৪. প্রাণায়াম: প্রাণায়াম অর্থ প্রাণের আয়াম। প্রান হলো শ্বাসরুপে গৃহিত বায়ু আর আয়াম হল বিস্তার। প্রাণবায়ুকে আয়ত্ত করার জন্য শ্বাস প্রশ্বাসের সংযমকে প্রাণায়াম বলে। অনুশীলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গভীর ভাবে ও ছন্দোবদ্ধভাবে শ্বাস গ্রহণ করলে শ্বাসতন্ত্র বলিষ্ঠ হয়, স্নায়ুতন্ত্র শান্ত থাকে এবং কামন বাসনা হ্রাস পায়। মন মুক্ত হয়। অন্তরের কামনা বাসনা লোপ পেলে দেহাভ্যন্তরের দিব্য আগুন মহিমান্বিত হয়ে জ্বলে উঠে। আয়াম তিনটি পর্যায়ে হয়ে থাকে- (১) পূরক (২) রেচক (৩) কুম্ভক। প্রাণায়ামকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায় (১) সহজ প্রাণায়াম (২) লঘু প্রাণায়াম (৩) বৈদিক প্রাণায়াম (৪) রাজ যোগ প্রাণায়াম। যোগ ত্রয়ে উদ্ধৃত অষ্ট কুম্ভকই প্রাণায়ামের মধ্যে মুখ্য, নিরলস অনুশীলনের মাধ্যমে মনকে নিজের দাসত্বে আবদ্ধ করতে পারলেই প্রাণায়ামে কৃতকার্যতা আসে।
৫. প্রত্যাহার: প্রত্যাহার অর্থ ফিরিয়ে নেয়া। বাহ্যিক বিষয়বস্তু থেকে ইন্দ্রিয় সমূহকে ভিতরের দিকে ফিরিয়ে নেয়াকে যোগে প্রত্যাহার বলে। মানুষের মন সর্বদা বিষয় থেকে বিষয়ান্তরের দিকে ধাবিত হয়। এ সব বিষয় ইন্দ্রিয় দ্বারা সঞ্চিত হয়। ছন্দবদ্ধভাবে শ্বাস নিয়ন্ত্রন করতে পারলে এসব বিষয় থেকে মনকে মুক্ত করে ইন্দ্রিয় সংযম দ্বারা নিয়মিত প্রত্যাহার সাধন করে ইন্দ্রিয় সমূহকে বশে আনতে হয়।
৬. ধারনা: ধারনা অর্থ একাগ্রতা। কোন বিষয় আয়ত্ব করতে হলে চিত্তবৃত্তিকে বিষয়ান্তর থেকে প্রত্যাহার করে ঐ বিষয়ে একাগ্রতা স্থাপন করতে হয়। চোখ বন্ধ করে স্রষ্টার চিন্তা ও জপ করা বা কোনো একটি বিষয় নিয়ে তার গভীরে প্রবেশ করে একাগ্রভাবে চিন্তা করাকে সূক্ষ উপাসান বলে। প্রত্যাহার ও ধারনা এ দুটি স্তর একে অপরের পরিপূরক। একটি বস্তু বা চিন্তা থেকে মনকে সরিয়ে নেয়ার নাম প্রত্যাহার। পরক্ষণে অন্যকোনো চিন্তা বা বিষয়ে মনকে স্থির রাখার নাম ধারনা। মনকে একাগ্র করতে ধারনা সাহায্য করে। সঠিক ধারনা অভ্যাসে মনের ইচ্ছাশক্তি বাড়ানো সম্ভব। আবার কুলকুন্ডলিনীর শক্তি বৃদ্ধি করতে ধারনা অভ্যাস বিশেষ প্রয়োজন। মানবাত্মা সাধনার পথে চলে পরমাত্মাকে লক্ষ্য রেখে। ধারনা শক্তি ব্যতীত সাধনা অপূর্ণ থেকে যায়। সাধনায় সিদ্ধ হতে প্রতিনিয়ত ধারনা অভ্যাস বিশেষ প্রয়োজনীয়।
৭. ধ্যান: ধ্যান অর্থ নিরবচ্ছিন্ন গভীর চিন্তা। মন যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে স্রষ্টার চিন্তা করে তাহলে দীর্ঘ চিন্তনের পর অন্তিমে স্রষ্টার নিকটবর্তী হতে পারে। ধ্যানে দেহ, শ্বাস-প্রশ্বাস, ইন্দ্রিয়, মন, বিচার শক্তি, অহংকার সব কিছু স্রষ্টায় লীন হয়ে যায় এবং তিনি এমন এক সচেতন অবস্থায় চলে যান যার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া অসম্ভব। তখন পরম আনন্দ ছাড়া আর কোন কিছু অনুভূত হয় না। তখন তিনি অন্তরের আলো দেখতে পান। তখন তিনি নিজের কাছে এবং অন্যদের কাছে আলোময় হয়ে উঠেন।
ধ্যানের যে কোনো প্রক্রিয়াই মূলত ধারনা। ধারনার মনকে চেষ্টার দ্বারা ধ্যেয় বস্তুতে স্থির রাখা হয়, এই অভ্যাসের ফলে মন যখন নিজেই স্বত:স্ফূর্তভাবে ঐ বস্তুতে স্থির হয়ে যায় তখন ধারনা ধ্যানে পরিনিত হয়। যোগ শাস্ত্রে তিন প্রকার ধ্যানের উল্লেখ আছে। ১) স্থুল ধ্যান ২) সূক্ষ ধ্যান ৩) জ্যোতি ধ্যান।
৮. সমাধীঃ সমাধী অর্থ সম্পূর্নরূপে স্রষ্টায় চিত্ত সমর্পন। ধ্যানের পরিনতি হলো সমাধী। ধ্যান গভীর হলে ধ্যেয় বস্তু ও ধ্যানী অভিন্ন হয়ে উঠে। চিত্ত তখন ধ্যেয় বস্তুতে লীন হয়ে যায়। সেই লয় অবস্থাকে সমাধী বলে। সমাধী প্রাপ্ত হয়ে পরমাত্মার মিলন বা যোগ ঘটে। মন তখন সত্য ও অব্যক্ত আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠে। মনের সেই শান্তি বর্ননাতীত। এর সংগে কোন কিছুর তুলনা হয় না। এ অবস্থায় পাপ, পূণ্য, রিপু, দংশন, জরা, মৃত্যু, ব্যাধি থেকে মানবাত্মা মুক্তি লাভ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন