৪. হঠযোগ: ‘হ’ অর্থ সূর্য আর ‘ঠ’অর্থ চন্দ্র। সূর্যকে বলা হয় ডান দিক আর চন্দ্রকে বলা হয় বাঁ দিক। দেহের উপর যেমন সূর্যের প্রভাব আছে তেমনি চন্দ্রেরও প্রভাব আছে। হঠযোগে দেহের দুদিকের মিলন হয়। অন্যমতে ‘হ’অর্থ সূর্য মানে পিঙ্গলা নাড়ি । আর ‘ঠ’অর্থ ইড়া নাড়ি। ইড়া ও পিঙ্গলাকে অবলম্বন করে যে সাধনা সে সাধনাকে হঠ যোগের সাধনা বলে। মেরুদন্ডের ডান দিকে পিঙ্গলা এবং বাঁদিকে ইড়া এবং মধ্যখানে সুষুম্মা নাড়ী অবস্থিত। যোগের অঙ্গ ৮টি- যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারনা, ধ্যান ও সমাধি। শরীর বিশুদ্ধ না হলে হঠযোগ সাধনের উপযুক্ত হয়না। হঠযোগে সপ্তবিধ সাধনা বিধি বিবৃত হয়েছে-শোধন, দৃড়তা, স্থৈর্জ, ধৈর্য, লাঘব, প্রত্যক্ষ ও নির্লিপ্তি। ধৌতি, বস্তি, নেতি, নৌলিকী, ত্রাটক, কপালভাতি-এই ষটকর্ম আচরণে শরীর চৈতন্য সম্পন্ন হয় অর্থাৎ দেহ শুদ্ধি হয়। দেহ শুদ্ধির পর আসনসিদ্ধ হলে মুদ্রা অভ্যাস করতে হয়। মুদ্রা অভ্যাসে কুলকুন্ডলিনী শক্তি জাগরিত হয়। ষটচক্রস্থিত পদ্ম বিকশিত হয়, হৃদয়ের গ্রন্থিসকল ভেদ হয়। ষটকর্মদ্বারা ধেতি সিদ্ধ হলে প্রাণায়াম যোগের অনুষ্ঠান করতে হয়। প্রাণায়াম সিদ্ধ হলে ধ্যান। প্রথমে গুরুর ধ্যান, পরে, তেজোময় স্রষ্টার চিন্তা, পরে জ্যোতির (নূর) ধ্যান। বিন্দুময় জ্যোতি(স্রষ্টার) ধ্যানে জাগরিত কুলকুন্ডলিনী শক্তির প্রভাবে স্রষ্টার জ্যোতির (নূর) দর্শন উন্মেষ। ধ্যান যোগ সিদ্ধির পর সমাধি। যোগী শরীর থেকে মনকে পৃথক করে পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হবেন এ-ই হলো সমাধি। সমাধি দ্ধারাই মুক্তি লাভ সম্ভব হয়।
হঠ যোগী অহিংস পরায়ন, সত্যাশ্রয়ী, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস সম্পন্ন, জিতেন্দ্রিয়, ব্রম্মচারী, ক্ষমাদয়া, দানশীল, সর্বজীবে প্রেমময়, মিতাহারী, শৌচ সম্পন্ন, মিতাচারী, তপোনিষ্ট, ধর্মীয় শাস্ত্রে আস্থাবান।
মায়ার তুল্য বন্ধন নেই, জ্ঞানের তুল্য পরম বন্ধু নেই, অহংকারের তুল্য জগতে দ্বিতীয় শক্র নেই, তেমনি যোগ বলের তুল্য সম্পদ জগতে আর নেই।
যোগের অঙ্গ:
মহর্ষি পতঞ্জলির পাতঞ্জল যোগ দর্শনে অষ্টাঙ্গ যোগের যে ব্যাখা দিয়েছেন তা শ্বাশ্বত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
অষ্টাঙ্গ যোগের ৮টি অঙ্গ:
(১)যম (২)নিয়ম (৩)আসন (৪)প্রানায়াম (৫)প্রত্যাহার (৬)ধারনা (৭)ধ্যান (৮)সমাধি।
অষ্টাংগ সাধনার পর্যায় তিনটি। ১) বহিরঙ্গ সাধনা (২) অন্তরঙ্গ সাধনা (৩) অন্তরাত্মা সাধনা।
১. বহিরঙ্গ সাধনা: যম আর নিয়মে সাধকের ভাব আর আবেগ নিয়ন্ত্রিত হয়, জগতের অন্য সব মানুষের সংগে তার একটা ঐকতান সৃষ্টি হয়। আসনে দেহ ও মন সুস্থ সবল ও সতেজ হয়, তখন সাধন প্রকৃতির সংগে তার একটা ঐকতান অনুভব করেন। শেষে তার দেহ সচেতনতা লুপ্ত হয়ে যায়। দেহকে তিনি জয় করে আত্মার বাহন হিসেবে প্রস্তুত করেন। যম নিয়ম আসন তাঁর স্রষ্টানুসন্ধানের যাত্রা পথে তিনটি ধাপ। একে বলে বহিরঙ্গ সাধনা।
২. অন্তরঙ্গ সাধনা: পরের দুটি ধাপ অর্থাৎ প্রাণায়াম ও প্রত্যাহার সাধকের শ্বাস প্রশ্বাস নিয়মিত করে আর মনকে বশে আনে। তাতে তাঁর ইন্দ্রিয় সমূহ বৈষয়িক আকাংখার দাসত্ব বন্ধন থেকে মুক্ত হয়। এ দুটি সাধনাকে বলা হয় অন্তরঙ্গ সাধনা।
৩. অন্তরাত্মা সাধনা: ধারনা, ধ্যান ও সমাধী সাধককে তাঁর আত্মর অন্তরতম প্রদেশে নিয়ে যায়। সাধক তখন স্রষ্টানুসন্ধানে স্বর্গের দিকে তাকান না। তখন তাঁর উপলদ্ধি হয়, তাঁর স্রষ্টা আছেন অন্তরে আন্তরাত্মা নামে। শেষ তিনটি ধাপে সাধক তাঁর স্রষ্টার সংগে একীভূত হয়ে যান। এ তিনটি ধাপকে বলা হয় অন্তরাত্মা সাধনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন