিলো তার জীবন শেষ, সেই ভয়েই মারা গিয়ে ছিল।

মানুষ বাঁচার জন্য যত উপায় করে? মনোবিজ্ঞানী বলেন: অন্যকে মারার উৎসুক তাদের মধ্যে হয় যারা নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক বেশি চেষ্টা করে। যাদের এই খেয়াল হয় আমরা তো জীবন বানাতে পারবো না কিন্তু মানুষকে হত্যা তো করতে পারবো, দেখ আমরা কত মানুষ হত্যা করেছি? অন্যকে হত্যা করলে আমাদের মনে হতে থাকে আমরা মৃত্যুর মালিক হয়ে গিয়েছি, এটাতে এক ধরনের ভ্রান্তির জন্ম হয়; হয়তবা মৃত্যু আমাদের ক্ষমা করে দিবে। না ধন সম্পদ দিয়ে কাজ হবে, না পদ পদবী দিয়ে কাজ হবে, না শক্তি দিয়ে কাজ হবে,কোন উপায় নেই মৃত্যু থেকে বাঁচার।

তুমি জিজ্ঞাসা করেছো: আমি মৃত্যুকে অনেক ভয় পাই, এর থেকে কি বাঁচার কোন উপায় আছে?

যতই বাঁচার উপায় খুঁজতে থাকবে ততই ভয় আরো বাড়তে থাকবে, তুমি বাঁচার উপায় খুঁজবে আর প্রতিদিন মৃত্যু তোমার কাছে আসতে থাকবে কারণ তুমি প্রতিদিন বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছো। মৃত্যুকে স্বীকার করে নাও, মৃত্যু থেকে বাঁচার কথা চিন্তা করো না আর; যা হওয়ার তা হবেই, সেটাকে তুমি অন্তরতম থেকে স্বীকার করে নাও তাহলে আর ভয় থাকবে না।

মৃত্যু থেকে বাঁচা সম্ভব নয়, কিন্তু মৃত্যুর ভয় থেকে বাঁচা সম্ভব। মৃত্যু হবেই কিন্তু ভয় আবশ্যক নয়, ভয়কে তুমি জন্ম দিয়েছো। বৃক্ষ তো ভয়ভীত নয়, তাদেরও মৃত্যু হবে, কিন্তু তাদের কাছে চিন্তাভাবনার মন নেই, বুদ্ধি নেই। পশুরা তো কোন চিন্তাভাবনা করছে না? তাদেরও মৃত্যু হবে।

মৃত্যু স্বাভাবিক বিষয়, বৃক্ষ, পশু, পাখি, মানুষ সবার মৃত্যু হবে, কিন্তু শুধু মানুষই ভয়ভীত! কারণ মানুষের চিন্তাভাবনা যদি কোনভাবে বাঁচার উপায় বের করা যায়। তোমার বাঁচার আশা আকাঙ্খার কারণে ভয়ের জন্ম হচ্ছে, মৃত্যুকে স্বীকার করে নাও।

আর তোমার সমস্যা কোথায়? জন্মের আগে তুমি ছিলে না, কোন সমস্যা ছিল? কখনো একবার এভাবে চিন্তা করে দেখো? জন্মের আগে তুমি ছিলে না, কোন সমস্যা ছিল? মৃত্যুর পরে আবার তুমি থাকবে না, কোথায় সমস্যা? যেভাবে জন্মের আগে ছিলে মৃত্যুর পর আবার তেমনি হয়ে যাবে, জন্মের আগে তোমার অবস্থা যেমন ছিল মৃত্যুর পরে আবার তেমন অবস্থায় ফিরে যাবে।

যতক্ষণ তুমি প্রথম শ্বাস প্রশ্বাস নেওনি, সেই সময়ের কথা তোমার মনে আছে? তখন কি তোমার কোন পেরেশানি বা সমস্যা ছিল? এভাবে যখন তোমার শেষ শ্বাস প্রশ্বাস চলে যাবে, তারপর কিসের পেরেশানি, কিসের সমস্যা?

সক্রেটিসের মৃত্যুর সময় কেউ জিজ্ঞাসা করলো আপনি কি ভয় পাচ্ছেন না? সক্রেটিস(আঃ) বললো: ভয়ের কি আছে, যেমন আস্তিক বলে আত্মা অমর তাহলে ভয়ের কিছু নেই, আত্মা অমর ভয় পাবো কেন? আবার যেমন নাস্তিক বলে আত্মা মরে যাবে, তাহলেও কোন সমস্যা নেই; যে ভয় পাবে সে তো মারা যাবে, তাহলে ভয় পাবেটা কে? কিছুই বাঁচবে না, না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশি।

সক্রেটিস(আঃ) বললো: দুটো অবস্থা ঠিক আছে, দুইজনের মধ্যে থেকে তো একজন সঠিক হবে; এছাড়া আর কোন উপায় নেই। হয় আস্তিক ঠিক, তা না হলে নাস্তিক ঠিক। যদি আস্তিক ঠিক হয় তাহলে আত্মা অমর, কোন চিন্তার বিষয় নয়। আর যদি নাস্তিক ঠিক হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই, কিসের চিন্তা? কে চিন্তা করবে। সক্রেটিস(আঃ) বললো: এর জন্য আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত যা হবে ঠিক হবে।

 তুমি বাঁচার চেষ্টা করো না, মৃত্যু হবেই। কিন্তু আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই, তোমার মৃত্যু হবে না, তোমার তো জন্মই হয়নি তাহলে মৃত্যু কিভাবে হবে? শরীরের জন্ম হয়েছে, শরীরের মৃ্ত্যু হবে। তোমার চৈতন্যের জন্ম হয়নি, আর অমরত্ব তার ধর্ম(যে মরে না, চিরজীবী)।

তোমার সমস্যা আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি তোমার শরীরকে আপন মনে করছো। মৃত্যু আসল প্রশ্ন নয়, আসল প্রশ্ন হলো শরীরকে মনে করছো এটাই আমি। যেমন কেউ চিল্লাচিল্লিকে মনে করছে শান্তি। এমনি কথাবার্তা বলছে জীবনের, মৃতকে তুমি জীবন মনে করছ, এর জন্য সমস্যা হচ্ছে। মৃত তো মৃতই, এখনো মৃত এবং প্রতিদিন মরছে; তুমি খেয়াল করে দেখনি। না কি তুমি খেয়াল করে দেখতে চাচ্ছো না? ভয় পাচ্ছো? তোমার মাথায় যে চুল বড় হচ্ছে, চেহারায় যে দাঁড়ি(চুল) বড় হচ্ছে; হাতের নক বড় হচ্ছে, তুমি কি কখনো লক্ষ্য করে দেখেছো এগুলো কাটার সময় তুমি কেন ব্যাথা পাও না?

এগুলো কিন্তু তোমার শরীরের জীবিত অংশ নয়, মৃত অংশ যা শরীর বাহিরে ফেলে দিচ্ছে। প্রতিদিন মলমূত্র বাহিরে ফেলছো এগুলো শরীরের সব মৃত অংশ, শরীরে প্রতিদিন কিছু না কিছুর মৃত্যু হচ্ছে। আর তুমি প্রতিদিন খাবার খেয়ে একটু জীবন ভিতরে প্রবেশ করাও, তখন জীবন একটু সতেজ হয়; তারপর আবার সেখান থেকে প্রতিদিন মৃত অংশ বাহিরে বের হয়ে আসে।

বিজ্ঞানীরা বলেন: ষাট বছরে মানুষের সম্পূর্ণ শরীরের মৃত্যু হয়, তারপর আবার দ্বিতীয় শরীর, সত্তর বৎসর বয়সে দশবার শরীরে মৃত্যু হয়, সম্পূর্ণ পরির্বতন হয়ে যায় এক এক কণা পর্যন্ত পরির্বতন হয়ে যায় কিছুই থাকে না পুরাতন সব নতুন হয়ে যায়।

প্রতিদিন শরীরের মৃত্যু হচ্ছে, শরীরের প্রক্রিয়া হলো মৃত্যু। এই শরীরের ওপারে একটি চৈতন্যের অবস্থান আছে কিন্তু সেই অবস্থান সম্পর্ক তুমি জানো না; অথচ তুমি সেখানেই আছো কিন্তু তুমি তাকে চিনতে পারছো না। মৃত্যু থেকে বাঁচার কথা জিজ্ঞাসা করো না, এটা জিজ্ঞাসা করতে পারো যে আমাদের শরীরের ওপারে যা আছে তাকে জানার জন্য কি করবো? বা ধ্যানে কিভাবে জাগ্রত হবে সেই কথা জিজ্ঞাসা করো।

 যদি তুমি এতটুকু জানতে পারো যে তুমি ভিতরে চৈতন্য, তাহলে শরীরের প্রতি ভালোবাসা ঠিক আছে, শরীর হলো তোমার বসবাসের জায়গা এই বসবাসের জায়গাকে কখনো চিরস্থায়ী মনে করবে না। যখনি তুমি এই কথাগুলো বুঝতে পারবে তখনি তোমার ভিতরে এক অপূর্ব পরির্বতন হতে থাকবে। নরক হলো নারায়ণ, স্বর্গ হলো রামায়ণ; তখন তুমি হঠাৎ বুঝতে পারবে তোমার ভিতরে যাকে নরক মনে করেছিলে সেটা নারায়ণ, আর যাকে তুমি স্বর্গ মনে করেছিলে সেটা রামায়ণ।

শরীর হলো মাটি, মাটি দিয়ে বানানো হয়েছে মাটিতে পড়ে বিলীন হয়ে যাবে আবার মাটি থেকে উঠে, এই সমস্ত আয়োজন মাটির; এই সমস্ত খেলা মাটির। তুমি এই মাটির প্রদীপকে তোমার হওয়া মনে করো না, এই মাটির প্রদীপে যে তৈল ভরা আছে সেটা তোমার মন; সেটাকেও তুমি তোমার হওয়া মনে করো না। সেই তৈলের মাঝে যে বাতি আছে আর বাতির মধ্যে যে জ্যোতি জ্বলছে সেই জ্যোতি তুমি।

মেনে নিলাম প্রদীপ আর তৈল ছাড়া জ্যোতি হারিয়ে যায়, কিন্তু প্রদীপ আর তৈল জ্যোতি নয়; জ্যোতিকে প্রকাশ হওয়ার জন্য প্রদীপ আর তৈলের প্রয়োজন হয়। তোমার প্রকাশের জন্য শরীর আর মনের প্রয়োজন হয়, এটা আবশ্যক তোমার অভিব্যক্তির জন্য কিন্তু তোমার অস্তিত্বের জন্য আবশ্যক নয়। তোমার অস্তিত্ব এগুলো থেকে অনেক অনেক ওপারে, সেই পারের বোধ তোমার জাগ্রত হোক তাহলে মৃত্যুর ভয় আর থাকবে না, তখন তুমি বুঝতে পারবে মৃত্যু বলে কিছু নেই।

শরীরের মৃত্যু সুনিশ্চিত কিন্তু আত্মার মৃত্যু কখনো হয়নি এবং কখনো হবেও না; তুমি আত্মা এতটুকু বোধ জাগ্রত যথেষ্ট। এখন তুমি যাকে জীবন মনে করছো সেটা তোমার নেশা এর থেকে বেশি কিছু নয়, মৃত্যুর সময় জানতে পারবে যখন তোমার চোখ বন্ধ হতে থাকবে; তখন মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হবে।, যাকে এতদিন জীবন মনে করে ছিলে সেটা তোমার একটা স্বপ্ন প্রমাণিত হবে। আর এই জীবনের ভিতরে যে সত্য লুকিয়ে ছিলো স্বপ্নের মাঝে ব্যস্ত থাকার কারণে সত্যকে কখনো দেখতে পাওনি; এখন আবার নতুন করে ভ্রমণ করো।

মৃত্যুকে ভয় পেও না, যদি তোমার জীবনে সত্যি সত্যি জানার আকাঙ্ক্ষা থেকে থাকে তাহলে এতটুকু বুঝার চেষ্টা করো যাকে তুমি এখন জীবন মনে করছো, দিন রাত যার সাথে তুমি বসবাস করেছো সেটা একটা ভ্রান্তি; মৃত্যু এগুলোই ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। ধন সম্পদ, পদ পদবী, নাম, মান মর্যাদা, আরাম আয়েশ, সব ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।

যদি তুমি ধন সম্পদ, পদ পদবী, নাম, মান মর্যাদা, আরাম আয়েশকে মনে করো তোমার হওয়া, তাহলে তোমার মৃত্যু অনিবার্য, তাহলে ভয় স্বাভাবিক। (ধন সম্পদ, পদ পদবী, নাম, মান মর্যাদা, আরাম আয়েশ) এগুলোর ছাড়াও তোমার অবস্থান আছে, সেটাকে একটু জানার চেষ্টা করো; মৃ্ত্যু সেটাকে নষ্ট করতে পারবে না। যে ব্যক্তি নিজেকে জেনেছে মৃত্যু তার কাছে হেরে গেছে।

 মৃত্যু দৌড়িয়ে আসছে তোমার কাছে, আর তুমি বলছো মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন উপায় আছে? আমি তো সমস্ত চেষ্টা এটাই করছি যে তুমি বুঝতে পারো মৃত্যু তোমার কাছে দৌড়িয়ে আসছে; আর তুমি বলছো তোমাকে মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন পথের কথা বলে দিব, তুমি চিন্তা করছো আমি তোমাকে কোন তাবিজ দিবো মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য? তাহলে তুমি মৃত্যু থেকে বেঁচে যাবে।

এত তাড়াতাড়ি সবকিছু হয়ে যাবে, বেশি সময়ও নিবে না; বলতেও পারবে না নিজের মনকে কিছু মুহূর্তের মধ্যে দেখবে বরযাত্রী এসে পড়েছে, কাফন পড়ানো হয়ে গেছে, কবরস্থানের যাত্রা শুরু হতে হতে দাফন সমাপ্ত।

এখানে কে আছে, যা বলতে চেয়ে ছিলো বলতে পেরেছে? এখানে কে আছে চিরস্থায়ী? এখানে কে আছে যা হতে চেয়ে ছিলো তা হতে পেরেছে? পরিচয়ও হতে পারেনি দর্পণের সাথে, চোখ এখনো দর্পণকে দেখতে পায়নি কাজল অশ্রু হয়ে গলে গেলো।

মৃত্যু খুব দ্রুতগতিতে আসছে, আর যে কোন সময় দরজা খট খট করবে, আসার আগে একটু খবরও দিবে না যে আমি আসছি। মৃত্যু হলো অতিথি- সময়; দিন, কাল, ক্ষণ বলে আসবে না শুধু এসে পড়বে, এক মুহুর্তের সময় দিবে না। তুমি বলবে: একটু সময় দিন, আমি সবকিছু গুছিয়ে নেই , বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি। এতটুকু সুযোগ দিবে না।

যা করবে তাড়াতাড়ি করো মৃত্যু আসার আগে, তোমার ভিতরের জ্যোতিকে জানার চেষ্টা করো। আমি চাই মৃত্যুর প্রতি তোমাকে আরো জাগ্রত করতে, আর তুমি চাইছো তোমাকে যেন ঘুম পারিয়ে রাখি; কোন পথ দেখিয়ে দিব যেন মৃত্যু থেকে বাঁচতে পারো। মৃত্যু থেকে বেঁচে কি করবে? এখন কি করছো জীবিত থেকে? এটাই তো করবে বাঁচার পরে? এগুলোকে কত বছর ধরে করতে তোমার মন চাইছে? সত্তর বৎসর ধরে করছো এখনো মন ভরেনি? সাতশত বৎসর ধরে করতে চাইছো? এগুলোই? এটা কি অতিরিক্ত হয়ে গেলো না?

আমি শুনেছিলাম বাদশা সেকান্দার তার সফরে এমন এক জায়গায় পৌঁছালো যেখানে সে জানতে পারলো একটি ঝরনার কাছে এমন একটি জলদ্বার আছে যদি কোন ব্যক্তি সেই পানি পান করে তাহলে সে অমর হয়ে যাবে। সেকান্দার সেই ঝরনার কাছে গেলো এবং জলদ্বার খুঁজে বের করলো, যখন জলদ্বারের কাছে পৌঁছালো অনেক আনন্দিত হয়ে গেলো এমন স্বচ্ছ জল সে কখনো দেখেনি; সেই জল পান করার জন্য প্রস্তুত হলো।

কিন্তু সেখানে বৃক্ষের ডালে একটি কাক বসে ছিলো, কাক বললো: দাঁড়াও সেকান্দার পরে আফসোস করবে প্রথমে আমার কথা শুনো। সেকান্দার অনেক আশ্চর্য হয়ে গেলো, এক চমৎকার হলো এই পানি পান করলে মানুষ অমর হয়ে যায়, আর দ্বিতীয় চমৎকার হলো কাক কথা বলছে, সেকান্দার বললো: কি বলতে চাও তুমি?

কাক বললো: আমি এটা বলতে চাই যে- আমি এই পানি পান করেছি, আমি কোন ছোটখাটো কাক নই যেমন তুমি মানুষের মধ্যে বাদশা সেকান্দার আমিও কাকদের মধ্যে বাদশা সেকান্দার; এই পানির খোঁজে আমার সমস্ত জীবন ব্যয় হয়েছে তারপর আমি ঝরনার খোঁজ পেয়েছি এবং পানি পান করেছি, এখন আমি আফসোস করছি হাজারো বছর ধরে জীবিত আছি মরতে পারছি না; এখন আর মরতেও পারবো না, পাহাড় থেকে কয়েকবার পড়ে গিয়েছি, বিষ খেয়েছি কয়েকবার কিন্তু মরতে পারছি না; এখন জীবনের কোন দাম নেই একই জিনিস কতবার করবো, সবকিছু তো দেখলাম, এর জন্য তোমাকে বলছি প্রথমে চিন্তাভাবনা করে দেখ পরে কিন্তু মরতে পারবে না। এখন তোমার ইচ্ছা, আমি এর জন্য এখানে বসে থাকি যেন দ্বিতীয় কেউ আর এই ভুল না করে যে ভুল আমি করেছি।

কাহিনীতে আছে সেকান্দার সেখানে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে ছিলো, তারপর পানি পান না করে সেখান থেকে ফেরত আসলো। কাহিনী তো কাহিনী কিন্তু কথাগুলো চিরন্তন সত্য, তুমি পান করতে পারবে যদি সেই ঝরনার কাছে যেতে পারো, কিন্তু পান করে করবে কি? কখনো ভেবে দেখেছো? তারপর মৃ্ত্যু অসম্ভব হয়ে যাবে। কিন্তু এই জীবনের সমস্ত খেলা মৃত্যুর মাঝে লুকিয়ে রয়েছে,এই জীবনের সমস্ত আস্বাদ মৃত্যুর কারণে; সুখ; কৌতুক; রঙ্গ-রগড় মৃত্যুর কারণে,আর মৃ্ত্যুর প্রয়োজন আছে।

এখানে সবকিছু লুটপাট হয়ে যাবে, অশ্রু পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে, মৃত দেহ পর্যন্ত নিলাম হয়ে গেল। এখানে সবকিছু হারিয়ে যাবে, কিছুই থাকবে না। এর জন্য আমি তোমাকে সান্তনা দিব না, আমি তোমাকে জাগ্রত করতে চাই; মৃত্যু সুনিশ্চিত আর যতটুকু সময় বেঁচে আছো জীবনকে খোঁজার জন্য ব্যয় কর। শরীর থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে রাখো আর চৈতন্যের মাঝে জাগ্রত হও।

আমার কথাগুলো এত প্রেম ও শান্তির সঙ্গে পড়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি, কেন না এই ধরনের কথাবার্তা প্রেম ও শান্তির সঙ্গে পড়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এবং শেষে সকলের ভেতরে শূন্যকে আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন দয়া করে!!

"Translation" By রুদ্র মুহাম্মদ মনজু" "Respect" "By" Osho(ah)~~~salam shah

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন