শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮

সুফি তত্ত্বে সিয়াম

সিয়াম এর হাকিকত - ৫
( সুফি তত্বের বিশ্লেষণ)
রোজাদারের(সায়েমের) প্রকারভেদ:-
রমজানুল মোবারকে আমরা কমবেশী সবাই রোজা পালন করি । আমরা কোন ধরনের রোজাদার আসুন আমরা তা যাচাই বাচাই করে নিই ।
১. সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-সহবাস হতে বিরত থাকিলেই রোজার অবশ্য পালনীয় কার্য (ফরজ) সম্পন্ন হয় । ইহা সর্বনিন্ম শ্রেণীর রোজা । এ ধরনের রোজা প্রাণহীন দেহস্বরুপ । ইহা সাধারণ লোকের রোযা । এ সম্পর্কে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন - ''এমন বহু রোজাদার আছে যাহাদের ক্ষুধা তৃঞ্চার কষ্ট ব্যতীত রোজা হইতে আর কিছুই লাভ হয় না'' । (কিমিয়ায়ে সাআদাত : ইমাম গাজ্জালী(রহ:),পৃষ্টা-২১২)
২. কেবল পানাহার ও স্ত্রী-সহবাস পরিত্যাগ করিলে চলিবে না বরং দেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কে যাবতীয় পাপ ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখিতে হইবে । এরুপ করলে ইহা মধ্যম শ্রেণীর লোকের রোজা । ছয়টি বিষয়ে এই শ্রেণীর রোজার পূর্ণতা লাভ হয় । যথা:-
১) চক্ষু দ্বারা যে সকল বস্তু দর্শন করলে আল্লাহ ও রাসূলের দিক হতে মন ফিরিয়া যায় উহা দর্শন না করা । বিশেষ করে কামভাবে কারও দিকে দৃষ্টিপাত না করা ।
২) বেহুদা বকবক ও বেফায়দা কথা হতে জিহবা ও মুখকে সংযত করিয়া নিরব থাকা । তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া-কলহ বেহুদা কথার অন্তর্ভূক্ত ।
৩) অশ্লীল বাক্য শ্রবণ হতে কর্ণকে বিরত রাখা । মন্দ কথা, মিথ্যা কথা, মিথ্যা শপথ এবং গীবত যে শ্রবণ করে সে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির পাপের শরীক হয়ে থাকে যে এগুলো করে বা বলে।
৪) হাত-পা কে মন্দ কার্য হতে বাঁচিয়ে রাখা ।
৫) রোজার সময় রাতে পরিমিত আহার করা । দিবা-রাত্রের নির্ধারিত খাবার রাত্রেই খেয়ে ফেললে রোজা রাখিয়া কি লাভ হইবে ? কেননা খায়েশ(লালসা) দমন করাই রোজার উদ্দেশ্য এবং দুইবারের খাদ্য একবারে খাইলে খায়েশ আরো বৃদ্ধি পায় । পাকস্থলী খালি না হলে অন্তর পরিষকার হয় না । এজন্য রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন - ''পরিপূর্ণ উদর আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা অধিক নিকৃষ্ট ভান্ডার'' । (কিমিয়ায়ে সাআদাত : ইমাম গাজ্জালী(রহ:),পৃষ্টা-২১৩)
৬) ইফতারের পর রোজা কবুল হইবে কিনা এই ভয় অন্তরে রাখা ।
উপরোক্ত ৬টি বিষয় মানিয়া চলিলে মধ্যম শ্রেনীর রোজা পালিত হয়ে যাবে যা পরবর্তীতে উচ্চ শ্রেণীর রোজার দ্বার প্রান্তে লয়ে যাবে । এ সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেন - ''আমার বান্দা কেবল আমার জন্যই পানাহার স্ত্রী-সহবাস বর্জন করিয়াছে । একমাত্র আমিই ইহার বিনিময় প্রদান করতে পারি । ''(কিমিয়ায়ে সাআদাত : ইমাম গাজ্জালী(রহ:),পৃষ্টা-২০৮)
৩) আর এক শ্রেণীর রোজা রয়েছে যা সর্বোচ্চ শ্রেণীর রোজা । ইহা উচ্চ শ্রেণী লোকের রোজা । এই শ্রেণীর রোজার দুটি মৌলিক বিধান রয়েছে  আল্লাহ ও রাসূল ব্যতিত পার্থিব কোন বিষয়ে মন দিলেই রোজা এই শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত হবে না । যদিও পার্থিব আবশ্যক বিষয়ে মনযোগ দেওয়া অসঙ্গত নহে তথাপি ইহাতে রোজার উন্নততর মর্যাদা নষ্ট করে । এ সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেন - ''রোজা কেবল আমার উদ্দেশ্যেই রাখা হয় এবং আমি ইহার বিনিময় প্রদান করিব । ''(কিমিয়ায়ে সাআদাত : ইমাম গাজ্জালী(রহ:),পৃষ্টা-২০৮) আল্লাহ পাক আরোও বলেন- ''কামনা-বাসনা দমনকারীদিগকে আল্লাহ উহার বিনিময়ে যাহা প্রদান করিবেন তাহা অসংখ্য, অপরিমিত ও অসীম । ''(কিমিয়ায়ে সাআদাত : ইমাম গাজ্জালী(রহ:),পৃষ্টা-২০৮)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন