মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

সালাতের হাকিক্বত


সালাতের হাকিকত:

আমাদের সমাজে আমরা সালাতকে নামায বলে থাকি।'সালাত' আরবি ভাষা; নামাজ ফার্সী ভাষা।যা কালের বিবর্তনে আমরা পেয়েছি।
পাক ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারিত রয়েছে তা মূলত পীর ফকিরগণের দ্বারা।মধ্যপ্রাচ্যের কিছু আধ্যাতিক পুরুষগণ এই উপমহাদেশে আগমণ ঘটান।ঈমানের বলে বলীয়ান সেইসব মহাপুরুষগণ সীমাহীন দুঃখকষ্ট সহ্য করে এবং অসীম ধৈর্য্য নিয়ে ইসলামের সাম্যের বাণী 'দ্বীন ইসলাম'কে তারা প্রতিষ্ঠিত করেন।ফার্সি ভাষাভাষি অঞ্চল থেকে যেমন তুরস্ক থেকে ৫০ জন মাওলানা সাহেব এসেছিলেন ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে(ইতিহাস থেকে জানা)।ফলে প্রচারিত হয়েছিল 'পার্সিয়াটিক ইসলাম'।পার্সিয়াটিক ইসলাম প্রচারের জন্যই কালের বিবর্তনের ধারায় ধর্মীয় মুসলিম অনুষ্ঠানগুলো ফার্সি ভাষায় নামকরণ করা হয়ে যায়।তাই তো সালাত হয়েছে নামাজ; সিয়াম হয়েছে রোজা।
আমাদের দেশের কোন কোন ধর্মবিজ্ঞানীর ধারনা যে,নামাজ শব্দটি 'নমঃ' ধাতু হতে উতপত্তি।এ থেকে বাংলা ভাষায় দুটি শব্দ পাওয়া যায় একটি 'নমস্কার' অর্থ 'সালাম' আর অন্যটা 'নামাজ'।মূল ধাতু নমঃ থেকে উদ্ভব বলে নমস্কার ও নামাজ একই অর্থ বহন করে।
সালাত হচ্ছে,"আল্লাহ্ ও তার রাসূলের সঙ্গে সংযোগ প্রচেষ্টা"।
সকল কর্ম ও চিন্তাকে ভেঙে ভেঙে তার স্বরূপ জ্ঞান দ্বারা বিস্তারিতভাবে দেখার নাম সালাত।
ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) সালাতের সংজ্ঞা দেন:
"সম্যক কর্ম সম্যক সময়ে যথাবিহিত সম্পাদনের নাম সালাত"।
কর্মকে যতই ক্ষুদ্রায়িতভাবে বিভক্ত করে দেখা যায় ততোই সালাতের গভীরতা আসে।
হাদিসে উল্লেখ আছে,"আসসালাতু মেরাজুল মুমেনিন" অর্থঃ সালাত মুমিনের মেরাজ।মেরাজ মানে আল্লাহর সাথে দিদার লাভ করা।
আল কোরআনে উল্লেখ আছে ,"ইন্নাস সালাতা তানহার আনিল ফাহশায়ি ওয়াল মুনকার" অর্থঃ নিশ্চয়ই সালাত যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
কিন্তু বর্তমানে আমরা যে সালাত আদায় করি তা শুধু মাত্র দেহের একটা অঙ্গিভঙ্গি ও আনুষ্ঠানিকতা।পবিত্র কোরআনে যে সালাতের কথা বলা হয়েছে তা মূলত 'গুরুবাদী'।
আল্লাহ্ পাক বলেন,"আন তাক্কুম লিল্লাহি মাছনা..অ ফুরা..দা ছুম্মা তাতাফাক্কারু"(৩৪ঃ৪৬) অর্থঃ তোমরা আল্লাহর জন্য (সালাতে) দাড়াও জোড়ায় জোড়ায় অতঃপর একাকি এবং অনুধাবন করো।
এখানে 'মাছনা' মানে জোড়া জোড়া।যা তাফসিরকারকগণ জামাত হিসেবে প্রকাশ করেছেন।
প্রকৃত পক্ষে কোরআনের শিক্ষা হলো একজন সম্যক গুরু বা কামেল মুর্শিদ নিজ আত্মসমর্পণকারীকে সালাত শিক্ষা দিয়ে মুমিন সৃষ্টি করবেন।কারন সালাত শিক্ষা দানে স্বীয় মুর্শিদ সালাতের ইমাম।অর্থাত গুরুর প্রতি ঈমান মোকাম্মেল হয়ে স্বয়ং আল্লাহ্ ও রাসূলের সাথে এককভাবে সংযোগ স্থাপন হয়ে যায়।দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে,আল্লাহ্ রাসূলের সাথে সংযোগ প্রচেষ্টার নামই সালাত।
পাক কোরআনে যে সালাতের কথা বলা হয়েছে তা হলো দায়েমী সালাত।কোরআনে উল্লেখ আছে,"ওয়াল্লাজিনা হুম আলা সালাতিহিত দায়েমুন" অর্থঃ তোমরা সালাতের উপর দায়েম (সদা সর্বদা>constantly) থাক।
সালাত মূলত ২ ধরনের।
১.জাহেরী নামাজ
২.হাকিকি নামাজ
নামাজে হাকিকি সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন,"লা সালাতা ইল্লা বিহুজুরিল ক্বালব" অর্থঃ হুজুরি দিল ব্যতিত নামাজ সঠিক হয় না।
জাহেরী নামাজ হলো দৈহিক অঙ্গিভঙ্গি মাত্র।আর হাকিকি নামাজ আল্লাহ্ প্রাপ্তি ঘটায়।হাকিকি বা দায়েমী সালাত আমিত্বের বিরূদ্ধে যুদ্ধ,চঞ্চল মনকে স্থির করে একটি কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসে নফসের যাবতীয় কলুষতা হতে পবিত্র হয়ে মারফতের নূরে আলোকিত হয়।এটা আমি হিমাদ্রীর কথা নয় এটা সূফিবাদে প্রমাণ দেয়।
সূরা আলা'র ১৪ ও ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে,"ক্বাদ আফলাহা মান তাজাক্কা অজাকারাস মা রাব্বিহি ফাসাল্লা"অর্থঃ নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি কল্যানপ্রাপ্ত হয়েছে যে নিজেকে পবিত্র করেছে এবং তার রবের স্মরণ ও সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে সফলকাম হয়েছে।অতএব,সে করল সালাত।তাই সালাত আদায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো মহান প্রভুর সাথে সংযোগ স্থাপন করা।আর সংযোগের ব্যাপারটি হলো মন ও ভাবের ব্যাপার।যে রাসূলের সাথে সংযোগ স্থাপন ককল তার স্বয়ং প্রভুর সাথে সংযোগ স্থাপন হলো।আর দয়াল রাসূলের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্যই গুরু বা মুর্শিদের শরণাপন্ন হতে হবে।যার নিকট আত্মসমর্পণ করলে দায়েমী সালাতের মাধ্যমে শুদ্ধ হয়ে স্বয়ং স্রষ্টার সাথে সৃষ্টি বিলীন হয়ে যেতে পারে।
আমাদের সকলকে মহান প্রভু কামেল গুরুর নেক নজর ভিক্ষা দিন।কেননা,"অলি আল্লাহর সাথে একদিনের সহোবত হাজার বছর ইবাদাতের চাইতে উত্তম"=>মাওলানা জালালুদ্দিন রূমী (রহঃ)।

মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলের ধর্মরাশির ভাসমান মূর্তিগুলোকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে তার নির্দেশনা অনুযায়ী সালাত আদায় করার দয়াটুকুন ভিক্ষা দিন।আমিন।

লেখা: হিমার্দ্রী
পোষ্ট : নুরে আলম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন