সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বিশ্বসেরা আলেমদের মতে ইসলামে সংগীত হারাম নয়!


জবাবটা সিম্পল। ইমামরাই দাবি করেন, “মোহাম্মদী ইসলাম একটি ফিৎরাতি (অর্থাৎ প্রাকৃতিক) ধর্ম”। সংগীত মানুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। সেজন্যই প্রতিটি দেশ জাতি সভ্যতার ব্যতিক্রমহীন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ সংগীত। যখন মানুষের ভাষা ছিল না, কাপড় ছিল না, তখনও মানুষ বিভিন্ন উচ্চারণে গান গেয়েছে, অতীত সভ্যতার গুহার দেয়ালে সেসব চিত্র আজও উৎকীর্ণ। এবং সেজন্যই সৌদি, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, আমিরাত, জর্দান, সিরিয়া, মিসর, ইরাক, প্যালেস্টাইন, ইয়েমেনসহ প্রতিটি মুসলিম দেশ ও প্রতিটি দেশের জাতীয় সংগীত আছে।

অসুখ নিয়ে ডাক্তারদের মধ্যে মতভেদ হলে রোগীর যে করুণ দশা সংগীত নিয়ে আমাদেরও তাই। বিভিন্ন আলেম বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন, জনগণের কে কার মতামত মানবেন সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমরা মানছি ‘দুনিয়ার সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ইসলামী বিশেষজ্ঞ’দের মতামত, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাণ্ড মুফতি (১৯৮২ – ১৯৯৬) শেখ জাদ আল হক এবং ডক্টর ইউসুফ কারযাভীর মত।

ইউসুফ কারযাভী তার প্রজ্ঞার জন্য সুপ্রসিদ্ধ। তার পরিচয় দেখুন-

১. বিশ্বের সর্ববৃহৎ অন লাইন ফতোয়া-সংগঠন “ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফতোয়া অ্যান্ড রিসার্চ”-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট,

২. আন্তর্জাতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড-এর উপদেষ্টা ছিলেন,

৩. আন্তর্জাতিক আলেম-সংগঠন “ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স”-এর চেয়ারম্যান ছিলেন,

৪. বিশ্বময় “ইসলামী ব্যাঙ্কিং” এর প্রভাবশালী আলেম,

৫. কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান,

৬. “মুসলিম-বিশ্বের নোবেল” নামে বিখ্যাত “বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার” পদক পান,

৭. “ব্যাংক ফয়সল” পুরস্কার লাভ করেন।

৮. ব্রুনাই সরকার তাকে “হাসান বাকলি” পুরস্কার প্রদান করে।

মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের (প্রয়াত) গ্র্যান্ড মুফতি (১৯৮২ – ১৯৯৬) শেখ জাদ আল হক (বিস্তারিতের জন্য সার্চ করুন “Al Azhar university – music in Islam, দি ইসলামিক টেক্সট ইনস্টিটিউট) এর মতে- “অনৈতিক ও গুনাহ-এর কর্মকাণ্ডের সহিত যুক্ত না হইলে, কিংবা সেই বাহানায় মানুষকে হারামের দিকে না টানিলে, কিংবা মানুষকে ফরজ ইবাদত (আল ওয়াজিবাত) হইতে সরাইয়া (বা ভুলাইয়া) না দিলে সংগীত শোনা, সংগীত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা, এবং বাদ্যযন্ত্র বৈধ”।

ডক্টর কারযাভীও একই কথা বলেছেন- “কাজী আবুবকর ইবনুল আরাবী বলিয়াছেন ‘গান হারাম হওয়া পর্যায়ে একটি হাদিসও সহীহ নহে’। ইবনে হাজম বলিয়াছেন – ‘এ পর্যায়ের সকল বর্ণনাই বাতিল ও মনগড়া রচিত’… এ পর্যায়ে বর্ণিত নিষেধমূলক হাদিসগুলি সমালোচনার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ….বহুসংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ীন গান শুনিয়াছেন,… যে গানের সাথে মদ্যপান, ফষ্টিনষ্টি ও চরিত্রহীনতার মতো কোনো হারাম জিনিসের সংমিশ্রণ হয় সেই গান হারাম… রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেন- ‘কার্যাবলীর ভালোমন্দ নির্ভর করে তাহার নিয়তের ওপর।’ কাজেই যেই লোক এই নিয়তে গান শুনিল যে তাহার দ্বারা গুনাহের কাজে উৎসাহ পাওয়া যাইবে তাহা হইলে সে ফাসিক। পক্ষান্তরে যেই লোক স্বভাব মেজাজের সুস্থতা লাভের উদ্দেশ্যে শুনিল, আল্লাহর আনুগত্য কাজে শক্তি সাহস পাওয়ার এবং ভালো ও সৎকাজে আগ্রহ ও উৎসাহ বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে শুনিল, তাহার এই কাজ নিশ্চয়ই অন্যায় বা বাতিল নহে। আর যেই ব্যক্তি না আল্লাহনুগত্যের নিয়তে শুনিল না নাফরমানি নিয়তে, তার এই কাজ নিষ্ফল কাজের পর্যায়ে গণ্য।” (ইসলামে হালাল হারামের বিধান- পৃষ্ঠা ৪০৬ – ৪১১)

এবারে কোরান।

সংগীতের আরবী হচ্ছে “মুসিকি”, সারা কোরানে ওই “মুসিকি” শব্দটাই নেই। কোরান কোথাও সংগীতকে নিষিদ্ধ করেনি অথচ “সঙ্গীত হারাম” দাবি করা হয় কোরানের দুটো আয়াত দিয়ে-

(১) সুরা লোকমান ৬ নম্বর আয়াত− “একশ্রেণির লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ হইতে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে,

এবং

(২) বনি ইসরাইল ৬৪ নম্বর আয়াত (আল্লাহ শয়তানকে বলছেন) −“তুই তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ দ্বারা, অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে সত্যচ্যুত করে তাদেরকে আক্রমণ কর।”

সঙ্গীত-বিরোধীরা বলেন সুরা লোকমান ৬-এর অবান্তর কথাবার্তা-ই নাকি সঙ্গীত (মওলানা মুহিউদ্দিনের কোরানের অনুবাদ, পৃঃ ৭৮৩ ও ১০৫৩-৫৪)। কি হাস্যকর! আম জিনিসটা আম-ই। জামও নয়, কাঁঠালও নয়। অবান্তর কথাবার্তা অবান্তর কথাবার্তাই, অন্যকিছু নয়। একই খেলা করা হয়েছে বনি ইসরাইলের ৬৪ নম্বর আয়াত নিয়েও। আয়াতটা হলো, মানুষকে পথভ্রষ্ট করার ব্যাপারে আল্লাহ শয়তানকে অনুমতি দিচ্ছেন: “তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর”। অথচ এর অনুবাদ করা হয়েছে: “তুই তোর…রাগ-রাগিনী গান-বাজনা ও বাদ্যবাজনা দ্বারা …।”

সংগীত-বিরোধী হাদিসগুলো ভিত্তিহীন তা আমরা বিশ্ববরেণ্য ইসলামী স্কলারদের কাছ থেকে শুনলাম। সংগীতের পক্ষে অজস্র হাদিস আছে, লম্বা হয়ে যাবে বলে উদ্ধৃতি দিচ্ছিনা। এবারে চলুন আরো কিছু দলিল দেখা যাক।

১. অখণ্ড ভারতের সর্বোচ্চ ইসলামি নেতাদের অন্যতম, ভারতীয় কংগ্রেসের দুইবারের সভাপতি, কলকাতার ঈদের নামাজ পড়ানোর পেশ ইমাম মওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেছেন: “পয়গম্বর দাউদ (আঃ)-এর কণ্ঠস্বর অত্যন্ত মিষ্টি ছিল। তিনি সর্বপ্রথম হিব্রু সংগীতের সংকলন করেন ও মিশরের ও ব্যাবিলনের গাছ হইতে উচ্চমানের বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবনা করেন”। (তর্জুমান আল্ কুরান, ২য় খণ্ড পৃঃ ৪৮০।)

২. “হজরত ওমর(রঃ)-এর আবাদকৃত শহরের মধ্যে দ্বিতীয় হইল বসরা। আরবি ব্যাকরণ, আরূয শাস্ত্র এবং সংগীতশাস্ত্র এই শহরেরই অবদান” (বিখ্যাত কেতাব ‘আশারা মোবাশশারা’, মওলানা গরীবুল্লাহ ইসলামাবাদী,  ফাজেল-এ দেওবন্দ, পৃষ্ঠা ১০৬।)

৩. ইমাম গাজ্জালী: “নবী করিম (সাঃ) হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) সম্পর্কে বলিয়াছেন − তাঁহাকে হযরত দাউদ (আঃ) এর সংগীতের অংশ প্রদান করা হইয়াছে।” (মুরশিদে আমিন, পৃষ্ঠা ১৭০ − এমদাদিয়া লাইব্রেরি)

এরকম অজস্র দলিল আছে। ‘অশ্লীল আদেশ শয়তান দেয়’ (সুরা নূর ২১)। কাজেই সংগীতসহ শ্লীল কোনোকিছু হারাম হবার প্রশ্নই ওঠেনা। গানের কুৎসিৎ কথা, কুৎসিৎ অঙ্গভঙ্গি বা গানের অতিরিক্ত নেশায় জীবনের ক্ষতি ইত্যাদির সীমা টানেননি ধর্মান্ধরা, পুরো সংগীতকেই ঢালাওভাবে বাতিল করেছেন। করে লাভ কিছুই হয়নি বরং সংগীত আজ সুবিশাল বিশ্ব-ইন্ডাস্ট্রি। দুনিয়ায় কোটি কোটি সংগীতপ্রেমী পরিবার পালছেন, বাচ্চাদের বড় করছেন, প্রতিভার বিকাশ ঘটাচ্ছেন। সংগীত হলো আমাদের সসীম জীবনে এক টুকরো অসীমের ছোঁয়া। চারদিকের আকাশবাতাস সাগর-পর্বত গ্রহ-নক্ষত্র, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এক বিপুল সুরস্রষ্টার মহাসংগীত। তাই, গান শুনুন এবং বাচ্চাদের গান শোনান। গান করুন এবং বাচ্চাদের গান শেখান। গান যে ভালবাসে না, সে মানুষ খুন করতে পারে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ হারাম নয়। ‘আমি বাংলার গান গাই’, ‘বাড়ির পাশে আরশিনগর’, ‘কান্দে হাছন রাজার মন ময়না’, মায়েদের মধুকণ্ঠে ‘আয় আয় চাঁদমামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’ হারাম হবার প্রশ্নই ওঠেনা। শ্লীল সংগীত ইসলামে হারাম নয়।

‘কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ইসলামে নিষিদ্ধ’ (মায়েদা ৭৭, নিসা ১৭১ ও বিদায় হজ্বের ভাষণ)। সঙ্গীত হারাম মনে করলে শুনবেন না, অসুবিধে কী। কিন্তু যারা সংগীত ভালোবাসেন, সংগীতের পক্ষের বিশ্ববরেণ্য ইসলামী স্কলারদের কথা বিশ্বাস করেন, তাদেরকে আঘাত করাই সেই ইসলাম-বিরোধী বাড়াবাড়ি।

 

মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০

পুল সিরাতের গোপন রহস্য!

পুল সিরাতের গোপন রহস্য। সমাজের প্রচলিত পুল সিরাতের কি আদৌ কোন অস্তিত্ব আছে?

পুল_সিরাত একটি মিশ্রিত শব্দ, পুল ফার্সী শব্দ এর অর্থ ; সেতু।সিরাত আরবী শব্দ এর  অর্থ রাস্তা, পথ।আমাদের দেশে শব্দ দু'টিকে একত্রিত করে পুল_সিরাত বলা হয়ে থাকে। মূলত  দু'টি শব্দ একই প্রকার  অর্থ  বহন করে। পুলসিরাত শব্দটির অর্থ দাড়ায় ;যে রাস্তা পুলের ন্যায়। প্রচলিত ধারনা মতে, পুলসিরাত বলতে -জাহান্নামের উপরে বিস্তৃতি এমন এক সেতু বুঝানো হয়,যা চুলের চেয়ে চিকনএবং হীরার চেয়েও ধারালো। এ পুল পার না হয়ে বেহেস্তে যাওয়া যাবে না। এ সুদীর্ঘ  পুল পার হতে ৩০ হাজার বছরের প্রয়োজন এবং তার তিনটি অংশে বিভক্ত। ১ম অংশ  উপরের দিকে, ২য় অংশ সমতল এবং ৩য় অংশ নীচের দিকে ঢালু।পূণ্যবানগন বিদ্যুৎ গতিতে এ পুল পার হয়ে বেহেস্ত লাভ করবেন।পক্ষান্তরে, জাহান্নামীরা যথা সাধ্য চেষ্টা করেও এ পুল অতিক্রম করতে পারবে না। বরং এর সুক্ষতার কারনে নিমিষেই টুকরা টুকরা হয়ে জাহান্নামে পতিত হবে। 

পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফের কোথাও  পুল_সিরাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি যেমন কোরআনে বলা হয়েছে,  

صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ 

অর্থঃ সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। (১; ৫/৬)

সিরাতে বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, 

وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۦنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَ وَحَسُنَ أُو۟لَٰٓئِكَ رَفِيقًا

অর্থঃ আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম।(৪ ;৬৯)

অন্যত্র বলেন, 
ِ وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُۥ وَلِيًّا مُّرْشِدًا

 তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।(১৮;১৭)

বস্তুতঃ নবী রাসুল ও মহামানবগনের অনুসৃত পথই হলো সিরাতুল মুস্তাক্বিম। কোন মানুষ আল্লাহ মনোনীত মহামানবগের সান্নিধ্যে গমন করে সবক নেয়ার পরে মোর্শেদের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে রুহানি যোগসূত্র স্থাপন করে অবিরাম ফায়েজ বরকত, রহমত ও নেয়ামত লাভ করতে পারে। কিন্তু কোন কারনে যদি তার মনে মহামানবগনের প্রতি বিশ্বাসে ত্রুটি সৃষ্টি হয়ে সে রুহানী যোগসূত্র হারিয়ে ফেলে, তখন সে সিরাতুল মুস্তাক্বিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে পতিত হয়। এতে সে চরম অশান্তির মাঝে নিপতিত হয়। 

আমরা বিশ্বাস করি, মানুষের মৃত্যুর পরে কোন ইবাদত থাকে না, আবার এ-ও বিশ্বাস করি যে মৃত্যুর পরেই পুলসিরাত পার হতে হবে। প্রকৃত পক্ষে মৃত ব্যক্তির দেহের কোন ক্রিয়া থাকে না, তার আত্মার উপরেই সব কিছু হয়ে থাকে। আর আত্মাকে পরিত্যক্ত দেহে কখনো প্রবেশ করানো হয় না। 

পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে ; তেমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তাকে উহা পার  হতে হবে না। এটা তোমার প্রতিপালকের অবধারিত ফয়সালা। তারপর আমি ধর্ম ভীরুদেরকে নিস্তার দিবো এবং অত্যাচারিতদেরকে অধঃমুখে দোযখে নিক্ষেপ করবো। ( ১৯;৭১/৭২)

হাদিস শরীফে সিরাত প্রসংগে বলা হয়েছে, সিরাতের উপর মু'মিনদের বিশেষ সংকেত হবে, হে রবি রক্ষা করো রক্ষা করো। (তিরমিজি শরীফ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা -৬৯)

উপরোক্ত আলোচনার পাশাপাশি ব্যাক্তি জীবনেও পুল -সিরাতের অপূর্ব মিল রয়েছে, মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হায়াতে জিন্দিগিতে সিরাতুল মুস্তাক্বিম বা আলোর পথে পরিচালিত হয়ে ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত  থাকাই এক প্রকার পুলসিরাত। আর পুলসিরাত পার হওয়া বলতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর কায়েম থাকা এবং ঈমান নিয়ে মৃত্যু বরণ করাকে বুঝায়।এই ঈমান আল্লাহর সুক্ষ নূর বিশেষ। মনের সামান্যতম সন্দেহই উহাকে নিভিয়ে মানুষকে ঈমানহারা করে অন্ধকারে নিপতিত করতে পারে। এ জন্যই বলা হয়েছে - উহা চুলের চেয়েও চিকন  এবং হীরার চেয়েও ধার। মুমিন বান্দাদের যে দুনিয়াতে দুঃসহ কঠিন সময় অতিক্রম করে পরকালের জান্নাতে প্রবেশ করতে হবে, এসম্পর্কে  হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, 

দুনিয়া মুমিনের জন্য যন্ত্রনাময় স্থান এবংকাফেরের জন্য বেহেস্ত। (মুসলিম শরীফ, ২য় খন্ড,পৃষ্ঠা -৪০৭; মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা -৪৩৯)

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানব জীবনে  ৩টি অধ্যায় রয়েছে। যথা (১) শৈশব থেকে যৌবন,(২) যৌবন থেকে প্রৌঢ়,ও (৩)প্রৌঢ় থেকে বার্ধক্য। 

মানব জীবনের এ তিনটি কালকেও পুলসিরাতের সাথে তুলনা করা যায়। যেমন; প্রথম অংশটি উপরের দিকে অর্থ্যাৎ -শৈশব থেকে যৌবন কাল পর্যন্ত মানুষ ঈমানের উপর কায়েম থাকার জন্য মহামানবগনের সাহচর্যে গিয়ে উত্তম চরিত্র গঠনের লক্ষ্যে কঠিন সাধনা করে থাকে। এ সময়ে মানুষের ভিতরে নৈতিকতা ও পাপ পূণ্য সম্পর্কে যে ধারনার সৃষ্টি হয়,তা আজীবন তার মনে ক্রিয়াশীল থাকে। দ্বিতীয় অংশটি সমতল অর্থ্যাৎ - যৌবন থেকে প্রৌঢ় পর্যন্ত বয়স কালে জীবনের প্রথম অংশে গড়ে তোলা নীতি ও চরিত্রের ধারা অনুসারে জীবন পরিচালনা করে জীবনে পূর্ণতা আনয়ন করে থাকে এবং তৃতীয় অংশটি নীচের দিকে অর্থ্যাৎ -প্রৌঢ় থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত মানুষের দেহের অবনতি ঘটে এবং কর্মক্ষমতা লোপ পেতে থাকে । 

এমতাবস্থায় মানুষের নতুন কিছু করার থাকে না। জীবনের প্রথম অংশে অর্জিত চরিত্রের আলোকে দ্বিতীয় অংশের পূর্ণ বয়সে সঞ্চিত কর্মফলের মাধ্যমে মানুষের জীবনের তৃপ্ত অংশ অতিবাহিত হয়ে মৃত্যু বরণ করে মানুষ জীবনের পরপারে চলে যায়। সুতরাং, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর প্রেরিত মহামানবগনের সাহচর্যে গিয়ে তাঁর নির্দেশিত পথে তথা আলোর পথে পরিচালিত হওয়াও একপ্রকার পুলসিরাত অতিক্রম করা। 

সূত্র : আল্লাহ কোন পথে। 

শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০২০

নাহজ আল বালাঘা/বাংলা -pdf ডাউনলোড লিঙ্ক

আমিরুল মু'মিনিন হযরত মাওলা আলী আঃ এর 
খুতবা,বাণী, উপদেশ ও পত্র সম্বলিত এই  কিতাবটি চাইলেই ডাউনলোড করতে পারেন খুব সহজেই।
বাংলা অনুবাদকৃত।  ডাউনলোড লিঙ্ক  

বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০

পরকাল!

পরকাল কি?
হাশরের মাঠ কি?
পুনরুত্থান কি?

মা আয়শা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, " হাশরের মাঠে প্রত্যেকেই উলঙ্গ হয়ে, নাঙা পায়ে (খালি পায়ে), খাতনাবিহিন অবস্থায় উঠবে।"  সম্ভবত এই হাদীসের মর্ম বুঝতে না পেরে হুজুরগণ হাশরের মাঠের অশ্লীল ও কাল্পনিক বর্ণনা তৈরি করেছেন (হাশরের মাঠে নবী রাসুলসহ সকলেই (পিতা মাতার সামনে পুত্র কন্যা, পুত্র কন্যার সামনে পিতা মাতা) নেংটা হয়ে সমবেত হবে)। এমন অশ্লীলতাকে ঢাকার জন্য এরা গোঁজামিল দিয়ে বলে, সকলে আপন আপন হিসাব নিয়ে এত পেরেশান থাকবে যে, কেউ কারো দিকে তাকাবে না। সকলে উপরের দিকে তাকিয়ে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করবে। আসল কথা হলো, যদি হাশরের মাঠে মানুষজন আল্লাহর ভয়ে এতই ভিত থাকবে যে, তারা আপন পিতা মাতাকে চিনবে না বা পুত্র কন্যাদের চিনবে না, তাহলে তো সকলে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি না করে আল্লাহু আল্লাহু ডাকার কথা। অথচ ধর্ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকা হুজুরদের কারণে হাশরের বর্ণনা এমন অশ্লীল ও গোঁজামিল দিয়ে প্রচারিত হয়ে সমাজে খুব শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সমাজে হুজুররা বলেন, হাশরের মাঠে একে অপরকে চিনবে না বলেই একে অপরের সামনে উলঙ্গতায় লজ্জিত হবে না। কুরআনে আল্লাহ কিন্তু ভিন্ন কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেন, হাশরের মাঠে একে অপরকে চিনবে (সূরা ইউনুস, আয়াত-৪৫)। অথচ হুজুররা বলেন কুরআন বিরোধী কথা।

হাশর বিষয়ে আলোচনার পূর্বে বেহেশত ও দোযখ নিয়ে একটু আলোচনা করলে বুঝতে সুবিধা হবে-

সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এক একজন বেহেশতবাসীকে এত বড় বড় বেহেশত প্রদান করা হবে যে, বেহেশতের এক প্রান্ত হতে খুব দ্রুতগতিতে দৌড়ালেও অপর প্রান্তে পৌছাতে কয়েক মাস লেগে যাবে। আবার দোযখের আগুন সম্পর্কে বলা হয় যে, পৃথিবীর আগুনের তাপের সত্তরগুন বেশি তাপ হবে দোযখের আগুনের। পৃথিবীর আগুনে কেউ যদি হাত রেখে কারো সাথে কথা বলতে চায়, সে কি পারবে? আগুনের তাপে যখন তার হাত পুড়বে সে তো চিৎকার করে হাত বাঁচাতে ব্যস্ত থাকবে। কারো সাথে আলোচনা করার প্রশ্নই আসে না। কিন্ত কুরআনে একাধিক আয়াতে আল্লাহ বলেন, বেহেশত ও দোযখীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। যেমন, দোযখীরা বেহেশতীদের বলবে, আমাদের দিকে কিছু পানি নিক্ষেপ করো, তোমাদের রুজি হতে আমাদের কিছু দাও। বেহেশতীরা বলবে, কাফেরদের জন্য এগুলো হারাম করা হয়েছে (সূরা আরাফ, আয়াত-৫০)। এখানে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, বেহেশতী ও দোযখীরা পাশাপাশি অবস্থান করবে আর তা না হলে, তাদের মধ্যে আলোচনা সম্ভব নয়। আর পৃথিবীর আগুনের চেয়ে সত্তরগুন বেশি তাপযুক্ত আগুনে পুড়তে থাকা কোন মানুষের পক্ষে কোনকিছু আবদার করা তো অসম্ভব। আসলে বেহেশতের সুখ ও দোযখের আগুনের রূপক বর্ণনা বুঝতে না পেরে বেহেশত ও দোযখের এমন কাহিনী প্রচার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরো বলা যায়, দোযখীদের কঠোর আযাব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, " সর্বক্ষণ তারা তাতে থাকবে। তাদের আযাব হালকাও হবে না। কিন্তু যারা অত:পর তওবা করে নেবে এবং সৎকাজ করবে তারা ব্যতীত, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু (সূরা ইমরান, আয়াত-৮৯, ৯০)। এই আয়াত দুটির প্রথম আয়াতে দোযখীরা তাদের কর্মের শাস্তিসরূপ দোযখে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে যা হালকা করা হবে না। কিন্তু দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেন, যারা তওবা করবে এবং সৎকাজ করবে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। অর্থাৎ তারা এমন জায়গায় শাস্তি ভোগ করবে সেখানে তারা তওবা করতে পারবে সৎকাজও করতে পারবে। আর সেই জায়গাটা দুনিয়া ছাড়া আর কোথায় হবে?

সুফি সাধকগণ, হাশর বিষয়ে মা আয়শা বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যা দেন এভাবে-

হাশরে পুনরায় সকলকে উলঙ্গ করে নাঙা পায়ে খাতনাবিহিন অবস্থায় উঠানো হবে বলতে মৃত্যুর পরে পুনরায় মায়ের গর্ভ হতে দুনিয়াতে আসাকে বুঝানো হয়েছে। প্রত্যেক নবী রাসুল এবং সকল মানুষ মায়ের গর্ভ হতে উলঙ্গ হয়ে, খালিপায়ে, খাতনা ছাড়াই জন্ম নেয়। আর শিশুদের উলঙ্গতা কারো জন্য লজ্জার কারণ হয় না।

কুরআন একটি আধ্যাত্মিক কিতাব। কুরআনে আছে রূপক আয়াত, উপমার আয়াত, ইঙ্গিতময় আয়াত ও উদাহরণ দেওয়া আয়াত। আমাদের ধর্ম প্রচারকদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান না থাকায় কুরআনে বলা আল্লাহর কথার মর্ম বুঝতে না পেরে এমন গোঁজামিল ব্যাখ্যাকে কুরআনের কথা বলে প্রচার করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-

"কেমন করে তোমরা কুফরী করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। অত:পর তিনিই তোমাদের প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অত:পর তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে (বাকারাহ, আয়াত-২৮)।" এটা তো একটা বাচ্চাও বুঝবে যে, যে আত্মাটা একবারও দুনিয়াতে আসেনি, সেই আত্মার মৃত্যু হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আবার মৃত্যু না হলে পুনরায় জীবনদানের কথা আসবে না। এই আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন, আবার মৃত্যু দিব অর্থাৎ সেই আত্মাগুলির আগেও মৃত্যু হয়েছে। পুনরায় জীবন দান করবেন অর্থাৎ এদের ইতিপূর্বে জীবনদান দেওয়া হয়েছিল। আসল কথা, মানুষ জন্ম নিচ্ছে আবার মৃত্যু বরণ করছে আবার জন্ম নিচ্ছে। আল্লাহ কয়েকধাপে কথাগুলো বললেও জন্মচক্র এই কয়েকধাপে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অনন্ত কাল ধরে মানুষ কর্মফল ভোগ করতে দুনিয়াতে আসতে থাকবে যতক্ষণ না নিজে কর্ম করে আল্লাহতে বিলীন হতে না পারে। আর এটাকেই বলে মুক্তি অর্থাৎ জন্মচক্র হতে মুক্তি লাভ করা।

"প্রত্যেকের জন্য তাদের কর্মফল অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর রয়েছে, যাতে আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেন (সূরা আহক্বাফ, আয়াত-১৯)।"

"অত:পর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে, অত্যন্ত সহজভাবেই তার হিসাব-নিকাশ করা হবে আর সে তার পরিবার পরিজনের কাছে আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে (সূরা ইনশিকাক, আয়াত-৭, ৮, ৯)।" এটা তো আর বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না যে, দুনিয়াতে থাকা পরিবার পরিজনের কাছেই সে আনন্দিত হয়ে ফিরবে।

"অবশ্যই তোমরা এক স্তর হতে অন্য স্তরে আরোহণ করবে (সূরা ইনশিকাক, আয়াত-১৮)।" দুনিয়ায় কর্ম অনুযায়ী আত্মার প্রমোশন ও ডিমোশনের কথা বলা হয়েছে।

কর্মফল ভোগ করতে মানুষকে আবার দুনিয়াতে আসতে হবে। আর কুরআনেই একথা বলা হয়েছে। যদি পুনর্জন্মের বিধান না থাকত, তাহলে সকল নবী রাসুলগণ আল্লাহর সৃষ্টির বিধান সম্পর্কে জানার পরেও এমন বিধান বিরোধী হয়ে আখেরি নবীর উম্মত হওয়ার জন্য দোয়া করতেন না। আর রাসুল (সা:) নিজেই বলেছেন, " আমি প্রত্যেক যুগে আদম সন্তানদের মাঝে সম্ভ্রান্ত বংশে জন্মগ্রহণ করিয়া আসিতেছি, অবশেষে আমি ঐ যুগে জন্মগ্রহণ করেছি, বর্তমানে আমি যে জামানায় আছি (বোখারী শরীফ)।

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায়!

আমি মৃত্যুকে অনেক ভয় পাই, মৃত্যু থেকে বাঁচার কি কোন উপায় আছে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
 তোমার মৃত্যু সেইদিন হয়ে গেছে যেদিন তুমি জন্ম গ্রহণ করেছো, এখন এর থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। যেদিন জন্ম নিয়েছো সেইদিন থেকে মৃত্যুর যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। প্রথম কদম যখন উঠিয়েছো তখন দ্বিতীয় কদম উঠাতে হবেই, যেমন ধনুক থেকে তীর বের হয়ে গেছে এখন তীরকে রুখবে কিভাবে? যখন জন্ম হয়েছে তখন মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই।

যেদিন তুমি এই বিষয়টি বুঝতে পারবে যে মৃত্যু হবেই সুনিশ্চিতভাবে আর অন্য সবকিছু অনিশ্চিত শুধু মৃত্যু সুনিশ্চিত, সেইদিন ভয় সমাপ্ত হয়ে যাবে; যা হবে তার জন্য কিসের ভয়? তুমি যে আশঙ্কা করছো দুর্ঘটনার প্রথমেই সেই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে তোমার ভিতরে, শুধু তোমার কাছে আসার বাকি আছে। সেদিন তোমার মৃত্যু হয়ে গেছে যেদিন তুমি জন্ম নিয়েছো, যেদিন থেকে তুমি শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করেছো সেইদিন শ্বাস প্রশ্বাস বের হওয়ার উপায় শুরু হয়ে গেছে। এখন এই শ্বাস প্রশ্বাস যে কোনদিন বের হয়ে চলে যাবে, তুমি সব সময়ের জন্য থাকতে পারবে না।

এর জন্য এই ভয়কে বুঝার চেষ্টা করো, বাঁচার আশা করিও না কারণ কেউ বাঁচতে পারেনি। কত লোকজন কত উপায় বের করেছে বাঁচার জন্য। নাদের শাহ কত বড় যোদ্ধা ছিলো, কত ভয়ংকর ছিলো হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে কিন্তু নিজের মৃত্যুকে ভয় পেত। কাহিনীতে আছে এক বেশ্যা নাদের শাহের শিবিরে(ছাউনি, তাঁবু) নাচার জন্য এসেছিলো, আর যখন চলে যাওয়ার সময় হলো তখন রাত অনেক হয়ে গিয়ে ছিলো ভয় পেতে লাগলো তখন নাদের শাহকে বললো অনেক অন্ধকার হয়ে গেছে আর আমার গ্রাম অনেক দূরে আমি কিভাবে যাবো এখন?

নাদের শাহ বললো: তুমি কোন চিন্তা করো না, তুমি কি কোন সাধারণ দরবারে নাচতে এসেছো। নাদের শাহ তার সৈনিকদের বললো রাস্তার সামনে যত গ্রাম আছে সব গুলোতে আগুন লাগিয়ে দাও যেন এই বেশ্যা তার গ্রামে আলোতে যেতে পারে। পাঁচ থেকে সাতটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ছিলো গ্রামে ঘুমন্ত লোকজন আগুনে পুড়ে মারা গেছে, কিন্তু রাস্তা আলোকিত করে দিয়ে ছিলো।

অন্যের মৃত্যু তার জন্য খেলা ছিল কিন্তু নিজের মৃত্যুকে অনেক ভয় পেত, মৃত্যুকে এত ভয় পেত যে রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারতো না; আর এই ভয়েই তার মৃত্যু হয়ে ছিলো। যখন হিন্দুস্তান থেকে ফিরে আসছিলো, এক রাতে একটি তাঁবুর ভিতরে ঘুমিয়ে ছিলো, রাত গভীর ছিল তাঁবুতে একজন ডাকাত ঢুকে গেলো।

ডাকাত কারো হত্যা করার জন্য উৎসুক ছিল না, তার উৎসুক ছিল কিছু জিনিস চুরি করার। কিন্তু অন্ধকারে ডাকাতের উপস্থিতি ও আওয়াজে নাদের শাহ ভয় পেয়ে গেল মনে করলো অনেক শত্রু প্রবেশ করেছে দৌড়িয়ে বাহিরে আসলো কিন্তু তাঁবুর দড়িতে পা আটকিয়ে গেলো; নাদের শাহ মনে করলো কেউ তার পা ধরে ফেলেছে, সেই ভয়ে তার হার্টবিট বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিলো।কেউ তাকে ধরেনি, কেউ তাকে মারেনি শুধু পা আটকিয়ে গিয়েছিলো তাঁবুর দড়ির সাথে এতেই সে মনে করে ছিলো তার জীবন শেষ, সেই ভয়েই মারা গিয়ে ছিল।

মানুষ বাঁচার জন্য যত উপায় করে? মনোবিজ্ঞানী বলেন: অন্যকে মারার উৎসুক তাদের মধ্যে হয় যারা নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক বেশি চেষ্টা করে। যাদের এই খেয়াল হয় আমরা তো জীবন বানাতে পারবো না কিন্তু মানুষকে হত্যা তো করতে পারবো, দেখ আমরা কত মানুষ হত্যা করেছি? অন্যকে হত্যা করলে আমাদের মনে হতে থাকে আমরা মৃত্যুর মালিক হয়ে গিয়েছি, এটাতে এক ধরনের ভ্রান্তির জন্ম হয়; হয়তবা মৃত্যু আমাদের ক্ষমা করে দিবে। না ধন সম্পদ দিয়ে কাজ হবে, না পদ পদবী দিয়ে কাজ হবে, না শক্তি দিয়ে কাজ হবে,কোন উপায় নেই মৃত্যু থেকে বাঁচার।

তুমি জিজ্ঞাসা করেছো: আমি মৃত্যুকে অনেক ভয় পাই, এর থেকে কি বাঁচার কোন উপায় আছে?

যতই বাঁচার উপায় খুঁজতে থাকবে ততই ভয় আরো বাড়তে থাকবে, তুমি বাঁচার উপায় খুঁজবে আর প্রতিদিন মৃত্যু তোমার কাছে আসতে থাকবে কারণ তুমি প্রতিদিন বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছো। মৃত্যুকে স্বীকার করে নাও, মৃত্যু থেকে বাঁচার কথা চিন্তা করো না আর; যা হওয়ার তা হবেই, সেটাকে তুমি অন্তরতম থেকে স্বীকার করে নাও তাহলে আর ভয় থাকবে না।

মৃত্যু থেকে বাঁচা সম্ভব নয়, কিন্তু মৃত্যুর ভয় থেকে বাঁচা সম্ভব। মৃত্যু হবেই কিন্তু ভয় আবশ্যক নয়, ভয়কে তুমি জন্ম দিয়েছো। বৃক্ষ তো ভয়ভীত নয়, তাদেরও মৃত্যু হবে, কিন্তু তাদের কাছে চিন্তাভাবনার মন নেই, বুদ্ধি নেই। পশুরা তো কোন চিন্তাভাবনা করছে না? তাদেরও মৃত্যু হবে।

মৃত্যু স্বাভাবিক বিষয়, বৃক্ষ, পশু, পাখি, মানুষ সবার মৃত্যু হবে, কিন্তু শুধু মানুষই ভয়ভীত! কারণ মানুষের চিন্তাভাবনা যদি কোনভাবে বাঁচার উপায় বের করা যায়। তোমার বাঁচার আশা আকাঙ্খার কারণে ভয়ের জন্ম হচ্ছে, মৃত্যুকে স্বীকার করে নাও।

আর তোমার সমস্যা কোথায়? জন্মের আগে তুমি ছিলে না, কোন সমস্যা ছিল? কখনো একবার এভাবে চিন্তা করে দেখো? জন্মের আগে তুমি ছিলে না, কোন সমস্যা ছিল? মৃত্যুর পরে আবার তুমি থাকবে না, কোথায় সমস্যা? যেভাবে জন্মের আগে ছিলে মৃত্যুর পর আবার তেমনি হয়ে যাবে, জন্মের আগে তোমার অবস্থা যেমন ছিল মৃত্যুর পরে আবার তেমন অবস্থায় ফিরে যাবে।

যতক্ষণ তুমি প্রথম শ্বাস প্রশ্বাস নেওনি, সেই সময়ের কথা তোমার মনে আছে? তখন কি তোমার কোন পেরেশানি বা সমস্যা ছিল? এভাবে যখন তোমার শেষ শ্বাস প্রশ্বাস চলে যাবে, তারপর কিসের পেরেশানি, কিসের সমস্যা?

সক্রেটিসের মৃত্যুর সময় কেউ জিজ্ঞাসা করলো আপনি কি ভয় পাচ্ছেন না? সক্রেটিস(আঃ) বললো: ভয়ের কি আছে, যেমন আস্তিক বলে আত্মা অমর তাহলে ভয়ের কিছু নেই, আত্মা অমর ভয় পাবো কেন? আবার যেমন নাস্তিক বলে আত্মা মরে যাবে, তাহলেও কোন সমস্যা নেই; যে ভয় পাবে সে তো মারা যাবে, তাহলে ভয় পাবেটা কে? কিছুই বাঁচবে না, না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশি।

সক্রেটিস(আঃ) বললো: দুটো অবস্থা ঠিক আছে, দুইজনের মধ্যে থেকে তো একজন সঠিক হবে; এছাড়া আর কোন উপায় নেই। হয় আস্তিক ঠিক, তা না হলে নাস্তিক ঠিক। যদি আস্তিক ঠিক হয় তাহলে আত্মা অমর, কোন চিন্তার বিষয় নয়। আর যদি নাস্তিক ঠিক হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই, কিসের চিন্তা? কে চিন্তা করবে। সক্রেটিস(আঃ) বললো: এর জন্য আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত যা হবে ঠিক হবে।

 তুমি বাঁচার চেষ্টা করো না, মৃত্যু হবেই। কিন্তু আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই, তোমার মৃত্যু হবে না, তোমার তো জন্মই হয়নি তাহলে মৃত্যু কিভাবে হবে? শরীরের জন্ম হয়েছে, শরীরের মৃ্ত্যু হবে। তোমার চৈতন্যের জন্ম হয়নি, আর অমরত্ব তার ধর্ম(যে মরে না, চিরজীবী)।

তোমার সমস্যা আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি তোমার শরীরকে আপন মনে করছো। মৃত্যু আসল প্রশ্ন নয়, আসল প্রশ্ন হলো শরীরকে মনে করছো এটাই আমি। যেমন কেউ চিল্লাচিল্লিকে মনে করছে শান্তি। এমনি কথাবার্তা বলছে জীবনের, মৃতকে তুমি জীবন মনে করছ, এর জন্য সমস্যা হচ্ছে। মৃত তো মৃতই, এখনো মৃত এবং প্রতিদিন মরছে; তুমি খেয়াল করে দেখনি। না কি তুমি খেয়াল করে দেখতে চাচ্ছো না? ভয় পাচ্ছো? তোমার মাথায় যে চুল বড় হচ্ছে, চেহারায় যে দাঁড়ি(চুল) বড় হচ্ছে; হাতের নক বড় হচ্ছে, তুমি কি কখনো লক্ষ্য করে দেখেছো এগুলো কাটার সময় তুমি কেন ব্যাথা পাও না?

এগুলো কিন্তু তোমার শরীরের জীবিত অংশ নয়, মৃত অংশ যা শরীর বাহিরে ফেলে দিচ্ছে। প্রতিদিন মলমূত্র বাহিরে ফেলছো এগুলো শরীরের সব মৃত অংশ, শরীরে প্রতিদিন কিছু না কিছুর মৃত্যু হচ্ছে। আর তুমি প্রতিদিন খাবার খেয়ে একটু জীবন ভিতরে প্রবেশ করাও, তখন জীবন একটু সতেজ হয়; তারপর আবার সেখান থেকে প্রতিদিন মৃত অংশ বাহিরে বের হয়ে আসে।

বিজ্ঞানীরা বলেন: ষাট বছরে মানুষের সম্পূর্ণ শরীরের মৃত্যু হয়, তারপর আবার দ্বিতীয় শরীর, সত্তর বৎসর বয়সে দশবার শরীরে মৃত্যু হয়, সম্পূর্ণ পরির্বতন হয়ে যায় এক এক কণা পর্যন্ত পরির্বতন হয়ে যায় কিছুই থাকে না পুরাতন সব নতুন হয়ে যায়।

প্রতিদিন শরীরের মৃত্যু হচ্ছে, শরীরের প্রক্রিয়া হলো মৃত্যু। এই শরীরের ওপারে একটি চৈতন্যের অবস্থান আছে কিন্তু সেই অবস্থান সম্পর্ক তুমি জানো না; অথচ তুমি সেখানেই আছো কিন্তু তুমি তাকে চিনতে পারছো না। মৃত্যু থেকে বাঁচার কথা জিজ্ঞাসা করো না, এটা জিজ্ঞাসা করতে পারো যে আমাদের শরীরের ওপারে যা আছে তাকে জানার জন্য কি করবো? বা ধ্যানে কিভাবে জাগ্রত হবে সেই কথা জিজ্ঞাসা করো।

 যদি তুমি এতটুকু জানতে পারো যে তুমি ভিতরে চৈতন্য, তাহলে শরীরের প্রতি ভালোবাসা ঠিক আছে, শরীর হলো তোমার বসবাসের জায়গা এই বসবাসের জায়গাকে কখনো চিরস্থায়ী মনে করবে না। যখনি তুমি এই কথাগুলো বুঝতে পারবে তখনি তোমার ভিতরে এক অপূর্ব পরির্বতন হতে থাকবে। নরক হলো নারায়ণ, স্বর্গ হলো রামায়ণ; তখন তুমি হঠাৎ বুঝতে পারবে তোমার ভিতরে যাকে নরক মনে করেছিলে সেটা নারায়ণ, আর যাকে তুমি স্বর্গ মনে করেছিলে সেটা রামায়ণ।

শরীর হলো মাটি, মাটি দিয়ে বানানো হয়েছে মাটিতে পড়ে বিলীন হয়ে যাবে আবার মাটি থেকে উঠে, এই সমস্ত আয়োজন মাটির; এই সমস্ত খেলা মাটির। তুমি এই মাটির প্রদীপকে তোমার হওয়া মনে করো না, এই মাটির প্রদীপে যে তৈল ভরা আছে সেটা তোমার মন; সেটাকেও তুমি তোমার হওয়া মনে করো না। সেই তৈলের মাঝে যে বাতি আছে আর বাতির মধ্যে যে জ্যোতি জ্বলছে সেই জ্যোতি তুমি।

মেনে নিলাম প্রদীপ আর তৈল ছাড়া জ্যোতি হারিয়ে যায়, কিন্তু প্রদীপ আর তৈল জ্যোতি নয়; জ্যোতিকে প্রকাশ হওয়ার জন্য প্রদীপ আর তৈলের প্রয়োজন হয়। তোমার প্রকাশের জন্য শরীর আর মনের প্রয়োজন হয়, এটা আবশ্যক তোমার অভিব্যক্তির জন্য কিন্তু তোমার অস্তিত্বের জন্য আবশ্যক নয়। তোমার অস্তিত্ব এগুলো থেকে অনেক অনেক ওপারে, সেই পারের বোধ তোমার জাগ্রত হোক তাহলে মৃত্যুর ভয় আর থাকবে না, তখন তুমি বুঝতে পারবে মৃত্যু বলে কিছু নেই।

শরীরের মৃত্যু সুনিশ্চিত কিন্তু আত্মার মৃত্যু কখনো হয়নি এবং কখনো হবেও না; তুমি আত্মা এতটুকু বোধ জাগ্রত যথেষ্ট। এখন তুমি যাকে জীবন মনে করছো সেটা তোমার নেশা এর থেকে বেশি কিছু নয়, মৃত্যুর সময় জানতে পারবে যখন তোমার চোখ বন্ধ হতে থাকবে; তখন মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হবে।, যাকে এতদিন জীবন মনে করে ছিলে সেটা তোমার একটা স্বপ্ন প্রমাণিত হবে। আর এই জীবনের ভিতরে যে সত্য লুকিয়ে ছিলো স্বপ্নের মাঝে ব্যস্ত থাকার কারণে সত্যকে কখনো দেখতে পাওনি; এখন আবার নতুন করে ভ্রমণ করো।

মৃত্যুকে ভয় পেও না, যদি তোমার জীবনে সত্যি সত্যি জানার আকাঙ্ক্ষা থেকে থাকে তাহলে এতটুকু বুঝার চেষ্টা করো যাকে তুমি এখন জীবন মনে করছো, দিন রাত যার সাথে তুমি বসবাস করেছো সেটা একটা ভ্রান্তি; মৃত্যু এগুলোই ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। ধন সম্পদ, পদ পদবী, নাম, মান মর্যাদা, আরাম আয়েশ, সব ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।

যদি তুমি ধন সম্পদ, পদ পদবী, নাম, মান মর্যাদা, আরাম আয়েশকে মনে করো তোমার হওয়া, তাহলে তোমার মৃত্যু অনিবার্য, তাহলে ভয় স্বাভাবিক। (ধন সম্পদ, পদ পদবী, নাম, মান মর্যাদা, আরাম আয়েশ) এগুলোর ছাড়াও তোমার অবস্থান আছে, সেটাকে একটু জানার চেষ্টা করো; মৃ্ত্যু সেটাকে নষ্ট করতে পারবে না। যে ব্যক্তি নিজেকে জেনেছে মৃত্যু তার কাছে হেরে গেছে।

 মৃত্যু দৌড়িয়ে আসছে তোমার কাছে, আর তুমি বলছো মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন উপায় আছে? আমি তো সমস্ত চেষ্টা এটাই করছি যে তুমি বুঝতে পারো মৃত্যু তোমার কাছে দৌড়িয়ে আসছে; আর তুমি বলছো তোমাকে মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন পথের কথা বলে দিব, তুমি চিন্তা করছো আমি তোমাকে কোন তাবিজ দিবো মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য? তাহলে তুমি মৃত্যু থেকে বেঁচে যাবে।

এত তাড়াতাড়ি সবকিছু হয়ে যাবে, বেশি সময়ও নিবে না; বলতেও পারবে না নিজের মনকে কিছু মুহূর্তের মধ্যে দেখবে বরযাত্রী এসে পড়েছে, কাফন পড়ানো হয়ে গেছে, কবরস্থানের যাত্রা শুরু হতে হতে দাফন সমাপ্ত।

এখানে কে আছে, যা বলতে চেয়ে ছিলো বলতে পেরেছে? এখানে কে আছে চিরস্থায়ী? এখানে কে আছে যা হতে চেয়ে ছিলো তা হতে পেরেছে? পরিচয়ও হতে পারেনি দর্পণের সাথে, চোখ এখনো দর্পণকে দেখতে পায়নি কাজল অশ্রু হয়ে গলে গেলো।

মৃত্যু খুব দ্রুতগতিতে আসছে, আর যে কোন সময় দরজা খট খট করবে, আসার আগে একটু খবরও দিবে না যে আমি আসছি। মৃত্যু হলো অতিথি- সময়; দিন, কাল, ক্ষণ বলে আসবে না শুধু এসে পড়বে, এক মুহুর্তের সময় দিবে না। তুমি বলবে: একটু সময় দিন, আমি সবকিছু গুছিয়ে নেই , বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি। এতটুকু সুযোগ দিবে না।

যা করবে তাড়াতাড়ি করো মৃত্যু আসার আগে, তোমার ভিতরের জ্যোতিকে জানার চেষ্টা করো। আমি চাই মৃত্যুর প্রতি তোমাকে আরো জাগ্রত করতে, আর তুমি চাইছো তোমাকে যেন ঘুম পারিয়ে রাখি; কোন পথ দেখিয়ে দিব যেন মৃত্যু থেকে বাঁচতে পারো। মৃত্যু থেকে বেঁচে কি করবে? এখন কি করছো জীবিত থেকে? এটাই তো করবে বাঁচার পরে? এগুলোকে কত বছর ধরে করতে তোমার মন চাইছে? সত্তর বৎসর ধরে করছো এখনো মন ভরেনি? সাতশত বৎসর ধরে করতে চাইছো? এগুলোই? এটা কি অতিরিক্ত হয়ে গেলো না?

আমি শুনেছিলাম বাদশা সেকান্দার তার সফরে এমন এক জায়গায় পৌঁছালো যেখানে সে জানতে পারলো একটি ঝরনার কাছে এমন একটি জলদ্বার আছে যদি কোন ব্যক্তি সেই পানি পান করে তাহলে সে অমর হয়ে যাবে। সেকান্দার সেই ঝরনার কাছে গেলো এবং জলদ্বার খুঁজে বের করলো, যখন জলদ্বারের কাছে পৌঁছালো অনেক আনন্দিত হয়ে গেলো এমন স্বচ্ছ জল সে কখনো দেখেনি; সেই জল পান করার জন্য প্রস্তুত হলো।

কিন্তু সেখানে বৃক্ষের ডালে একটি কাক বসে ছিলো, কাক বললো: দাঁড়াও সেকান্দার পরে আফসোস করবে প্রথমে আমার কথা শুনো। সেকান্দার অনেক আশ্চর্য হয়ে গেলো, এক চমৎকার হলো এই পানি পান করলে মানুষ অমর হয়ে যায়, আর দ্বিতীয় চমৎকার হলো কাক কথা বলছে, সেকান্দার বললো: কি বলতে চাও তুমি?

কাক বললো: আমি এটা বলতে চাই যে- আমি এই পানি পান করেছি, আমি কোন ছোটখাটো কাক নই যেমন তুমি মানুষের মধ্যে বাদশা সেকান্দার আমিও কাকদের মধ্যে বাদশা সেকান্দার; এই পানির খোঁজে আমার সমস্ত জীবন ব্যয় হয়েছে তারপর আমি ঝরনার খোঁজ পেয়েছি এবং পানি পান করেছি, এখন আমি আফসোস করছি হাজারো বছর ধরে জীবিত আছি মরতে পারছি না; এখন আর মরতেও পারবো না, পাহাড় থেকে কয়েকবার পড়ে গিয়েছি, বিষ খেয়েছি কয়েকবার কিন্তু মরতে পারছি না; এখন জীবনের কোন দাম নেই একই জিনিস কতবার করবো, সবকিছু তো দেখলাম, এর জন্য তোমাকে বলছি প্রথমে চিন্তাভাবনা করে দেখ পরে কিন্তু মরতে পারবে না। এখন তোমার ইচ্ছা, আমি এর জন্য এখানে বসে থাকি যেন দ্বিতীয় কেউ আর এই ভুল না করে যে ভুল আমি করেছি।

কাহিনীতে আছে সেকান্দার সেখানে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে ছিলো, তারপর পানি পান না করে সেখান থেকে ফেরত আসলো। কাহিনী তো কাহিনী কিন্তু কথাগুলো চিরন্তন সত্য, তুমি পান করতে পারবে যদি সেই ঝরনার কাছে যেতে পারো, কিন্তু পান করে করবে কি? কখনো ভেবে দেখেছো? তারপর মৃ্ত্যু অসম্ভব হয়ে যাবে। কিন্তু এই জীবনের সমস্ত খেলা মৃত্যুর মাঝে লুকিয়ে রয়েছে,এই জীবনের সমস্ত আস্বাদ মৃত্যুর কারণে; সুখ; কৌতুক; রঙ্গ-রগড় মৃত্যুর কারণে,আর মৃ্ত্যুর প্রয়োজন আছে।

এখানে সবকিছু লুটপাট হয়ে যাবে, অশ্রু পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে, মৃত দেহ পর্যন্ত নিলাম হয়ে গেল। এখানে সবকিছু হারিয়ে যাবে, কিছুই থাকবে না। এর জন্য আমি তোমাকে সান্তনা দিব না, আমি তোমাকে জাগ্রত করতে চাই; মৃত্যু সুনিশ্চিত আর যতটুকু সময় বেঁচে আছো জীবনকে খোঁজার জন্য ব্যয় কর। শরীর থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে রাখো আর চৈতন্যের মাঝে জাগ্রত হও।

আমার কথাগুলো এত প্রেম ও শান্তির সঙ্গে পড়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি, কেন না এই ধরনের কথাবার্তা প্রেম ও শান্তির সঙ্গে পড়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এবং শেষে সকলের ভেতরে শূন্যকে আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন দয়া করে!!

"Translation" By রুদ্র মুহাম্মদ মনজু" "Respect" "By" Osho(ah)~~~salam shah

সালাতের হাকিক্বত


সালাতের হাকিকত:

আমাদের সমাজে আমরা সালাতকে নামায বলে থাকি।'সালাত' আরবি ভাষা; নামাজ ফার্সী ভাষা।যা কালের বিবর্তনে আমরা পেয়েছি।
পাক ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারিত রয়েছে তা মূলত পীর ফকিরগণের দ্বারা।মধ্যপ্রাচ্যের কিছু আধ্যাতিক পুরুষগণ এই উপমহাদেশে আগমণ ঘটান।ঈমানের বলে বলীয়ান সেইসব মহাপুরুষগণ সীমাহীন দুঃখকষ্ট সহ্য করে এবং অসীম ধৈর্য্য নিয়ে ইসলামের সাম্যের বাণী 'দ্বীন ইসলাম'কে তারা প্রতিষ্ঠিত করেন।ফার্সি ভাষাভাষি অঞ্চল থেকে যেমন তুরস্ক থেকে ৫০ জন মাওলানা সাহেব এসেছিলেন ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে(ইতিহাস থেকে জানা)।ফলে প্রচারিত হয়েছিল 'পার্সিয়াটিক ইসলাম'।পার্সিয়াটিক ইসলাম প্রচারের জন্যই কালের বিবর্তনের ধারায় ধর্মীয় মুসলিম অনুষ্ঠানগুলো ফার্সি ভাষায় নামকরণ করা হয়ে যায়।তাই তো সালাত হয়েছে নামাজ; সিয়াম হয়েছে রোজা।
আমাদের দেশের কোন কোন ধর্মবিজ্ঞানীর ধারনা যে,নামাজ শব্দটি 'নমঃ' ধাতু হতে উতপত্তি।এ থেকে বাংলা ভাষায় দুটি শব্দ পাওয়া যায় একটি 'নমস্কার' অর্থ 'সালাম' আর অন্যটা 'নামাজ'।মূল ধাতু নমঃ থেকে উদ্ভব বলে নমস্কার ও নামাজ একই অর্থ বহন করে।
সালাত হচ্ছে,"আল্লাহ্ ও তার রাসূলের সঙ্গে সংযোগ প্রচেষ্টা"।
সকল কর্ম ও চিন্তাকে ভেঙে ভেঙে তার স্বরূপ জ্ঞান দ্বারা বিস্তারিতভাবে দেখার নাম সালাত।
ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) সালাতের সংজ্ঞা দেন:
"সম্যক কর্ম সম্যক সময়ে যথাবিহিত সম্পাদনের নাম সালাত"।
কর্মকে যতই ক্ষুদ্রায়িতভাবে বিভক্ত করে দেখা যায় ততোই সালাতের গভীরতা আসে।
হাদিসে উল্লেখ আছে,"আসসালাতু মেরাজুল মুমেনিন" অর্থঃ সালাত মুমিনের মেরাজ।মেরাজ মানে আল্লাহর সাথে দিদার লাভ করা।
আল কোরআনে উল্লেখ আছে ,"ইন্নাস সালাতা তানহার আনিল ফাহশায়ি ওয়াল মুনকার" অর্থঃ নিশ্চয়ই সালাত যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
কিন্তু বর্তমানে আমরা যে সালাত আদায় করি তা শুধু মাত্র দেহের একটা অঙ্গিভঙ্গি ও আনুষ্ঠানিকতা।পবিত্র কোরআনে যে সালাতের কথা বলা হয়েছে তা মূলত 'গুরুবাদী'।
আল্লাহ্ পাক বলেন,"আন তাক্কুম লিল্লাহি মাছনা..অ ফুরা..দা ছুম্মা তাতাফাক্কারু"(৩৪ঃ৪৬) অর্থঃ তোমরা আল্লাহর জন্য (সালাতে) দাড়াও জোড়ায় জোড়ায় অতঃপর একাকি এবং অনুধাবন করো।
এখানে 'মাছনা' মানে জোড়া জোড়া।যা তাফসিরকারকগণ জামাত হিসেবে প্রকাশ করেছেন।
প্রকৃত পক্ষে কোরআনের শিক্ষা হলো একজন সম্যক গুরু বা কামেল মুর্শিদ নিজ আত্মসমর্পণকারীকে সালাত শিক্ষা দিয়ে মুমিন সৃষ্টি করবেন।কারন সালাত শিক্ষা দানে স্বীয় মুর্শিদ সালাতের ইমাম।অর্থাত গুরুর প্রতি ঈমান মোকাম্মেল হয়ে স্বয়ং আল্লাহ্ ও রাসূলের সাথে এককভাবে সংযোগ স্থাপন হয়ে যায়।দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে,আল্লাহ্ রাসূলের সাথে সংযোগ প্রচেষ্টার নামই সালাত।
পাক কোরআনে যে সালাতের কথা বলা হয়েছে তা হলো দায়েমী সালাত।কোরআনে উল্লেখ আছে,"ওয়াল্লাজিনা হুম আলা সালাতিহিত দায়েমুন" অর্থঃ তোমরা সালাতের উপর দায়েম (সদা সর্বদা>constantly) থাক।
সালাত মূলত ২ ধরনের।
১.জাহেরী নামাজ
২.হাকিকি নামাজ
নামাজে হাকিকি সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন,"লা সালাতা ইল্লা বিহুজুরিল ক্বালব" অর্থঃ হুজুরি দিল ব্যতিত নামাজ সঠিক হয় না।
জাহেরী নামাজ হলো দৈহিক অঙ্গিভঙ্গি মাত্র।আর হাকিকি নামাজ আল্লাহ্ প্রাপ্তি ঘটায়।হাকিকি বা দায়েমী সালাত আমিত্বের বিরূদ্ধে যুদ্ধ,চঞ্চল মনকে স্থির করে একটি কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসে নফসের যাবতীয় কলুষতা হতে পবিত্র হয়ে মারফতের নূরে আলোকিত হয়।এটা আমি হিমাদ্রীর কথা নয় এটা সূফিবাদে প্রমাণ দেয়।
সূরা আলা'র ১৪ ও ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে,"ক্বাদ আফলাহা মান তাজাক্কা অজাকারাস মা রাব্বিহি ফাসাল্লা"অর্থঃ নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি কল্যানপ্রাপ্ত হয়েছে যে নিজেকে পবিত্র করেছে এবং তার রবের স্মরণ ও সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে সফলকাম হয়েছে।অতএব,সে করল সালাত।তাই সালাত আদায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো মহান প্রভুর সাথে সংযোগ স্থাপন করা।আর সংযোগের ব্যাপারটি হলো মন ও ভাবের ব্যাপার।যে রাসূলের সাথে সংযোগ স্থাপন ককল তার স্বয়ং প্রভুর সাথে সংযোগ স্থাপন হলো।আর দয়াল রাসূলের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্যই গুরু বা মুর্শিদের শরণাপন্ন হতে হবে।যার নিকট আত্মসমর্পণ করলে দায়েমী সালাতের মাধ্যমে শুদ্ধ হয়ে স্বয়ং স্রষ্টার সাথে সৃষ্টি বিলীন হয়ে যেতে পারে।
আমাদের সকলকে মহান প্রভু কামেল গুরুর নেক নজর ভিক্ষা দিন।কেননা,"অলি আল্লাহর সাথে একদিনের সহোবত হাজার বছর ইবাদাতের চাইতে উত্তম"=>মাওলানা জালালুদ্দিন রূমী (রহঃ)।

মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলের ধর্মরাশির ভাসমান মূর্তিগুলোকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে তার নির্দেশনা অনুযায়ী সালাত আদায় করার দয়াটুকুন ভিক্ষা দিন।আমিন।

লেখা: হিমার্দ্রী
পোষ্ট : নুরে আলম

শনিবার, ৯ মে, ২০২০

আয়াত

সূরা মাউন (الماعون), 
আয়াত: ৪
অর্থঃ অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর,
আয়াত: ৫
অর্থঃ যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর;
আয়াত ৬/
অর্থঃ যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে

রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০

মাকামে ইবরাহীম( আঃ)

ফেরেশতারা সেজদা দিয়েছিল আদম (আ:)-কে হযরত ইয়াকুব (আ:) সপরিবারে সেজদা দিয়েছিলেন হযরত ইউসুফ (আ:)-কে আর আমরা সেজদা দিচ্ছি হযরত ইব্রাহিম (আ:)-কে।

সরাসরি আল্লাহর আনুগত্য করার কোন সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহ প্রকাশ্যে জমিনে নিজে এসে কোন আদেশ নির্দেশ দেননি যে, মানুষ সরাসরি আল্লাহর আনুগত্য করবে। আর যেহেতু আল্লাহর সরাসরি আনুগত্য করার সুযোগ নেই, সেই কারণে আল্লাহ কুরআনে বারবার হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য করো। এর অর্থ হলো, রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য করা মানেই আল্লাহর আনুগত্য করা। রাসুল (সাঃ)-এর বিরোধিতা করে মানেই আল্লাহর বিরোধিতা করা। রাসুল (সাঃ)-এর সন্তষ্টি অর্জন করা মানেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। রাসুল (সাঃ)-কে মনেপ্রাণে ভালবাসা মানেই আল্লাহকে মনেপ্রাণে ভালবাসা। রাসুল (সাঃ)-এর কাছে চাওয়া মানেই আল্লাহর কাছে চাওয়া। তেমনিভাবে রাসুল (সাঃ)-এর অসন্তুষ্টি মানেই হলো আল্লাহর অসন্তুষ্টি। যে ব্যক্তির উপর রাসুল (সাঃ) অসন্তুষ্ট, সে ব্যক্তির ইহকাল পরকাল বরবাদ।

এরপরও একশ্রেণী বলে যে, আল্লাহকে পেতে কোন মাধ্যম লাগে না বা উসিলা লাগে না। এরা চিন্তা করে দেখে না যে, আল্লাহ নিজেই তাঁর পরিচয় প্রকাশ করেছেন উসিলার মাধ্যমে অর্থাৎ নবী রাসুলগণের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর পরিচয় মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন। আর আমরা তাঁর বান্দা হয়ে বলি, আল্লাহকে পেতে কোন মাধ্যম লাগে না।

কুরআন হলো কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য জীবন-বিধান। মানুষের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সকল কর্মের নির্দেশনা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তবুও কুরআনের আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ টি। নবী রাসুলগণের সংখ্যা এক লক্ষ কিংবা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার হলে, আর প্রত্যেক নবী রাসুল সম্পর্কে যদি একটি করে আয়াত নাযিল করা হত, তাহলেই তো কুরআনের আয়াত সংখ্যা এক লক্ষ কিংবা দুই লক্ষের অধিক হয়ে যেত। অন্য প্রয়োজনীয় আয়াত সংখ্যা যোগ হলে কুরআনের কলেবর কতবড় হত? এইজন্যই কুরআনে যাকিছু আল্লাহ বলেছেন, তা অনর্থক বলেননি, মানুষের শিক্ষার জন্যই প্রত্যেকটি আয়াত আল্লাহ নাযিল করেছেন।

আল্লাহ কুরআনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি ও সকল ফেরেশতা কতৃক আদম (আঃ)-কে সেজদাহর ঘটনা কুরআনে বর্ণনা করেছেন। তেমনি হযরত ইয়াকুব (আঃ) নিজে একজন নবী হয়ে তাঁরই পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে স্ত্রী ও অন্য সন্তানদের নিয়ে সেজদাহ করেছিলেন (সূরা ইউসুফ, আয়াত-১০০)। সেই ঘটনা আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করেছেন, তা কি এমনি এমনিই বর্ণনা করেছেন?

খেয়াল করুন, ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বললেন, আমি যখন আদম (আঃ)-কে ঠিকঠাক করে তাঁর ভিতরে আমার রুহ হতে রুহ ফুঁকে দিব, তোমরা তখন আদম (আঃ)-কে সেজদাহ করবে (সূরা হিজর, আয়াত-২৯ এবং সূরা ছোয়াদ, আয়াত-৭২)। এখানে আল্লাহ আদম (সাঃ)-কে ঠিকঠাক করে রুহ হতে রুহ ফুঁকে দেওয়ার আগেই কেন ফেরেশতাদেরকে বলে রাখলেন? আল্লাহ তো আদম (আঃ)-কে ঠিকঠাক করে রুহ ফুঁকে দেওয়ার পরেই ফেরেশতাদেরকে বলতে পারতেন আদম (আঃ)-কে সেজদাহ করো, তা না করে তিনি ঠিকঠাক করে রুহ ফুঁকে দেওয়ার আগেই জানিয়ে রাখলেন যে, আমি যখন আদম (আঃ)-কে ঠিকঠাক করে আদম (আঃ)-এর ভিতরে প্রবেশ করবো, তখন তোমরা আদম (আঃ)-কে সেজদাহ করবে। আর ফেরেশতারাও দেখলেন যে, আল্লাহ স্বয়ং আদম (আঃ)-এর ভিতরে অবস্থান নিয়েছেন, তাই সকল ফেরেশতা আদম (সাঃ)-কে সেজদাহ করলেন। ফেরেশতাদের সর্দার আজাজীল যেহেতু আগুনের তৈরি, তাই তার ভিতরে অহংকার থাকায় সে আদম (আঃ)-এর আনুগত্য মেনে না নিয়ে সেজদাহ করতে অস্বীকার করে অভিশপ্ত হয়ে শয়তানে পরিণত হলো। আর এই ঘটনা কুরআনে আল্লাহ একাধিকবার বর্ণনা করেছেন যাতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধির আনুগত্য করতে অস্বীকার করে শয়তানে পরিণত না হয়। যুগে যুগে এইভাবেই প্রতিনিধির মাধ্যমেই আল্লাহ যেমন তাঁর নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন, তেমনি আল্লাহ প্রতিনিধির মাধ্যমেই মানুষের ইবাদত বন্দেগী গ্রহণ করে থাকেন। এই যেমন আল্লাহ মানুষের নামাজের সেজদাহ ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের মাধ্যমে এখনো গ্রহণ করছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত গ্রহণ করবেন।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর একজন সম্মানিত রাসুল এবং মুসলিম জাতির পিতা। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কাবা শরীফ নির্মাণ করেন। কাবা শরীফ নির্মাণের সময় তিনি যে পাথরের উপর দাড়িয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন। সেই পাথর আল্লাহর কুদরতে নরম হয়ে যায় যাতে ইব্রাহিম (আঃ)-এর কষ্ট না হয়। পাথর নরম হয়ে যাওয়ায় সেই পাথরের উপর হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ অঙ্কিত হয়ে যায়। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ অঙ্কিত পাথরকে মাকামে ইবরাহীম বলে। কাবা শরীফের কাছে যা স্বর্ণের খাঁচার মত করে ঘিরে রাখা হয়েছে। কাবা শরীফ মুসলমানদের কেবলা ঘোষিত হয়েছে। কেবলা অর্থ দিক, কাবাকে কেবলা করে নামাজ আদায় করার অর্থ হলো কাবা শরীফের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা। মুসলমানরা কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলেও সেজদাহর লক্ষ কিন্তু কাবা নয়। সকল মুসলমানরা জানুক বা না জানুক কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলেও সেজদাহর লক্ষ থাকে মাকামে ইবরাহীম। কারণ আল্লাহ কুরআনে হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা মাকামে ইবরাহীমে সেজদাহ করো (সূরা বাকারাহ, আয়াত-১২৫)। যদিও অনুবাদগুলোতে বলা হয়েছে যে, তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে সেজদাহর স্থান বানাও, কোন কোন অনুবাদে বলা হয়েছে যে, তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে নামাজের স্থান বানাও। এইকারণে কাবার ইমাম সাহেব নামাজের ইমামতি করার সময় মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করেন। আর ইমামের পিছনে সকল মুসল্লিরা এক্তেদা করেন। তেমনি বিশ্বের সকল মুসলমানরা কাবাকে কেবলা করে নামাজ আদায় করলেও সেজদাহ করে মাকামে ইবরাহীমে। অর্থাৎ আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কদম মোবারকের মাধ্যমে সেজদাহ গ্রহণ করছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত গ্রহণ করবেন। পোষ্টের সাথে মাকামে ইবরাহীমের ছবি দিলাম।
(লেখাটি সংগৃহি)  

শরিয়ত -মারফত

শরিয়ত আর মারফতের পার্থক্য!
(১) হজ্জ্ব শরিয়তের অর্থে = কাবা দর্শন করা।
(২) হজ্জ মারেফতের অর্থে = আত্মা দর্শন করা।
(৩)যাকাত শরিয়তের অর্থে = ধন বিলিয়ে দেওয়া
(৪)যাকাত মারেফতের অর্থে = নিজের সকল আমিত্ব ত্যাগ করা। গুরু কে ভক্তি করা, এবং বিভিন্ন প্রকার রয়েছে।
(৪)সালাত শরিয়তের অর্থে = প্রার্থনা করা সংযোগ করা কথা বলা,
(৫)সালাত মারেফতের অর্থে= প্রভুর সাথে পরিপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে দর্শন করে স্থায়ী সংযোগ স্থাপন করা, পরিপূর্ণ রুপ লাভ করা।

(৬)সিয়াম শরিয়তের অর্থে =সংযম হওয়া।
(৭)সিয়াম মারেফতের অর্থে =সকল মোহ হতে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিজেকে, এর মাঝে ছয় রিপু কে বুঝানো হয়েছে।
(৮)নামাজ ফার্সি শব্দ শরিয়তের অর্থে =পাচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা
(৯)নামাজ মারেফতের অর্থে =দায়েমী সালাতে সর্ব সময় হাকিকতের বিধান পালন করা ও কখনো নিজে কে বিছিন্ন না থাকা। সুরা মারিজ চেক করেন,
(১০)জিকির শরিয়তের অর্থ = শ্রষ্টাকে স্মরন করা।
(১১)জিকির মারেফতের অর্থে = আল্লাহর স্বত্বায় মিলন হওয়া পরিপূর্ণ ভাবে নিজেকে,
(১২)মুনাজাত শরিয়তের অর্থে =শুধু স্বর্গের বা বেহেস্তের লোভ করা, চুপি চুপি চাওয়া
(১৩)মুনাজাত মারফতের অর্থে =হে আল্লাহ তুমি আমার হয়ে যাও,তোমার স্বর্গ আমি চাই না। তুমি আমার হয়ে যাও পরিপূর্ণ রুপে, আমি তোমার রুপ দর্শন করে মানব মুক্তি চাই।
(১৪)শরিয়তের মূল এবাদত মানে=শুধু নামাজ রোজা হজ্জ জাকাত এবং বিভিন্ন ভাল সৎ কর্ম করা,
(১৫)মারেফতের মূল এবাদত মানে=শুধু ধ্যান মোরাকাবা মোশাহেদা জিকির দায়েমী সালাত আদায় করা,
(১৬)শরিয়তের মূল চাওয়া অর্থে = শুধু স্বর্গের স্বাধ ভোগ করার জন্য।
(১৭)মারেফতের মূল চাওয়া অর্থে=আল্লাহর প্রেমে বেহুঁশ থাকা। এবং পরিপূর্ণ মানব মুক্তি লাভ করা, এবং সয়ং প্রভু কে দর্শন লাভ করা।
(১৮)কোরবানী শরিয়তের অর্থে = পশু জবাই করা এটা শরিয়তি ভাষায় ঠিক আছে।
(১৯)কোরবানী মারেফতের অর্থে =নিজের ভিতরে একজন পশুসত্তা কে হত্যা করা। এই জন্য বিভিন্ন সুরাতে রুপোক ভাষায় বলা হয়েছে তোমরা জিহাদ কর খুজে বের করে হত্যা কর এটা নিজ দেহের মাঝে।

(২০)জিহাদ শরিয়তের অর্থে চেস্টা করা প্রতিরোধ তৈরী করা।
(২১)জিহাদ মারেফতের অর্থে = নিজের ভিতরের কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, অহংকার, মোহ ইত্যাদি কে হত্যা করা বা করতে বলা হয়েছে।
---ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন

শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০

রোজার হাকিক্বত

রোজার হাকিকতঃ
~~~~~~~~~~~~~
রোজা ফার্সি শব্দ।আরবিতে রোজাকে সিয়াম বলা হয়।যারা রোজা পালন করেন তাদের কে সায়েম বলা হয়।
"সিয়ামের " বুৎপত্তিগত অর্থ হল বিরত থাকা বা বর্জন করা এবং বর্জনকৃত অবস্থাতে স্থিত থাকা বা অটল থাকা।দুনিয়া হতে মনকে বিরত বা বারিত করে রাখার
কার্যক্রম কে বা প্রচেষ্টাকে "সিয়াম "বলে।শুধু পেটকে খালি রাখার নাম রোজা নয়, মনকে খালি রাখার নাম রোজা। অর্থাৎ সিয়াম করা অর্থ সপ্ত ইন্দ্রীয়দ্বার দিয়ে যা কিছু বিষয়বস্ত মস্তিস্কে প্রবেশ করে তার মোহ বর্জন করা।এই রুপ বর্জনের গুরুত্ব যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় অর্থাৎ উপলব্ধি করে সেই ব্যক্তিই কেবল এই মাসে সিয়াম করে। অন্য লোকেরা কেবল পানাহারের সময় সূচীর বিধান পালন করেই আত্নপ্রসাদ, লাভ করে, পরিতুষ্ট, পরিতৃপ্ত, পরিশান্ত থাকতে চায়।

কুরআনে বলা হয়েছে "ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু
কুতিবা আলাইকুমুচ্ছিইয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকুন"
২ঃ১৮৩।
অর্থঃ" হে বিশ্বাসীগন,আপনাদের উপর সিয়াম কেতাবস্থ
করা হল যেমন কেতাবস্থ করা হয়েছিল আপনাদের পুর্ববর্তিদের উপর যেন আপনারা তাকওয়া করেন"।

আল্লাহর নুরে তৈরি মানুষ স্বয়ং ই কেতাব যা পাঠ করতে হয় শুন্য হতে এবং এ কেতাবের গঠন হল মোহকামাৎ আয়াত দ্বারা যা বস্তুগুনের সমষ্টি ত্রিশে নিহিত।এ কিতাব খোলা হয়েছে আল্লাহর মৌলিক সপ্ত সিফাৎ দ্বারা।সিয়াম কেতাবস্থ করা হল মানে প্রত্যেক মানব সত্তার সাথে সিয়াম বা রোজা বিজড়িত আছে।
সিয়াম সাধনা এমনি আত্নশুদ্ধির একটি অন্যতম প্রক্রিয়া (ইবাদত পদ্ধতি) যা সকল আত্নশুদ্ধির (ইবাদতের) দরজা স্বরুপ এবং রোজাকে উপেক্ষা করে সত্যের দ্বারগ্রস্থ হওয়া যায়না।ইনসানি বা মানবাত্বার গুনাবলি বিকশিত
করার এবং তা হেফাজত করার ঢাল স্বরুপ রোজা।

বিধায় রাসুল সাঃ বলেছেন "রোজা আত্নরক্ষার ঢাল
স্বরুপ"।হাদিস কুদসিতে আল্লাহ বলেন " রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান" মানে সিয়াম সাধনায় আল্লাহর পরিচয়- বা আল্লাহকে লাভ করা যায়।
শুধু সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ
ইত্যাদি হতে বিরত থাকাই রোজা নয়,এবং ইহা কুরআন পরিপন্থী,কুরআনে এ রোজার কথা বলা হয়নি।
নফসের দুনিয়া মুখী ক্রিয়া কর্ম হতে বিরত থাকা বা
ইন্দ্রীয় পথে মস্তিষ্কে আগত বিষয় রাশিকে পরিশুদ্ধ করা বা আমিত্বের কলুষ হতে মুক্ত হয়ে মনকে আল্লাহর
প্রতি রুজু রাখাকেই সিয়াম বা রোজা বলা হয়।আর কুর আনে এটিকেই সিয়াম বালা হয়েছে যা সার্বজনিন
হিসেবে বিধৃত।সর্ব যুগেই রোজা ছিল বলে ইতিহাস
স্বাক্ষ্য দেয়।এর বাহ্যিক দিকটি হল সকাল হতে সন্ধ্যা
পর্যন্ত পানাহারাদি হতে বিরত থাকার আনুষ্ঠানিক রোজা।কিন্তু এটি আসল রোজা অবশ্যই নয়,তবে এখান হতে শুরু মানে এটি প্রতিক বা রুপক হিসেবে বিধৃত
এবং এটি ইহলোকের বিষয় যা দৈহিক স্বাস্থ্যগত
ও সামাজিকতার একটি দিক হিসেবে বিবেচিত।আসল
বুঝার জন্য বা চেনার জন্য রাসুল সাঃ প্রতীকের বা রুপকের অবতারন করেছেন, বিধায় ইসলামের
আনুষ্ঠানিকতা স্বীকৃত।কিন্তু মুল হতে বিচ্যুতহলে
আনুষ্ঠানিকতার কোন মুল্যই থাকেনা।মুল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। কুরআনের
রোজা সার্বক্ষনিক,এবং সার্বজনিন।বিধায় যারা শুধু পানাহার,স্ত্রী সম্ভোগ ইত্যাদি হতে বিরত থাকা কেই
রোজা বুঝে এবং পার্থিব বা জাগতিক বিভিন্ন ডিজাইনের, বাহারি রকমের খাদ্য বিলাশিতাকে,খাবার খাওয়াকে ইফ্তার বুঝে এরা
ওহাবী, মৌলবাদী, ধর্মভ্রষ্ট প্রতারক।এ সমস্ত নির্বোধ মৌলবাদী গন এজন্যই রমজান মাসে হোটেল রেস্তোরাগুলি বন্ধ করার জন্য মিছিল মিটিং করে থাকে।উদ্দেশ্য জোর করে তাদের রোজা রাখতে বাধ্য করবে।এ সমস্ত জঘন্য কুকির্তি মুসলমান সমাজে ছিল,আছে অন্য ধর্মে নেই।এরা চিনির বস্তা বহন কারি,
,গাধার মত,জানেনা তার পিঠে কি আছে মানে রোজার হাকিকত এরা বুঝেনি,বুঝতে চাইনি,বুঝতে দেয়না।
এরা ধর্মের ছদ্মাবরনে এক এক ডিগবাজিতে বিভিন্ন
ডিজাইনে যুগে যুগে অবস্থান করে,।বিধায় সাধারন মানুষ তাদের কে চিনতে পারেনা।মুয়াবিয়া ইয়াজিদ ও
তাদের পোষা মৌলবিগন রোজা বলতে শুধু জৈবিক
দেহের পানাহারাদি হতে বিরত থাকাকেই এবং পার্থিব
সন্ধ্যা আহারকেই ইফতার বলে থাকে।এবং তাদের অনুসারিরা বর্তমানে তাই বুঝে এবং বুঝিয়ে থাকে।
এরা নবি বংশের মাথার উপর খড়গ বা তলোয়ার ধরে।হত্যা করে তাদের কথিত মতবাদগুলি ইসলামরে নামে চালিয়েছে যা অদ্যবদি অধিকাংশ মুসলমান কাঁধে নিয়ে বেড়াচ্ছে।

হাকিকতের ইফতার হল ফাতের শব্দ হতে ইফতার
শব্দের উৎপত্তি।ফাতের অর্থ ভেংগে ফেলা,ছিড়িয়ে ফেলা,বিদির্ন করা।এটি বস্তুমোহের বেড়া ভাংগা ব্যতীত আর কিছুই নয়।যিনি সিয়ামে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মন কে মুক্ত করেছেন,মনকে পরিশুদ্ধ করেছেন, বস্তু মোহের বেড়াজাল ভেংগে দিতে স্বক্ষম হয়েছেন তার ইফতার হয়ে গেছে।খুব তাড়াতাড়ি ইফতার করার অর্থ হল খুব তাড়াতাড়ি বস্তু মোহকে
অর্থাৎ নফসে আম্মারা বা কাম,ক্রোধ,লোভ,মোহ,মদ,মাৎসর্য্য এই ষড় প্রবৃত্তিকে ভেংগে ফেলা, দুরকরা।

রমজান শব্দটি রমজুন শব্দ হতে উৎপত্তি।
রমজান মানে জ্বলে যাওয়া,বা পুড়ে যাওয়া,।কারন
,যেহেতু রমজানে সমস্ত গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়
তথা জীবাত্নার গুন খাছিয়ত পরিহার করে ইনসানিয়াত
প্রতিষ্ঠিত হয় তাই একে রমজান বলা হয়।এ মাস পার্থিব কোন মাস নয়।পার্থিব মাস রুপক বা আসলের উপমা স্বরুপ আছে।রুপকের পর্দা ভেদ করলে আসলের হাকিকত পাওয়া যাবে।কাজেই রমজান মাসে কুরআন নাজিল হয় -এ মাস চিরন্তন শ্বাশ্বত কালের মাস,যা অখন্ড কালে বিরাজিত।পার্থিব বা জাগতিক মাস কখন ও পবিত্র অপবিত্র হতে পারেনা,

যদি না মানুষের কোন স্মৃতির সংগে বিজড়িত থাকে।যেহেতু কুরআনের ভাষা রুপক,সেহেতু রুপকের আবরন উন্মোচন করলে হাকিকত পাওয়া যাবে।

তাই
পবিত্র কোন বস্তকে নির্দেশ করার জন্য জাগতিক
মাসগুলি কে রুপকে এনে পবিত্র বলা হয়েছে।আমরা
সকল মানুষ রোজার হাকিকত জেনে রোজা পালন
করে, রমজানে লামউতে পৌঁছার সাধনা করে জীবন
কে কুরআনের আলো কে প্রস্ফুটিত করার জন্য দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ হই।আমীন।

সুলতান মুরাদ এর কাহিনী

পতিতা, শরাব আর সুলতান মুরাদ
-কাহিনিটি ইস্তাম্বুলের ইউলিয়া নলিঞ্চি মিমি হতে সংগৃহীত 

অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান, সুলতান মুরাদ প্রায়শয়ই ছদ্মবেশে তার রাজ্যের লোকেদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে বের হতেন। এক সন্ধ্যায়, তিনি নিজে বিশেষ ভালো বোধ করছিলেন না বিধায় নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধানকে তলব করলেন তাঁর অভিযানের সঙ্গী হতে। ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা এক জনবহুল জায়গায় এসে দেখলেন, এক লোক রাস্তায় পড়ে আছে।

সুলতান লোকটির গায়ে লাঠি দিয়ে খোঁচা মেরে বুঝতে পারলেন লোকটি মৃত, অথচ চারপাশে মানুষে গিজগিজ করলেও কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না বিষয়টি নিয়ে।
সুলতান আশেপাশের লোকজনদের ডাকলেন। তারা এগিয়ে এলো, কিন্তু ছদ্মবেশে থাকায় কেউই চিনতে পারলো না নিজেদের শাসককে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, "লোকটা মরে পড়ে আছে, তবুও কেউ এগিয়ে আসছে না কেন? লোকটির পরিবারের কেউ নেই?"
"আরে এতো একটা ব্যাভিচারী, মদ্যপ কুলাঙ্গার!" লোকগুলো বলে উঠলো।

"যাই হোক, সে তো আমাদের নবী (সাঃ)-এর উম্মাহরই একজন, নাকি? এখন আমাকে তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে সাহায্য করুন," সুলতান বললেন। তারা সুলতানের সাথে মৃত লোকটিকে তার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসলো, এরপর চলে গেলো। সুলতান আর তার সহযোগী সেই প্রধান থেকে গেলেন।

লোকটির স্ত্রী মৃতদেহটিকে দেখা মাত্র কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি বলতে লাগলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার প্রতি সদয় থাকবেন! ও আল্লাহর বান্দা, আমি তো দেখেছি আপনি সবসময় কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন!"   
সুলতান মহিলাটির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "সবার থেকে যা কিছু শুনলাম, এরপরও সে নিষ্ঠাবান কীভাবে হয়? যেখানে দুশ্চরিত্রের জন্য সে এতোটাই ঘৃণিত যে তার মৃত্যু নিয়েও কারো মাথাব্যথা ছিল না?"

লোকটির স্ত্রী জবাব দিলেন, "আমি জানতাম এমনই হবে। তিনি প্রতি রাতে সরাইখানায় যেতেন ও পয়সায় যতোটকু সম্ভব হতো, ওতোটুকু শরাব কিনে ঘরে নিয়ে আসতেন। এনেই সেগুলো নর্দমায় ফেলে দিতেন। তিনি বলতেন, "আমি আজ মুসলিমদের অল্পখানি বাঁচিয়ে দিলাম।" তারপর তিনি কোনো পতিতাকে কিছু টাকা দিয়ে ঘরে নিয়ে আসতেন এবং ভোর পর্যন্ত তাকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। তিনি বলতেন, "আজ আমি এক তরুণীকে ও আমাদেরই ইমানদার কোনো যুবককে পাপকাজে জড়িয়ে পড়া থেকে বাঁচালাম।" 
লোকেরা তাঁকে শরাব কিনতে ও পতিতালয়ে যেতে দেখতো, এবং এই কারণেই তারা তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের কথা বলতে শুরু করে। আমি একদিন তাঁকে বললাম, "আপনি মারা গেলে না কেউ গোসল করানোর থাকবে, না কেউ জানাজা পড়তে আসবে, কবর দেওয়ার জন্যও তো কেউ থাকবে না।"
তিনি হেসে বলেছিলেন, "ভয় পেয়ো না, ইমানদারদের সুলতান আর সকল ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই আমার জানাজায় উপস্থিত থাকবেন।" 

সুলতান এই কথা শুনে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি বললেন, "আল্লাহর কসম! তিনি ঠিকই বলেছিলেন। কারণ আমিই সুলতান মুরাদ। আগামীকাল আমরা তাঁকে গোসল করিয়ে, জানাজা পড়ে তাঁকে কবর দিয়ে আসবো।" এবং এমনই হলো যে, স্বয়ং সুলতান মুরাদ, রাজ্যের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, সকল ধর্মপ্রাণ ও এলাকার জনসাধারণ সবাইই তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করলো।

আমরা যা দেখি আর লোকমুখে যা শুনি, তা থেকেই মানুষকে বিচার করার চেষ্টা করি। অথচ আমরা জানিও না তাদের মনের অন্তস্থলে কী চলে, যার কথা কেবলমাত্র বান্দা আর তার রবই জানেন।

"হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃতভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু।"    (কুরআন ৪৯ঃ১২)

শফি বাবার কালাম

****হুয়ার রহমান****
*গাউছে জামান মাইজভাণ্ডারী সৈয়দ শফিউল বশর আল্ হাচানী আল্ মাইজভাণ্ডারী বাবাজানের পবিত্র কালাম শরিফ*

বন্দেগী জানিনা বলে বন্দা কি গো বলবে না!!
ডাকিতে জানিনা বলে সারা কি গো দেবেনা !!
জানিনা বলে বাবাধন তোমার প্রেমের সাধন ভজন,
নই বলে তর মনের মতন কোলে কি নেবে না !!!
অকাজ অবোধ বলে ফেলবে কি গো পায়ে ঠেলে,
সন্তান নিস্কর্মা হলে বাবায় কি গো দেখেনা ৷৷
তোমার প্রেমের রীতি-নীতি জানিনা বলে মিনতি,
তুমি দূরে থেকে থেকে ধরা কি গো দেবেনা ৷৷
"শফি" তোমার অন্ধ ছেলে কিছুই জানিনা বলে,
বাবা যদি নিদয় হবে আপন তো আর দেখিনা!!

বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০২০

দরুদ শরিফ ও ফজিলত

২০ টি দুরুদ শরীফ ও ফজিলত

(১)
কাদেরীয়া তরীকার শ্রেষ্ঠ দুরূদ শরীফ
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَليٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আ-লি সয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মাদিন ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।
ফযিলত
এই দুরূদ শরীফ সকাল ও সন্ধ্যা একশত বার পাঠ করলে বালা মুছিবত দূর হয়।
 
(২)
জিয়ারতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ رُوْحِ مُحَمَّدٍ فِي اَلْاَرْوَاحِ وَعَليٰ جَسَدِهِ فِي اَلْاَجْسَادِ وَعَليٰ قَبَرِهِ فِي الْقُبُوْرِ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা রুহি মুহাম্মাদিন্ ফিল আর ওয়াহি ওয়ালা জাসাদিহি ফিল আজসা-দি ওয়ালা ক্ববরিহি ফিল ক্বুবুর। 
 
(৩)
যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য পড়ুন
قَلَّتْ حِيْلَتِيْ اَنْتَ وَسِيْلَتِيْ اَدْرِكْنِي يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
উচ্চারণ
ক্বল্লাত হিলাতী আন্তা ওয়াসিলাতি আদ্ রিকনি ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ফযিলত
যেকোন সমস্যার সমাধানের জন্য পড়ন ইনশাআল্লাহ বৃথা যাবে না।
 
(৪)
হিসাব নিকাশ ও আযাব থেকে মুক্তি লাভের দরুদ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ كُلَّمَا ذَكَرَهُ الذّٰكِرُونَ وَصَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ كُلَّمَا غَفَلَ عَنْ ذِكْرِهِ الْغَافِلُوْنَ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিন কুল্লামা যাকারা হুজ্জাকিরুনা ওয়া আ’লা মুহাম্মদিন কুল্লামা গাফালা আন্ যিকরিহিল গাফিলু-ন।
ফযিলত
ইমাম শাফেয়ী (র:) এই দুরূদ শরীফ পড়তেন। এই দুরূদ শরীফের উছিলায় হিসাব-নিকাশ থেকে মুক্তি পাবেন। প্রতিদিন ১১১ বার পাঠ করলে ঈমানের হিফাজত এবং ঈমানের সাথে ইন্তেকাল হবে।
 
(৫)
ধন সম্পদ বৃদ্ধির দরুদ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ وَعَليٰ المْؤُمِنِيْنَ وَالمْؤُمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন্ আবদিক ওয়ারাসূলিকা ওয়াআলাল মুমিনীনা ওয়া মুমিনাতি ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাতি।
ফযিলত
ছাহেবে রুহুল বয়ান এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এই দুরূদ শরীফ নিয়মিত পাঠ করবে তার ধন-সম্পদ দিন রাত বৃদ্ধি হতে থাকবে।
 
(৬)
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দরুদ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍنِ النَّبِّيِ الْكَامِلِ وَعَليٰ اٰلِهِ كَاَب لَانِهَايَةَ لِكَمَالِكَ وَعَدَدَ كَاَعلِهٖ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিনিন্ নাবিয়্যিল কামিলি ওয়া আ’লা আলিহি কামা-লা-নিহায়াতা লিকামালিকা ওয়া আদাদা কামালিহি।
ফযিলত
মাগরিব এশার মধ্যবর্তী সময়ে এই দুরূদ শরীফ পাঠ করলে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
 
(৭)
ঈমানের সহিত মৃত্যু
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ مُّنْطَلِقِ عِنَانِ جَوَادِ الاِيْمَانِ فِي مَيْدِانِ الاِحْسَانِ مُرْسِلاً مُرْشِدًا اِليٰ رِيَاحِ الْكَرَمِهِ فِي رَوْضِ الجْنَانِ وَعَليٰ اٰلِ مُحَمَّدٍ وَّسَلِّمْ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সয়্যিদিনা মুহাম্মদিম মুনতালিকি ইনানি জাওয়াদিল ঈমানি ফি মিদানিল ইহসানি মুরসিলাম্ মুরশিদান ইলা রিয়াহিল কারামিহি ফি রাওদিল জানানি ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিও ওয়া সাল্লিম।
ফযিলত
উক্ত দুরূদ শরীফের উছিলায় ঈমানে সহিত মৃত্যু নসিব হবে।
 
(৮)
দরুদে গাউসিয়া
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَّعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَاٰلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সয়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিম মাআ’দিনিল যুদি ওয়াল কারামি ওয়া আলিহি ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।
ফযিলত
এ দুরূদ শরীফ পাঠ করলে- ১.জীবিকায় বরকত হবে ২.সমস্ত কাজ সহজ হবে ৩.মৃত্যুকালে কলেমা নসীব হবে ৪.প্রাণবয়ু সহজে বের হবে ৫.কবর প্রশস্ত হবে ৬.কারো মুখাপেক্ষী থাককেনা ৭.আল্লাহর সৃষ্টি তাকে ভালোবাসবে।
 
(৯)
দরুদে রযভিয়্যাহ
صَلَّي اللهُ عَليٰ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ وَاٰلِهٖ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلِّمْ صَلوٰةً وَّسَلاماً عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ الله
উচ্চারণ
ছাল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলিহি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছালাতাও ওয়া সালামান আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ।
ফযিলত
এ দুরূদ শরীফ প্রত্যেক নামায ও জুমার নামাযের পর খাস করে মদীনা মনোয়ারার দিকে মুখ করে ১০০ বার পাঠ করলে অগণিত ফযিলত অর্জন হয়।
 
(১০)
বদ অভ্যস পরিত্যাগ করার দরুদ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ اَفْضَلِ اَنْۭبِيَائِكَ وَاَكْرَمِ اَصْفِيَائِكَ مَنْ فَاضَتْ مِنْ نُّوْرِهِ جَمِيْعِ الْاَنْوَارِ وَصَاحِبِ الْمُعْجِزَاتِ وَصَاحِبِ الْمَقَامِ الْمَحْمُوْدِ سَيِّدِ اْلاَوَّلِيْنَ وَاْلاَخِرِيْنَ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন আফ্দালি আম্বিয়ায়িকা ওয়া আকরামি আছফিয়াইকা মান ফাদাত মিন্ নূরীহি জামিয়্যিল আনওয়ারী ওয়া ছাহিবিল মুজিযাতি ওয়া ছাহিবিল মাক্বামিল মাহমুদি সৈয়্যেদিল আওয়ালিনা ওয়াল আখিরিনা।
ফযিলত
এই দুরূদ শরীফ অধিক পরিমানে পাঠ করলে যে কোন অপকর্ম করা হতে বিরত থেকে ইবাদত বন্দেগীতে স্বাধ পাবেন।
 
(১১)
উভয় জাহানের নেয়ামত অর্জন
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَّسَلِّمْ وَبَارِكْ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍوَّعَليٰ اٰلِهٖ عَدَدَ اِنْعَامِ اللهِ وَاَفْضَالِهٖ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলিহি আদাদা ইনআ’মিল্লাহি ওয়া আফদ্বালিহি।
ফযিলত
এই দুরূদ শরীফ পড়লে অগণিত নেয়ামত অর্জিত হয়। 
 
(১২)
দরুদে শিফা
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلۤانَا مُحَمَّدٍ طِبِّ الْقُلُوْبِ وَدَوَائِهَا وَعَافِيَةِ الأَبْدَانِ وَشِفَائِهَا وَنُوْرِ الاَبْصَارِ وَضِيَائِهَا وَعَليٰ اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ وَسَلِّمْ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সয়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন তিব্বিল কুলুবি ওয়া দাওয়া-ই হা ওয়া আফিয়াতিল আবদানি ওয়া শিফায়িহা ওয়া নুরীল আবছারি ওয়া দ্বিয়ায়িহা ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া ছাহ্বিহি ওয়া সাল্লিম।
ফযিলত
এ দুরূদ শরীফ যেকোন জটিল ও কঠিন রোগ মুক্তির জন্য পড়া প্রয়োজন। প্রত্যহ সকাল সন্ধ্যা ৩বার করে পড়লে মৃত্যু পর্যন্ত নিরোগ থাকা যায়।
 
(১৩)
দরুদে শাফায়াত
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدِوَّ اَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিও আন্যিলহুল মাক্বয়াদাল মুর্কারাবা ইনদাকা ইয়াউমাল কিয়ামাতি।
ফযিলত
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান যে ব্যক্তি এ দুরূদ শরীফ পড়বে তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।
 
(১৪)
প্রিয় নবীর নৈকট্য লাভের উপায়
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ كَاَ تُحِبُّ وَتَرْضٰى لَه
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিন কামা তুহিব্বু ওয়া ত্বারদ্বা লাহু।
ফযিলত
একদিন এক ব্যক্তি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি তাকে সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিআল্লাহু আনহু এবং নিজের মাঝখানে বসালেন তখন উপস্থিত সাহাবায়ে ক্বেরামগণ প্রশ্ন করলেন কেন উনাকে এত নিকটে বসালেন তিনি বললেন যে সে এই দুরূদ শরীফ নিয়মিত পড়ে।
 
(১৫)
দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপদ থাকার উপায়
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّ اٰلِهٖ وَصَحْبِهِ وَسَلِّمْ بِعَدَدِ مَا فِي جَمِيْعِ الْقُرْاٰنِ حَرْفًا حَرْفًا وَّبِعَدَدِ كُلِّ حَرْفٍ اَلْفاً اَلْفاً
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আলিহি ওয়া ছাহবিহি ওয়া ছাল্লিম বি আদাদি মাফি জামিয়িল কুরআনই হারফান্ হারফাও ওয়া বি আদাদি কুল্লি হারফিন আল্ফান আল্ফান।
ফযিলত
যিনি কোরআন তেলাওয়াতের পর এই দুরূদ শরীফ পাঠ করবেন তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপদ থাকবেন।
 
(১৬)
এক লক্ষ দুরূদ শরীফের ছাওয়াব
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدِنِ النُّوْرِ الذَّاتِي السَّارِئ فِي جَمِيْعِ الْاۤثَارِ وَاْلاَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ وَعَلىٰ اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ وَسَلِّمْ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদি নিন্ নূরিয্ যাতিস্ সারি ফি জামিইল আছারি ওয়াস ছিফাতি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া ছাহ্বিহি ওয়া সাল্লিম।
ফযিলত
এ দুরূদ শরীফ ১বার পাঠ করলে এক লক্ষ দুরূদ শরীফের ছাওয়াব পাবে। ৫০০ বার পড়লে যে কোন নেক হাজাত পূর্ণ হবে। ইনশা আল্লাহ।
 
(১৭)
ছয় লক্ষ দুরূদ শরীফ পড়ার ছাওয়াব
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلانَا مُحَمَّدٍ عَدَدَ مَا فِي عِلْمِ اللهِ صَلَوٰةً دائمةً ۭبِدَوَامِ مُلْكِ اللهِ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন আদাদা মা ফি ইলমিল্লাহি ছালাতান্ দায়িমাতাম বিদাওয়ামি মুলকিল্লাহ।
ফযিলত
শায়খুদ দালাইল সৈয়দ আলী বিন ইউসুফ মাদানী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি আল্লামা জালালুদ্দিন সু’য়ূতি থেকে বর্ণনা করেন এ দুরূদ শরীফ ১বার পড়লে ছয় লক্ষ দুরূদ শরীফের ছাওয়াব মিলবে। যিনি ১০০০ বার পড়বে দুনিয়া ও আখিরাতে নেক্ বখ্ত হবে।
 
(১৮)
এগার হাজার দুরূদ শরীফ পড়ার ছাওয়াব
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّ عَلىٰ اٰلِهٖ صَلَوٰةً اَنْتَ لَهَا اَهْلٌ وَّهُوَ لَهَا اَهْلٌ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলিহি ছালাতান আনতা লাহা আহলুও ওয়া হুয়া লাহা আহলুন।
ফযিলত
হাফিজ আল্লামা সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত এই দুরূদ শরীফ ১বার পড়লে এগার হাজার বার পড়ার ছাওয়াব মিলবে।
 
(১৯)
চৌদ্দ হাজার দুরূদ শরীফ পড়ার ছাওয়াব
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَّسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلىٰ اٰلِهٖ عَدَدَ كَاَ لِ اللهِ وَكَاَا يَلِيْقُ بِكَمَالِهٖ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলিহি আদাদা কামালিল্লাহি ওয়া কামা ইয়ালিকু বি কামালিহি।
ফযিলত
এই দুরূদ শরীফ শুধু ১বার পড়লে ১৪ হাজার দরূদে পাকের ছাওয়াব মিলবে।
 
(২০)
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلىٰ النَّبِيِّ الطَّاهِرِ
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়া সাল্লিম আলান নবিয়্যিত ত্বাহিরি।
ফযিলত
এক নিশ্বাসে ১১বার এই দুরূদ শরীফ পাঠ করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০

প্রয়োজনীয় কিছু দোওয়া



মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

একটি ভান্ডারী শান -*কেন দরকারি ভান্ডারী *

------------কেন দরকারী ভান্ডারী------------

(লেখক --সৈয়দ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সাজু শাহ্)
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇
কোরানেতে আছে লেখা সাফ আর জ্ঞানীর ভাসায়-
এইখানে না দেখিলে খোদাকে অন্ধ রহিবে সেথায়
তাই ভাবিয়া অস্থির, ভবের মায়ায় রয়েছি ঢুবে 
কিসের আশায় দেখিতে তাহারে আমি করি কি উপায়?

ঘুরিয়া দেখিলাম সব অনুষ্ঠানমালা বেহেশতের আশায়, গুপ্ত রাখিয়া কয় তারে দেখা নাহি যায়, 
দেখা যদি নাহি যায় কালামে পাকে কি কয় তবে দেখিতে তাহায়? আসলে জানেনা তারা দেখার উপায়।

ফুলতো সবাই দেখি গন্ধ আসে নাসিকায় 
দেখতে ক'জন পাই? 
দেখা যায়, দেখার দিব্য চক্ষু তো নাই!
ওদের কি সাধ্য আছে এ বিদ্যা শিখায়?

চক্ষু বন্ধ করিয়া ভাবিয়া দেখি প্রায়
দিক দিগন্তে রুপের খেলা কোন রুপে সাঁই 
নিজ তনে ভাসছে রুপ খুঁজি তারে সদাই,
যেই জ্ঞানে অধরায় ধরা সেই জ্ঞানতো নাই।

ত্রি নয়নে বদ্ধ তালা আন্দাজে হাতরাই। 
রসিক সাঁই দয়াময় নিরাকারে থাকিয়া আকারে নিলো ঠাঁই, ক্ষুদ্র জ্ঞানে কহে দিব্য জ্ঞান বীণা তাহায় দর্শন পাথেয় নাই।।

ভেদ করিতে পর্দা হাজার দিব্য জ্ঞানীর দরকার তাইতো ভোলা মনটা গেলো ভান্ডারীয়ায়, 
মেলেনা সেই রুপ যথায় তথায়,যদি মিলে -
তাহার কৃপায়,
মুর্শিদ রুপ করলে হেলা সেই রুপ মিলিবে কোথায়?

ধ্যান সালাতে রুপের নীশান সঙ্গ করতে তাই
মুর্শিদ বরযখ বীণে উপায় তো আর নাই,
দয়াল ভান্ডারী মাওলা আমার সেই রুপ বিলায়
তাইতো সাজু শাহ্ নীশান করেছে ভন্ডারী মাওলায়।।

নফস সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা

নফস তথা আমি পবিত্র । তখনই নফস অপবিত্র হয় , যখন খান্নাসরূপী শয়তানটি আমার মধ্যে অবস্থান করে । আমি + খান্নাসরূপী শয়তান = আমিত্ব / অহম / হাস্তি / খুদি / ইগাে সেন্ট্রিসিটি । এই আমিত্বকেই পরিত্যাগ করার আদেশটির নাম কোরান শরীফ । কোরানে আদেশ উপদেশের বিচিত্র ভঙ্গি ও শৈলী পাওয়া যায় । বিচিত্র আদেশ - উপদেশে , বিচিত্র কথা ও রূপকথার মাধ্যমে এই আমিত্বটিকে তাড়িয়ে দিয়ে একা হতে বলছে পবিত্র কোরান । চরম সত্যে এই একটি মাত্র আদেশ - উপদেশ ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন আদেশ - উপদেশ নাই । ঘাট অনেক , নদী একটাই । স্বর্ণের অলংকার বহু , কিন্তু গলিয়ে ফেললে একই সােনা । দেশ ও জলবায়ুর প্রশ্নে গরুর আকার অনেক রকম , কিন্তু দুধ একই । বৈদিক যুগের মুনি - ঋষি হতে আজকের এই আধুনিক যুগের সুফিদের একই কথা , একই উপদেশ । কিন্তু উপদেশের ভাষা ও বাক্যের স্টাইল অনেক রকম । তাই এক কামেল পীরের যদি উপযুক্ত হতে পার , তাহলে সকল পীরের রহমতের দরজা তােমার জন্য খােলা থাকবে । যদি এক কামেল পীরের দৃষ্টিতে অনুপযুক্ত হও , তাহলে দেখতে পাবে , সকল কামেল পীরের রহমতের দরজা বন্ধ । কামেল পীরেরা অনেক ধ্যান - সাধনা করার পর আল্লাহ্ পাকের বিশেষ রহমত অর্জন করতে পেরেছেন । সেই রহমতটি আর কিছুই নয় ; কেবলমাত্র খান্নাসরূপী শয়তানটিকে তাড়িয়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে রূহ তথা আল্লাহ্ স্বয়ং রবরূপে আত্মপ্রকাশ করেন । তখন নফসটি হয়ে যায় রূহ - এর বাহন মাত্র । নফ্স মােমায়েন্না হবার পর আরও যদি উধ্বস্তরে গমন করতে পারে , এবং পরিশেষে চরম পর্যায়েও অবস্থান নেয় , তবু নফস সৃষ্ট ; তথা প্রতিটি মানুষ যদি উর্ধ্ব জগতে বিচরণও করে , তবু সে সৃষ্ট । কারণ নফস সৃষ্ট , কিন্তু রূহ সৃষ্ট নয় । রব আল্লাহর আদেশ তথা আল্লাহ্ স্বয়ং । চন্দ্রগ্রহণ - সূর্যগ্রহণের মত যখন মানবীয় নফসটিকে রূহ তথা আল্লাহ্ সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলে , তখন নিজেকে আর দেখতে পান না । তখনই সাধক বলে ফেলেন , “ আনাল হক ' তথা আমিই সত্য । তখনই শ্রীশ্রী চৈতন্যদেব বলে ফেলেন , ‘ তুই মুই , মুই তুই ' তথা তুইই আমি , আমিই তুই । এই দর্শনটিকে পবিত্র কোরান এভাবে বলছে যে , আপনি পাথর ছুড়ে মারেন নি বরং আমিই ছুড়ে মেরেছি । ওটা আপনার হাত নয় , বরং ওটা আমার হাত । ' যদিও মানবীয় সত্তাটি সৃষ্ট এবং আল্লাহ্ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ সেফাত তথা গুণ , সেফাত কখনাে জাত নয় , বরং জাত হতে সেফাতের আগমন । তাই বলা হয়ে থাকে , মানুষ আল্লাহ্ নয় : আবার আল্লাহ্ হতে আলাদাও নয় । ডালিম গাছ নয় : আবার গাছ হতে আলাদা নয় । পবিত্র বােখারি শরিফেও বলা হয়েছে যে , বান্দা নফল এবাদত করতে করতে আল্লাহ্র এত নিকটে এসে পড়ে যে , বান্দার জবান আল্লাহ্র জবান হয়ে যায় ; বান্দার চোখ আল্লাহ্ চোখ হয়ে যায় এবং সেই চোখে দেখে ; বান্দার কান আল্লাহ্র কান হয়ে যায় এবং সেই কানে শ্রবণ করে ; বান্দার হাত আল্লাহর হাত হয়ে যায় এবং সেই হাতে কর্ম করে ; বান্দার পা আল্লাহর পা হয়ে যায় এবং সেই পা দিয়ে হাটে । যদিও চরম সত্যে বান্দা সেফাত , জাত নয় , তবু সেফাতের মধ্যে জাত আপনরূপে উদ্ভাসিত হতে পারে ;কিন্তু জাতের মধ্যে সেফাতের অবস্থানটি হয় না । ইহা একটি সূক্ষ্ম বিষয় । ইহা একটি চিকন চিন্তা । ইহা একটি রহস্যলােকের কথা , যা সবার পক্ষে বুঝে উঠা সম্ভবপর নয় । মহানবী রহমাতুল্লিল আল আমিন তথা সমস্ত আলমের রহমত , তাই মহানবী সবারই শিক্ষা ও দীক্ষার মহাগুরু । যারা এই ঊর্ধ্বলােকের বিষয়টি অবগত নয় তথা বুঝতে পারে না তাদেরকেই মহানবী সৈনিক - ধর্ম পালনের প্রেসক্রিপশন তথা ব্যবস্থাপত্রটি রহমতরূপে দিয়ে গেছেন । পাঠশালার শিক্ষা , স্কুলের শিক্ষা , কলেজের শিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা - সবই শিক্ষা , তবে প্রকারভেদ অবশ্যই আছে । কোন শিক্ষাকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নাই । প্রতিটি সেফাত তথা গুণ জাত হতে আগমন করেছে । এমনকি একটি ধুলিকণাও আল্লাহ্র সেফাতের সেফাত হয়ে অবস্থান করছে । আল্লাহ ছাড়া কোনাে অস্তিত্বই নাই । অস্তিত্ব না থাকাটাই একটি বিরাট শূন্য । শূন্য যােগ শূন্য সমান সমান শূন্য । আধুনিক বিজ্ঞান অস্তিত্ববিহীন কিছুরই অবস্থান থাকতে পারে না বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছে । তাই বলা হয়েছে , ‘ ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু । ' তথা তিনিই একমাত্র এবং তার কোন শরিক নাই । সামান্য একটি ধুলিকণাও যদি বলে ফেলে যে , আমি যতই ক্ষুদ্র হই না কেন , আল্লাহর অস্তিত্বের সম্পূর্ণ বাহিরে অবস্থান করছি , তাহলে ধুলিকণা যতই ক্ষুদ্র হউক না কেন আল্লাহর সাথে শেরেক করছে।তাই আল্লাহ্ লা শারিকা লাহু। সুতরাং আল্লাহ্ পাক যেমন ওয়াহেদ তেমনি আবার আহাদও, তথা স্বয়ম্ভু। 

সূত্রঃ-মারেফতের বাণী

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

একটি শানে রাসুল সাঃ--- নবী নামের সুধা

----------নবী নামের সুধা ----------

আসিয়াছিলো কে মানব রুপে ধরার বুকে,
মোহাম্মদ মোস্তফা সাঃ নাম সবার মুখে,
নামের সুধা মিটায় ক্ষুধা তৃষ্ণার্ত আশেকের বুকে।

নূর হতে নূর নবী মানব রুপে যাহার ছবি , 
তাহার নূরের খন্ডিত ভাগে সারা জাহান সবি,
না জানিয়া ভেদের কথা উম্মত বলিয়া করিতেছি দাবী।

তাহার ইশকের পেয়ালা যে করিতে পারিয়াছে পান,
অন্তরে তাহার নূরের আলো দয়াময় করিয়াছে দান,
সর্বোচ্চ প্রেমেই তাহার প্রতি মুমিনের ইমান।

আসেনি কেহ আসিবেনা কেহ তাহার মতো আবার,
ধন্য ভুবন, আশেক, আরশ কদম ধূলিতে তাহার,
ত্যাগীয়াছে সুখ আশেকগন পাইতে তাহার দীদার।

তোমার তরেই জীবন মরণ হাজির থাকিবে সহসা
অধম বলিয়া বুঝিতে পারিনি লিখিবো কি প্রসংশা,
সাজু শাহর আকল হলোনা পায়না খুঁজিয়া ভাষা,

(লেখক ---সৈয়দ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সাজু শাহ্)