শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮

যোগ ৩/ পর্ব

যোগের অঙ্গ ৮টি:

১. যমঃ যম অর্থ সংযম। অষ্টাংগ যোগের এই অংগটি গুরুত্বপূর্ণ। যম এর উপাদান ৫টি।

(ক) অহিংসা: অহিংসা মানে কেবল বল প্রয়োগে বিরতি নয়, অভয় এবং অক্রোধও। নিখিল বিশ্বের প্রতিটি বস্তুর প্রতি ভালোবাসা।

(খ) সত্য: সত্যই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ধর্ম। মন যদি সত্য চিন্তা করে জিহবা যদি সত্য কথা বলে এবং সমগ্র জীবন যদি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে স্রষ্টার সঙ্গে মিলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

(গ) অস্তেয়: অস্তেয় মানে অচৌর্য। কায়মানোবাক্যে লোভ না করা, কোন দ্রব্য চুরি না করা, ন্যায় পথে, সৎপথে থেকে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে জীবনযাপন করাই অস্তেয়।

(ঘ) ব্রম্মচর্য: ব্রম্মচর্য অর্থ শাস্ত্রানুশীলন এবং ভোগ কামনা বর্জিত পবিত্র সংযত জীবনযাপন। সকল প্রকার শারীরিক ও মানসিক সংযম এবং কথোপকথনের এমন কি শ্রবণের সংযমই ব্রম্মচর্য। এক কথায় দেহে, মনে ও কথায় মিতাচারই ব্রম্মচর্য। জীবনে ব্রম্মচর্য প্রতিষ্ঠা করলে দেহে শক্তি পাওয়া যায়, মনে সাহস পাওয়া যায়, বুদ্ধি বিকশিত হয়। জ্ঞানের আলো জ্বলে উঠে। স্রষ্টার নৈকট্য পাওয়া যায়।

(ঙ) অপরিগ্রহ: অপরিগ্রহ মানে গ্রহণ না করা। বৃথা দান গ্রহণ না করা, অপরের নিকট থেকে কারণে বা অকারণে কোনো বস্তু বা কোনো প্রকার সাহায্য গ্রহণ না করাই অপরিগ্রহ। পরিগ্রাহিতা সত্ত্বাকে হীন করে, দাতার বশ্যতা স্বীকার করতে হয়। স্রষ্টার প্রতি আস্থা থাকলে পরনির্ভরতা প্রয়োজন হয় না।

২.  নিয়ম: অষ্টাংগ যোগের দ্বিতীয় ধাপ নিয়ম। নিয়ম অর্থ নিয়মানুবর্তিতার দ্বারা আত্মশুদ্ধি। আসলে নিয়ম হচ্ছে, ব্যক্তিগত আচরন বিধি। এর উপাদান ৫টি।

(ক) শৌচ: সর্ব  প্রকার পরিচ্ছন্নতা রক্ষাই শৌচ। যোগীরা এই শৌচকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীক। বাহ্যিক শৌচে বলা হয়েছে, আমাদের বাহিরের শরীর শুধু নয়, আমাদের পোশাক এবং ব্যবহারিক সব কিছুই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কথা। এমন কি যে পরিবেশে আমরা থাকি, তাকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শরীর গঠনের জন্য সাত্ত্বিক আহারের প্রয়োজন। মনের শোধন বা নির্মলতাই অভ্যন্তরিক শৌচ। শৌচকে ঠিক মত উপলদ্ধি করতে পারলেই একাগ্রতা ও আত্মদর্শনের যোগ্যতা লাভ করা যায়। ঈর্ষা, দ্বেষ, ঘৃনা, ক্রোধ, লালসা, লৌলুপতা, কামুকতা, অহংকার ইত্যাদি মন থেকে দূর করতে না পারলে মন শূচি হয় না। শুচি মনে একাগ্রতা আসলে সাধনা জয় করা য়ায়।

(খ) সন্তোষ: সন্তোষ অর্থ সম্যক তৃপ্তি । চাহিদার সমুদ্রে নিজেকে হারিয়ে না ফেলে আপন অবস্থাতে সন্তুষ্ট থকাই সন্তোষ। সর্ব প্রকার দ্বন্দ্ব থেকে মনকে স্থির রাখাই সন্তোষ। সন্তোষ সুপ্রতিষ্ঠিত হলে প্রশান্তি লাভ করা যায়।

(গ) তপস্যা তপ: হচ্ছে কোন সংকল্পসিদ্ধির উদ্দ্যেশ্য কঠোর সাধনা। সর্ব প্রকার সংযম অভ্যাস। উপবাস এবং অন্যান্য প্রকারে শরীর, মন এবং ইন্দ্রিয় সমূহকে শুদ্ধ রাখাই তপস্যা। বাক সংযম দ্বারা তপস্যা সিদ্ধ হয়। তপস্যার দ্বারা শরীর ও ইন্দ্রিয়ের এবং জড়তা দোষ দূর করতে পারলে সিদ্ধি প্রাপ্তি সম্ভব হয়।

(ঘ) স্বাধ্যায়: স্বাধ্যায় মানে নিজেকে জানা। স্ব-অর্থ স্বয়ং আর অধ্যায় অর্থ অধ্যয়ন। স্বাধ্যায় থেকে যে সব মহান চিন্তার উদ্ভভ হয় তা তাঁর জীবনের ও সত্ত্বায় অঙ্গীভূত হয়। তিনি উপলদ্ধি করেন এই নিখিল সৃষ্টি ভোগের জন্য নয়, ভক্তির জন্য। যে শক্তি তাকে চালিত করছে সে শক্তি বিশ্ব ব্রম্মান্ড চালিত করছে।

(ঙ) স্রষ্টার প্রনিধান: প্রনিধান মানে অর্পন। সমস্ত কর্ম ও ইচ্ছা সৃষ্টিকর্তার উপর অর্পন করার নাম স্রষ্টার প্রনিধান।

৩. আসন: স্থির সুখকর, শরীরিক ও মানসিক অবস্থাই আসন। ঋষিদের আবিস্কৃত আসনের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রাখা সম্ভব। দীর্ঘায়ু লাভের জন্য আসন, মুদ্রা অভ্যাস বিশেষ ফলপ্রদ। বিভিন্ন গ্রন্থে চুরাশি লক্ষ আসনের উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ষোল শত আসন শ্রেষ্ট। মহর্ষি পতজ্ঞলির যোগ সূত্র গ্রন্থে ১৮৫ টি যোগ সূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়।

যোগাসন অভ্যাসের উদ্দেশ্য: সাধারনত শরীরকে সুস্থ রাখা, রোগাক্রান্ত শরীরকে রোগমুক্ত করা এবং  পরমাত্মার সংগে জীবাত্মার মিলন সাধিত করা। আসন দুই প্রকার-১. ধ্যান্যাসন ২. স্বাস্থ্যাসন। এ ছাড়া ও অনেক মুদ্রা আছে যা অধিক প্রচলিত, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের অভ্যাসযোগ্য এবং ফলপ্রদ। আসন কেবল যে অরোগ ব্যক্তিরাই করবেন তা নয়। যে কোন ব্যক্তি আসন করতে পারেন। নারী পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, রোগী-অরোগী, যে কোন অবস্থার লোক করতে পারেন। তবে আসনে ফল পেতে হলে চাই নিরলস সাধনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন