রবিবার, ২০ মে, ২০১৮

কাকিনা রাজবাড়ীর ইতিহাস

লালমনিরহাট জেলার ঐতিহ্যবাহী কাকিনা জমিদার বাড়ীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
-----------------------------------------------------------
কাকিনা—একটি সুপ্রাচীন, সুপ্রসিদ্ধ ও ইতিহাসখ্যাত জনপদের নাম। তদানীন্তন ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তে সভ্যতার যে সুপ্রাচীন ও সুপ্রসিদ্ধ লীলাভূমি গড়ে উঠেছিল, তারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল—কাকিনা। হিমালয়ের পাদদেশে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ধরলা নদী বিধৌত বৈচিত্র্যময় জনপদ কাকিনা—প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই সভ্যতার আলোয় উদ্ভাসিত ছিল। মহাভারত ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের তথ্যবিচারে যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকেই ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তের এই জনপদটিতে সভ্যসমাজের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। এরপর জনপদটিতে প্রাগজ্যোতিষ, লৌহিত্য, কামরূপ ও কামতা রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আরও পরে বর্মা ও পাল রাজবংশসহ বেশ কয়েকটি রাজবংশ এই অঞ্চলটিতে রাজত্ব স্থাপন করেছিল। ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতায় মহারাজ বিশ্বসিংহ [বিশু] ১৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে কোচবিহার রাজ্যের গোড়া পত্তন করেন। আর তৎকালে কোচবিহার রাজ্যের ৬টি পরগনার মধ্যে একটি পরগনা ছিল—কাকিনা।

জমিদারির প্রারম্ভে কাকিনা পরগনার আয়তন ছিল প্রায় ২৫০ বর্গমাইল। পরবর্তীতে এই পরিধি আরও বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৪০০ বর্গমাইল। বর্তমান কালের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা ব্যতীত প্রায় সমগ্র লালমনিরহাট জেলাই কাকিনা জমিদারির আওতাভূক্ত ছিল। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও রংপুরের মাহিগঞ্জসহ তৎকালীন ভারতবর্ষের আরও অনেক স্থানে কাকিনা জমিদারির জোত ও তালুক ছিল। উত্তরবঙ্গে একমাত্র নাটোরের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারি ছিল—কাকিনায়। তৎকালে কাকিনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও এর বিশাল প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড।

তবে কালের বিবর্তনের মধ্যদিয়ে যেমন একটি দেশ কিংবা জনগোষ্ঠীর নাম নির্ধারিত হয়, তেমনি কাকিনার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। আজকের ‘কাকিনা’ নামটি অতীতে কখনও কঙ্কনা বা কঙ্কানিয়া বা কান্কিনা বা কৈকিনা কিংবা কখনও কাকিনীয়া বা কাকিনী ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল। কাকিনা রাজ এস্টেটের দাপ্তরিক কাজের শেষদিন পর্যন্ত ‘কাকিনীয়া’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে কাকিনার রাজা মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরীর শাসনামলে দাপ্তরিক কাজকর্মের পাশাপাশি বর্তমানকালের ‘কাকিনা’ নামটিরও প্রচলন ছিল।

১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে মোগলদের দেওয়া সনদবলে কাকিনীয়া বা কাকিনা জমিদারির সূচনা হয়। সে সময় ঘোড়াঘাটের মোগল ফৌজদার ছিলেন বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খানের পুত্র এবাদত খান। তিনি কোচবিহারের রাজা মাহিন্দ্র নারায়ণের সঙ্গে এক যুদ্ধে কোচ রাজ্যের ৬টি পরগনার মধ্যে কাকিনা, ফতেপুর ও কাযিরহাট পরগনা ৩টি দখল করেন। তখন কাকিনা পরগনার চাকলাদার ছিলেন—ইন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী এবং দিল্লীতে মোগল সম্রাট ছিলেন—আওরঙ্গজেব। যাহোক, এবাদত খান পরগনা ৩টি দখল করে নেওয়ার পর কোচবিহারের নাজির শান্ত নারায়ণকে পরগনার কর বা খাজনা নির্ধারণপূর্বক কাকিনা জমিদারির বন্দোবস্ত করে নিতে বললে নাজির শান্ত নারায়ণ তাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করলে ফৌজদার এবাদত খান কাকিনা পরগনার চাকলাদার ইন্দ্র নারায়ণের এক প্রভাবশালী কর্মচারী রঘুরামের পুত্র রাম নারায়ণ চৌধুরীকে কাকিনা জমিদারির সনদ প্রদান করেন।

রাম নারায়ণ চৌধুরী ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাকিনার জমিদারি পরিচালনা করেন। এরপর তাঁর মৃত্যূ হলে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রাজা রায় চৌধুরী কাকিনা জমিদারির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। রাজা রায় চৌধুরী ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাকিনার জমিদার ছিলেন। এরপর তাঁর মৃত্যু হলে তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা রুদ্র রায় চৌধুরী ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জমিদারি পরিচালনা করেন। এরপর তাঁর একমাত্র পুত্র রসিক রায় চৌধুরী কাকিনার জমিদার হন। কিন্তু তাঁর কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী অলকানন্দা রায় চৌধুরানী কাকিনা জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের ২ বছর পর ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে কাকিনাসহ সমগ্র বাংলায় প্রচণ্ড খরায় সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন প্রজারা খাজনা দিতে না পারার কারণে অলকানন্দা রায় চৌধুরানীর পক্ষে জমিদারি পরিচালনা করা অসম্ভব হলে তিনি রাম দুলাল নামে এক ব্যক্তির নিকট জমিদারির ইজারাদার নিযুক্ত করে কোলকাতায় পাড়ি জমান। কিন্তু রাম দুলালের অত্যাচার ও উৎপীড়নে প্রজা সাধারণ অতীষ্ঠ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং কাকিনা কাচারি বাড়ী পুড়িয়ে দেয়। অবশেষে রাজ সৈন্যদের সহায়তায় রাম দুলাল পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান এবং এই সংবাদ পেয়ে অলকানন্দা রায় চৌধুরানী কোলকাতা থেকে কাকিনায় ফিরে রংপুরের তৎকালীন ইংরেজ কালেক্টর মূর সাহেবের নিকট ধর্ণা দিয়ে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর দত্তক পুত্র রামরুদ্র রায় চৌধুরীর নামে কাকিনা জমিদারিতে নামজারির ব্যবস্থা করেন।

রামরুদ্র রায় চৌধুরী ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাকিনার জমিদার ছিলেন। এরপর তাঁর পুত্র ভৈরব রায় চৌধুরী ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাকিনা জমিদারি পরিচালনা করেন। এভাবে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভৈরব রায় চৌধুরীর জ্যেষ্ঠপুত্র কালীচন্দ্র রায় চৌধুরী এবং ভ্রাতূুষ্পুত্র শ্রীনাথ রায় চৌধুরী ভাগাভাগি করে কাকিনা জমিদারি পরিচালনা করেন। ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে শ্রীনাথ রায় চৌধুরীর মৃত্যু হলে তাঁর একমাত্র পুত্র দ্বারকানাথ রায় চৌধুরী কাকিনার জমিদার নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তাই ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করলে ভৈরব রায় চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র শম্ভুচরণ রায় চৌধুরী কাকিনার জমিদার হন। অবশ্য তিনিও নিঃসন্তান ছিলেন। তবে তিনি কৈলাশ রঞ্জন রায় চৌধুরী এবং মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী নামে দু‘জন দত্তকপুত্র রেখে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে মারা যান।

শম্ভুচরণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ দত্তকপুত্র কৈলাশ রঞ্জন রায় চৌধুরী কাকিনার জমিদার হন। কিন্তু ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৮ বছর বয়সে কৈলাশ রঞ্জন রায় চৌধুরী মারা গেলে মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী কাকিনা জমিদারির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সরকার মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরীকে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করলে তাঁর একমাত্র পুত্র মহেন্দ্র রঞ্জন রায় চৌধুরী কাকিনার রাজা হন এবং তিনি কাকিনার সর্বশেষ রাজা ছিলেন। তাঁর শাসনামলে রাজ্যে আর্থিক সংকট দেখা দিলে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কাকিনা জমিদারি নিলামে ওঠে এবং ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে রাজা মহেন্দ্র রঞ্জন রায় চৌধুরী “কোর্টস অব ওয়ার্ডস”-এ জমিদারি ন্যস্ত করে সপরিবারে ভারতের কার্শিয়াং চলে যান এবং সেখানেই ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাকিনার জমিদারগণের আদি নিবাস ছিল—ফরিদপুরের ভূষণা পরগনার গাজনা গ্রামে। বর্তমানে সেই এলাকাটি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর। বিখ্যাত ইংরেজ পর্যটক বুকানন হ্যামিল্টন তাঁর রিপোর্টে কাকিনার জমিদারদের কোচবিহার রাজার আত্মীয় বলে উল্লেখ করেছেন।

কাকিনার জমিদারগণ প্রজাবৎসল, জনহিতৈষি ও সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। তাঁরা প্রজা সাধারণের পানীয় জলের সুব্যবস্থার জন্য অসংখ্য বড় বড় কুপ ও পুকুর খনন করেছিলেন—যেগুলোর দৃষ্টান্ত এখনও কাকিনায় দেখতে পাওয়া যায়। ইংরেজ পর্যটক বুকানন হ্যামিল্টন ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে কাকিনা পরিভ্রমণ করেছিলেন। তিনি তাঁর বৃত্তান্তে কাকিনাকে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে সুসজ্জিত জমিদারি বলে উল্লেখ করেছেন।

শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি কাকিনার জমিদারদের অকৃত্রিম অনুরাগ ছিল। জমিদারির শুরু থেকে কাকিনার প্রত্যেক জমিদার বিষয় সম্পত্তির পাশাপাশি শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিসহ নানা জনকল্যাণকর কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। অগ্রগতির এই ধারা পরবর্তীতে শম্ভুচরণ রায় চৌধুরীর হাতে পূর্ণতা পেয়েছিল। তাঁর আমলে কাকিনায় সাহিত্য-সংস্কৃতি ও প্রকাশনার  ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। তাঁর সময়ে নির্মিত “শম্ভুচরণ চ্যারিটেবল হসপিটাল”-টি ছিল জমিদারদের পরিচালিত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। এর ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসা সেবার সুবিধা ছিল। পরবর্তীতে এটি “রানী শান্তিবালা চ্যারিটেবল হসপিটাল” নামে পরিচিত হয়। আজও সেখানে একটি সুন্দর ক্লিনিক রয়েছে।

শম্ভুচরণ রায় চৌধুরী একজন বিদ্যানুরাগী জমিদার ছিলেন। তিনি নিজেও একজন সুপণ্ডিত ছিলেন। তাঁর আমলে কাকিনায় নিয়মিতভাবে সাহিত্য সভা বসত। আর সে সভায় হিন্দু-মুসলিম-ব্রাহ্ম সব ধর্মমতের পণ্ডিতদের সরব উপস্থিতি ছিল।

কাকিনার মহিমাকে আরও বিস্তৃত করেছিলেন—রাজা মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী। তিনি রংপুরের মাহিগঞ্জে “বঙ্গ বিদ্যালয়” নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিদ্যালয়টিকে “কৈলাশ রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়” নামে নামকরণ করে রংপুর শহরে স্থানান্তর করেন। বিদ্যালয়টি আজও রংপুরে তার শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। তাঁর আমলে কাকিনা জমিদারিতে মহিমাগঞ্জ, তিস্তা, মহেন্দ্রনগর, লালমনিরহাট, আদিতমারী, মোগলহাট ও কাকিনা রেলওয়ে স্টেশন স্থাপিত হয়। রাজা মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী “রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ”-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি “রংপুর থিয়েটার হল” নির্মাণের জন্য জমি দান করেছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় “রংপুর স্বারস্বত সভা” গড়ে উঠেছিল। তিনি এবং রংপুরের তাজহাট ও মন্থনার জমিদারদের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় “রংপুর ধর্মসভা” প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বগুড়া উডবার্ণ লাইব্রেরিতে বিপুল অংকের অনুদান দিয়েছিলেন।

পিতার মতই মহেন্দ্র রঞ্জন রায় চৌধুরীও উদার ও দানশীল রাজা ছিলেন। তিনি কাকিনাতে তাঁর পিতার নামকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে “কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করেন। আজও সেটি উত্তরাঞ্চলের সুপ্রাচীন ও সুপ্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠ হিসেবে চারদিকে তার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। রংপুর কারমাইকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় রাজা মহেন্দ্র রঞ্জন রায় চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল উল্লেখ করার মতো। তিনি কাকিনার পাবলিক লাইব্রেরি থেকে প্রায় ৫ হাজার অমূল্য বই কারমাইকেল কলেজে দান করেছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। তাঁর এ অনুদানের টাকায় তৎকালে “বেঙ্গল এম্বুলেন্স কোর” গঠন করা হয়েছিল। আর এই কোর বাহিনী মেসোপটেমিয়া অর্থাৎ ইরাক পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল। তিনি তাঁর পূর্ব পুরুষদের প্রবর্তিত সকল প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক ও জনকল্যাণকর কর্মকাণ্ডে করা অনুদান ও পৃষ্ঠপোষকতা তাঁর রাজত্বের শেষদিন পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছিলেন।

কাকিনা জমিদারির আজ সবকিছুই কেবলই স্মৃতি। স্মৃতির জানালায় চোখ মেলে তাই কোনো সহৃদয় পাঠক আসতে পারেন কাকিনায়। অবশ্য এখন আর কাকিনা জমিদারির কোনোই স্মৃতি কাকিনায় অবশিষ্ট নেই। তবে কাকিনা জমিদারির প্রাণকেন্দ্রে আজ গড়ে উঠেছে লালমনিরহাট জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ “কাকিনা উত্তর বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।” পাশাপাশি রয়েছে কাকিনা রাজার স্মৃতি বিজড়িত “কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়।” আরও রয়েছে—কাকিনা জনমিলন কেন্দ্র, কাকিনা মিশন হাউসসহ কাকিনার নয়নাভিরাম বড় বড় সব পুকুর। তবে ভগ্নদশা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে—কাকিনা রাজার হাওয়াখানা।

কাকিনা জমিদারির এসব স্মৃতি কেউ ঘুরে দেখতে চাইলে চলে আসতে পারেন কাকিনায়। কাকিনা জমিদার বাড়ীর ভগ্ন স্মৃতি দেখার পাশাপাশি দেখতে পাবেন—“কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর?”—এর রচয়িতা কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি বিজড়িত বসত বাড়ী।

বর্তমানে লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে পশ্চিমে ২০ কিলোমিটার লালমনিরহাট—পাটগ্রাম মহাসড়ক ধরে বাসে চড়ে কিংবা রংপুর বিভাগীয় শহর থেকে উত্তরে ২০ কিলোমিটার তিস্তানদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু দিয়ে পার হয়েও চলে আসতে পারেন কাকিনায়। আপনাদের শুভ আগমনের প্রত্যাশায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি। খোদা হাফেজ।

[কথিকাটি বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘সম্ভার’-এ “জানা-অজানা” সিরিজে গত ২০১২ খ্রিস্টাব্দের পহেলা জানুয়ারি প্রথম প্রচারিত হয়।]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন