রবিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৮

সুন্নত শব্দের পরিচয় প্রথম পর্ব

সুন্নাত শব্দের পরিচয় (১ম পর্ব)
***************************
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা দঃ এর মতানুসারী ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের নিকট প্রধান দুটি পালনীয় ধারার নাম ফরয ও সুন্নাত।  যারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের অনেকেই জানেন না এই শব্দগুলোর শাব্দিক অর্থ । সে কারনে অনেক সময় কিছু স্বার্থান্বেষী চক্রের কুচক্রী মানুষেরা ভুল ব্যাখ্যা দিলেও বুঝতে অক্ষম সাধারণ মানুষেরা  ভুলটাকেই শুদ্ধ হিসেবে মেনে নিয়ে জীবনের অপুরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 

সুন্নাত শব্দের শাব্দিক অর্থ প্রচলন, রীতিনীতি, আদেশ, হুকুম, নিয়ম ইত্যাদি।  ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় নবী মোস্তফা দঃ এর অনুসারীদের জন্য তাঁর হুকুম বা আদেশ পালন করাকে সুন্নাত বলে। 
পবিত্র কুরআন শরীফে সুন্নাত শব্দটি এভাবে এসেছে

سنة من قد ارسلنا قبلك من الرسلنا ولا تجيد لسنتنا تحويلا

সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৭
অর্থঃ আমরা আপনার পূর্বে যত রাসুল প্রেরন করেছি সবার নিকট একই নিয়ম পাঠিয়েছি,  এবং আমাদের নিয়মে কোন পরিবর্তন নেই। 
উপরোক্ত আয়াতে সুন্নাত শব্দের মাধ্যমে আল্লাহ জাল্লা তায়ালা নিয়ম কানুনের কথাই স্পষ্টভাষায় উল্লেখ করেছেন, সুতরাং সুন্নাত শব্দের অর্থ যে নিয়ম বা প্রচলন তাতে সন্দহের কোন অবকাশ নাই।

কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজে প্রচলিত সুন্নাত বা নিয়ম নিয়েই যত সন্দহের চিন্তাধারা সুশীল মগজে ঘুরপাক খায়। কারন পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের সুন্নাত শব্দের ব্যবহারের সাথে নিম্নের হাদিসের মিল না থাকার কারনে প্রতিনিয়তই সন্দেহের কালো মেঘে মনের আকাশ ঘোলা হয়।
হাদিস, "যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে কিয়ামতের দিন সে তার সাথে হাশরে উঠবে।  আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত ৪৩৪৭
খোলামেলা দৃষ্টিকোণ থেকে উপরের হাদিসে আদৌ কোন ভুল বা অসংগতি নেই কিন্তু একটু ভাবতে গেলেই ধর্মীয় প্রচলিত সুন্নাতের উপর হিমালয় সম খড়্গ নেমে আসে। 
যেমন ধরুন আমাদের সমাজে মুসলমানের প্রথম সুন্নাত দাড়ি রাখা,  আমি ১০০% একমত দাড়ি রাখা সুন্নাত বা প্রচলন বা নিয়ম।  কিন্তু এটা কি নবী মোস্তফা দঃ এর নিয়ম ? অবশ্যই না কারন নবী মোস্তফা দঃ এর জন্মের হাজার বছর পূর্বেও সাধু মনি ঋষিরা দাড়ি রেখেছেন। কোন কাজ বা নিয়ম প্রথম যিনি প্রচলন করেন ঐ কাজটা তাঁরই অনুসরণ।
যেমন ধরুন জুব্বা আরবে প্রথম প্রচলন ঘটে,  এখন কোন বাংগালি আরব থেকে এসে যদি সব সময় জুব্বা পড়ে তবেই কি জুব্বাটা বাংগালিদের প্রচলিত পোশাক হিসেবে কেউ মেনে নিবে??

তেমনিই দাড়ি ইসা মুসা দাউদ ইব্রাহিম ব্রহ্মা বিঞ্চু সবার মুখেই ছিল।  কারন সাধু যখন স্রষ্টার সংযোগে নিজেকে বিলিন করে দেয় তখন বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে তাঁর ভাবনার সময় হারিয়ে ফেলে। তখন তার দাড়ি গোফ চুল নখ স্বাভাবিক ভাবেই বড় হতে থাকে এ ব্যপারে সে বেখবর। সুতরাং দাড়ি কিছুতেই রাসুল দঃ এর নিয়ম বা সুন্নাত হতে পারেনা।  এটা বিধর্মীদের একটা প্রচলন।

ঠিক তেমনিই পাঞ্জাবি একটি হিন্দুধর্মীয় মানুষের পোশাক।  ভারতে পাঞ্জাব রাজ্য থেকে এই পোশাক আবিষ্কৃত হয় বলেই এর নামকরন করা হয়েছে পাঞ্জাবি।
অনেকে মনে করেন এবং আমাদের দেশের আরবি উর্দু পড়া মাথা মোটা মৌলবীরা বলে থাকেন পাঞ্জাবি নবীর সুন্নাত,  তারা ইতিহাস জানেননা বলেই ভুল ফতুয়ার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। নবী মোস্তফা দঃ জীবনে কোন দিন পাঞ্জাবে আসেওনি এবং পাঞ্জাবি দেখেওনি।  মহানবী দঃ সারা জীবন এহরামের কাপড় তথা সেলাই বিহীন কাটা কাপড় পরিধান করতেন ইভেন জীবনে প্রথম যুদ্ধ তথা বদরের যুদ্ধেও তিঁনি কাটা কাপড় পরিধান করে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন।

মাঝে মাঝে আরবের জুব্বা তিনি গায়ে দিতেন তবে খুব কম সময়ই তিনি জুব্বা পড়তেন।  অথচ নবী মোস্তফা দঃ এর জন্মেরও হাজার হাজার বছর পূর্বে আবিষ্কার হওয়া বিধর্মীদের পাঞ্জাবি আজ আমাদের সমাজে নবীর সুন্নাত হিসাবে বেশ সমাদৃত এবং অবহেলাকারিকে কঠোর সমালোচনার মুখে পতিত হতে হয়।  মহানবীর বিরুদ্ধে এত বড় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কি অনুসরণ করছে এরা?  আমার বোধগম্য নয়।

আর যারা উপরের মিথ্যা হাদিস প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তারাইবা কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসব করছে তারাই ভাল জানে। 
মহানবী দঃ যদি উপরের হাদিসটি বলতেন তাহলে তিঁনি কোনদিন জুব্বা গায়ে দিতেননা, কারণ মহানবীর জন্মের অনেক পূর্বই বিজাতী বা বিধর্মীরা জুব্বা পড়েছেন।  তো নবী কি করে বিধর্মীদের অনুসরণ করবে ? ইহুদিদের প্রচলিত জুব্বা নবী গায়ে দেওয়াতে যদি ইহুদিদের সাথে নবীর হাশর হয় তবে উম্মতের কি হবে?
বিজাতীয় কাজ করলেই যদি বিজাতীদের সাথে হাশর কিয়ামত হয় তবে মুসলমানের নিজস্ব কিইবা আছে,  সবইতো বিজাতীয়।  হাতের ঘড়ি মোবাইল  দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত ৯৫ % দ্রব্যইতো বিজাতীয় আবিষ্কার।  যেই মাইক দিয়ে মৌলবী এই ফতুয়া দিল সেই মাইক সাউন্ডও বিজাতীয়,  যেই কলম দিয়ে লিখে ফতুয়াটা জারি করলো সেই কলমটাও বিজাতীয়,  যেই খাদ্য খেয়ে বাংলাদেশে তুমি ফতুয়া দিচ্ছ সেই খাদ্য ও বিজাতীয় কারন ভাত হিন্দুদের আবিষ্কৃত ৪০০০ বছর পূর্বের একটি খাবার।  মহানবী জীবনে কোনদিন ভাত খায়নি এবং ভাতের সাথে পরিচিত ছিলেননা।  আরবে তখন ভাতের নাম মানুষ জানতোনা।

এই ভাবে বর্তমান বাজারের প্রচলিত সুন্নাত গুলি যদি নিজে নিজে গভেষনা করেন দেখবেন আমরা কত ভুলের দরিয়ায় সাঁতার কাটছি। 
প্রিয় দরদী মহল আগামী পর্বে আরো কিছু ভুল প্রচলনের মিথ্যা তথ্য সম্পর্কে লিখবো বলে আশা রাখি সংগে থাকার জন্য বিশেষ অনুরোধ করছি। 
যদি মনে করেন সত্য প্রচার করা উচিত তাহলে নিশ্চয় শেয়ার করবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন